চ্যালেঞ্জিং বাজার পরিস্থিতি সত্ত্বেও ২০২৩ সালে ব্র্যাক ব্যাংক সমন্বিত কর-পরবর্তী নিট মুনাফায় (এনপিএটি) ৩৫% প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। ২০২৩ সালে সকল অঙ্গপ্রতিষ্ঠানসহ ব্যাংকটির সমন্বিত আর্থিক হিসাবে কর-পরবর্তী নিট মুনাফা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়ে ৮২৮ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে, যা ২০২২ সালে ছিল ৬১৪ কোটি টাকা। আগের বছরের তুলনায় ২৭% বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৪ সালে ব্র্যাক ব্যাংকের একক (স্ট্যান্ডঅ্যালন) কর-পরবর্তী নিট মুনাফা দাঁড়িয়েছে ৭৩০ কোটি টাকায়। বাজার অস্থিরতা সত্ত্বেও আমানতে ৩৪% এবং ঋণে ২৬% প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে ব্র্যাক ব্যাংক ব্যালেন্স শিটে শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। ২০২৪ সালের প্রথম তিন মাসে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ব্র্যাক ব্যাংকের সমন্বিত কর-পরবর্তী মুনাফা ৯১% বৃদ্ধি পেয়ে ৩১৮ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। গত ১৩ মে ২০২৪ ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে ব্যাংকটির ২০২৩ আর্থিক বছর এবং ২০২৪ সালের প্রথম তিন মাসের আার্থিক ফলাফল ঘোষণা করা হয়।
২০২৩ সালে ব্যাংকের উল্লেখযোগ্য অর্জনসমূহ : সমন্বিত শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) ২০২২ সালের ৩ টাকা ৭৫ পয়সা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৩ সালে ৪ টাকা ৭৩ পয়সায় উন্নীত হয়েছে। ২০২৩ সালে ব্যাংকের সমন্বিত নিট সম্পদ মূল্য (এনএভি) শেয়ারপ্রতি ৪১ টাকা ৩৬ পয়সায় উন্নীত হয়েছে, যা ২০২২ সালে ছিল ৩৮ টাকা ০৩ পয়সা ছিল। ২০২৩ সালে ব্যাংকের লোন পোর্টফোলিও ২৬% বৃদ্ধি পেয়েছে, যখন দেশের ইন্ডাস্ট্রি অ্যাভারেজ ১০.৬০%। ২০২৩ সালে ব্যাংকের আমানত ৩৪% বৃদ্ধি পেয়েছে। উল্লেখ্য, এক্ষেত্রে দেশের ইন্ডাস্ট্রি অ্যাভারেজ ১১.১০%। সমন্বিত রিটার্ন অন ইক্যুইটি (আরওই) এবং রিটার্ন অন অ্যাসেট (আরওএ) যথাক্রমে ১১.৯২% এবং ১.০২% এ উন্নীত হয়েছে। ঋণ বিতরণ বৃদ্ধি, অধিক ইন্টারেস্ট আয়, দক্ষ তহবিল ব্যবস্থাপনা এবং অধিক নন-ফান্ডেড আয়ের ফলে আগের বছরের তুলনায় ২০২৩ সালে ব্যাংকের মোট সমন্বিত আয় ২৩% বৃদ্ধি পেয়েছে। কর্মীদের বেতন, অন্যান্য পরিচালন ব্যয়ের ওপর মুদ্রাস্ফীতির প্রভাব এবং প্রবৃদ্ধি কৌশলের অংশ হিসেবে মানবসম্পদ, প্রযুক্তি ও অবকাঠামোতে বিনিয়োগের ফলে ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে ব্যাংকের সমন্বিত পরিচালন ব্যয় ১৬% বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্যাংকের নন-পারফর্মিং লোন (এনপিএল) উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে, যা ২০২২ সালের ৩.৭২% থেকে কমে ২০২৩ সালে ৩.৩৮% হয়েছে। এটি মূলত ব্যাংকের কার্যকর নন-পারফর্মিং অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট, আন্ডাররাইটিং, মনিটরিং এবং রিকভারি কৌশলকে নির্দেশ করে।
২০২৪ সালের প্রথম তিন মাসে ব্যাংকের উল্লেখযোগ্য অর্জনসমূহ :
সমন্বিত শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) ২০২৩ সালের প্রথম তিন মাসের ৮৯ পয়সার তুলনায় ২০২৪ সালের একই সময়ে ১ টাকা ৭০ পয়সায় উন্নীত হয়েছে। গত ৩১ মার্চ ২০২৪ এ ব্যাংকের সমন্বিত নিট সম্পদ মূল্য (এনএভি) শেয়ার প্রতি ৪২ টাকা ৯৭ পয়সায় উন্নীত হয়েছে, যা ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ছিল ৪১ টাকা ৩৬ পয়সা। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের তুলনায় ২০২৪ সালের প্রথম তিন মাসে ব্র্যাক ব্যাংকের একক (স্ট্যান্ডঅ্যালন) আমানত ৮% বৃদ্ধি পেয়েছে। এটি ব্যাংকের দীর্ঘমেয়াদি প্রবৃদ্ধি-কৌশল এবং গ্রাহক আস্থার প্রতিফলন।
সমন্বিত রিটার্ন অন ইক্যুইটি (আরওই) এবং রিটার্ন অন অ্যাসেট (আরওএ) যথাক্রমে ১৬.১১% এবং ১.২৫% এ উন্নীত হয়েছে। বিনিয়োগ, নন-ফান্ডেড আয় এবং ইন্টারেস্ট আয় বাড়ায় ২০২৩ সালের প্রথম তিন মাসের তুলনায় ২০২৪ সালে ব্যাংকের মোট সমন্বিত আয় ৪৩% বৃদ্ধি পেয়েছে। নন-পারফর্মিং লোনের (এনপিএল) হার হ্রাসে ব্যাংকের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। যার ফলে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে থাকা নন-পারফর্মিং লোন (এনপিএল) ৩.৩৮% থেকে কমে ২০২৪ সালের প্রথম তিন মাসে ৩.৩০%-তে উন্নীত হয়েছে। ব্র্যাক ব্যাংকের আর্থিক ফলাফল সম্পর্কে ব্যাংকটির ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড সিইও সেলিম আর. এফ. হোসেন বলেন, ‘মধ্যমেয়াদি কৌশল অনুসরণ করার মাধ্যমে আমাদের ব্যাংক শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। আমানত ও ঋণে ব্র্যাক ব্যাংকের প্রবৃদ্ধি দেশের বিদ্যমান ইন্ডাস্ট্রি অ্যাভারেজের চেয়ে অনেক ভালো। এটি ব্যাংকের প্রতি গ্রাহকদের আস্থা এবং ব্যাংকের দীর্ঘমেয়াদি টেকসইতার প্রমাণ। ডিজিটাল প্রযুক্তি এবং বিশেষায়িত প্রোডাক্টের মাধ্যমে গত বছর আমাদের ব্যাংক গ্রাহক সেবা এবং কাস্টমার প্রপোজিশনে উল্লেখযোগ্য উন্নতি সাধন করেছে। প্রবৃদ্ধির এই ধারা অব্যাহত রেখে ২০২৫ সালের মধ্যে আমরা আমাদের ব্যবসায় দ্বিগুণ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করছি’।