দেশে চলমান অর্থনৈতিক চাপের কারণে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার বাড়াচ্ছে না সরকার। আসন্ন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের এডিপিতে মোট বরাদ্দ থাকছে দুই লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা, যা গত অর্থবছরের তুলনায় মাত্র দুই হাজার কোটি টাকা বেশি। নতুন এডিপিতে এক হাজার ৩২১ প্রকল্প অন্তর্ভুক্তি করা হয়েছে। এদিকে চলতি বছরের জুন মেয়াদে সমাপ্ত হবে ৩৫৬টি প্রকল্প। গতকাল বৃহস্পতিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি) সভায় এই উন্নয়ন বাজেট অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় এ সভা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ থেকে পাওয়া এক হাজার ৮৯৪টি অননুমোদিত প্রকল্প যাচাই-বাছাই করা হয়। এরমধ্যে থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে এক হাজার ৩২১টি প্রকল্প অন্তর্ভুক্তির সুপারিশ করা হয়।
এসব প্রকল্প পরবর্তী সময়ে অনুমোদিত হলে এডিপি থেকে অর্থায়ন করা হবে। সে লক্ষ্যে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত এডিপিতে বিভিন্ন খাতের আওতায় ‘থোক বরাদ্দ’ বাবদ ১৬ হাজার ৮৭২ কোটি ১৪ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত এডিপিতে স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বা করপোরেশনের সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্প ৭৯টি এবং জিওবি ও প্রকল্প সাহায্যের পাশাপাশি সংস্থার নিজস্ব অর্থায়নে রয়েছে এমন ১০২টি প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
এসব প্রকল্পের অনুকূলে মোট ১৩ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশন জানায়, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা করে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন অর্জনের জন্য বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান-২১০০, বাংলাদেশের উন্নয়ন রূপকল্প-২০৪১, প্রেক্ষিত পরিকল্পনা (২০২১-২০৪১), অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা (জুলাই ২০২০-জুন ২০২৫), জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহ (এসডিজি) ও বিদ্যমান বিভিন্ন নীতিমালার আলোকে অগ্রাধিকার খাতসমূহে পর্যাপ্ত সম্পদ বরাদ্দ দেওয়া হবে।
কমিশন আরও জানায়, অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় রেখে খাদ্যনিরাপত্তার লক্ষ্যে কৃষি, কৃষিভিত্তিক শিল্প, বিদ্যুৎ খাত, শ্রমশক্তির দক্ষতা বৃদ্ধি, দারিদ্র্য হ্রাসকরণ এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন- ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, অতিবৃষ্টি ইত্যাদির ক্ষয়ক্ষতি পুনর্বাসন সংক্রান্ত প্রকল্পে বরাদ্দ প্রদানে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
এ লক্ষ্যে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের এডিপি প্রণয়নের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। এডিপি প্রণয়নকালে অন্য বিষয়গুলোর মধ্যে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, যোগাযোগ অবকাঠামোর উন্নয়ন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ বৃদ্ধি, মানবসম্পদ উন্নয়ন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা বজায় রাখা, কৃষি উন্নয়ন ও কৃষি যান্ত্রিকীকরণ, সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা ও স্বাস্থ্য শিক্ষা নিশ্চিতকরণ, স্থানীয় সরকার শক্তিশালীকরণ, নারীর ক্ষমতায়ন, অপরাধ দমন, সুশাসন প্রতিষ্ঠা, গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন, স্যানিটেশন ও নিরাপদ পানি সরবরাহ, মানসম্পন্ন শিক্ষাব্যবস্থা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক কর্মসূচির প্রসার- এসব ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি প্রণয়ন করা হয়েছে।