বাংলাদেশে বেসরকারি খাতের পাশাপাশি সরকারি সংস্থাগুলোতে ইএসজি (এনভায়রনমেন্টাল, সোশ্যাল এবং গভর্নেন্স) রিপোর্টিংয়ের ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা ক্রমাগত বাড়ছে, যা ইতিবাচক বিষয়। স্মার্ট অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগে সম্প্রসারণে ইএসজি কমপ্লায়েন্স রিপোর্টিংয়ের স্ট্যান্ডার্ড থাকা জরুরি। তাই স্মার্ট অর্থনীতি-রপ্তানি বাড়াতে ইএসজির ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। গতকাল শনিবার ঢাকা চেম্বার অডিটোরিয়ামে আয়োজিত ‘বাংলাদেশে ইএসজি কমপ্লায়েন্সের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এ কথা বলেন বক্তারা। এ আলোচনা সভার আয়োজন করে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)। সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মুনিম হাসান, বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন বোর্ডের (বিএবি) মহাপরিচালক আনোয়ারুল আলম উপস্থিত ছিলেন। আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্যে ডিসিসিআইর সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, বাংলাদেশে বেসরকারি খাতের পাশাপাশি সরকারি সংস্থাগুলোতে ইএসজি রিপোর্টিংয়ের ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা ক্রমাগত বাড়ছে, যা ইতিবাচক বিষয়। তাই ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগে সম্প্রসারণে ইএসজি কমপ্লায়েন্স রিপোর্টিং স্ট্যান্ডার্ড থাকা জরুরি। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ‘এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড সোশ্যাল রিস্ক ম্যানেজমেন্ট (ইএসআরএম)’ বিষয়ক গাইডলাইন প্রকাশ করেছে এবং বাংলাদেশ সিকিরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন লিস্টেড কোম্পানিগুলোর জন্য তাদের বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদনে ‘ইএসজি রিপোর্টিং’-এর অন্তর্ভুক্তিবাধ্যতামূলক করেছে। তিনি আরো বলেন, বৈশ্বিক নামি প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিদেশি বিনিয়োগের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের ক্ষেত্রে ইএসজির বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে থাকে, তাই বিশেষ করে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে আমাদের এর ব্যবহার বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, ইএসজি বাস্তবায়নে একটি স্ট্যান্ডার্ড ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করতে হবে এবং শিল্পনীতি ও এসএমই নীতিমালায় ইএসজি কমপ্লায়েন্স বিষয়টি অন্তর্ভুক্তিরও প্রস্তাব করেন তিনি। পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মুনিম হাসান বলেন, প্রতিটি খাতেই কমপ্লায়েন্স অত্যন্ত জরুরি, বিশেষ করে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কমপ্লায়েন্স বিশ্বাসযোগ্যতা ও গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়ে থাকে। তিনি বলেন, ২০১৬-২০২২ সাল পর্যন্ত মোট ১৭টি পণ্যের জিআই দেওয়া হয়েছে। ২০২৩ হতে এ পর্যন্ত ১৪টি পণ্যের জিআই দেওয়া হয়েছে। এমনকি ৩০টি পণ্যের জিআই দেওয়ার প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। বিএবি মহাপরিচালক আনোয়ারুল আলম বলেন, বাংলাদেশে স্মার্ট অর্থনীতির রূপান্তর করতে হলে রপ্তানি বাড়াতে হবে। ইএসজি’র ওপর আরো গুরুত্ব দিতে হবে। আলোচনা সভায় মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতিসংঘ শিল্প উন্নয়ন সংস্থার (ইউনিডো) আবাসিক প্রতিনিধি জাকি উজ্জ জামান। তিনি বলেন, ৯০-দশকে বৈশ্বিকভাবে ইএসজির বিষয়টি চালু হয়েছে। যেটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে বাস্তবায়নের মাধ্যমে কোম্পানির ঝুঁকি হ্রাস ও মুনাফা অনেকাংশে বাড়ানো সম্ভব। তিনি বলেন, বাংলাদেশ যেহেতু এলডিসি উত্তরণের পথে রয়েছে। এমতাবস্থায়, ইএসজি বাস্তবায়নে পিছিয়ে থাকার কোনো সুযোগ নেই। তবে এরই মধ্যে কিছু বাংলাদেশি কোম্পানি ইএসইজ কমপ্লায়েন্স রিপোর্টিং বাস্তবায়ন করেছে। ইএসজি বাস্তবায়নে পরিবেশগত তথ্যাদি সংরক্ষণের ওপর তিনি জোরারোপ করেন। আলোচনায় এসজিএস বাংলাদেশ লিমিটেডের বিজনেস ম্যানেজার ইয়াসমিন আক্তার, শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব মো. সলিম উল্লাহ, ইকোটেক্স লিমিটেডের পরিচালক মোহাম্মদ বিন কাসেম এবং যুক্তরাজ্যের লিডিং বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং অধ্যাপক ড. এম নিয়াজ আসাদুল্লাহ প্রমুখ অংশ নেন।