চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) সার্বিক ঋণ বিতরণ কমেছে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা। এ সময় বেসরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ঋণ বিতরণে সক্ষম হলেও পিছিয়ে রয়েছে সরকারি ও বিদেশি খাতের ব্যাংকগুলো। গত রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
পরিবেশবান্ধব ও টেকসই প্রকল্পে অর্থায়ন উৎসাহিত করে আসছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। মোট মেয়াদি ঋণের ৫ শতাংশ পরিবেশবান্ধব খাতে বিতরণের জন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশও দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংক ও ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোও (এনবিএফআই) এখন ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে পরিবেশবান্ধব ও টেকসই প্রকল্পগুলোকে প্রাধান্য দিচ্ছে।
পাশাপাশি মোট ঋণের ২০ শতাংশ টেকসই প্রকল্পে দিতে বলা হয়। টেকসই প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে কৃষি, সিএমএসএমই, পরিবেশবান্ধব কারখানা, সামাজিকভাবে দায়িত্বশীল প্রকল্প। টেকসই অর্থায়নের মধ্যে পরিবেশবান্ধব খাতে যে কোনো ধরনের অর্থায়ন রয়েছে।
একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বর্তমানে ব্যাংক খাতে তীব্র তারল্য সংকট রয়েছে। এর ফলে চাহিদা অনুযায়ী উদ্যোক্তাদের ঋণের জোগান দিতে পারছে না ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো।
এ পরিস্থিতি এখন আরও উদ্বেগজনক। এতে সংকুচিত হয়ে পড়ছে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। মূলত অনিয়ম, রাজনৈতিক প্রভাব, দুর্নীতি ও আস্থাহীনতায় তারল্য সংকটে পড়েছে ব্যাংকগুলো। এসব কাররেণ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম ঋণ নিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের মার্চ মাস শেষে পরিবেশবান্ধব ও টেকসই প্রকল্পগুলোতে সামষ্টিক বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৮৮ হাজার ৬৯৬ কোটি টাকা। তিন মাস আগে অর্থাৎ ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে এ খাতের বিনিয়োগ ছিল ৯০ হাজার ৭০৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে টেকসই খাতে বিনিয়োগ কমেছে দুই হাজার সাত কোটি টাকা। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে টেকসই খাতে বিনিয়োগ ছিল ৩৬ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকা।
জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলায় কার্বন নিঃসরণ কমাতে পরিবেশবান্ধব প্রকল্পে ঝুঁকছে বিভিন্ন দেশ। এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই বাংলাদেশও। দেশের পোশাক ও বস্ত্র খাতে এখন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পরিবেশবান্ধব কারখানার সংখ্যা ২১৭টি।
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো টেকসই অর্থায়নের পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব কার্যক্রম শুরু করেছে। তারই অংশ হিসেবে অনেক ব্যাংক তাদের শাখা ও এটিএমে সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার, বিদ্যুতের ব্যবহার কমিয়ে প্রাকৃতিক আলোর ব্যবহার বাড়ানো এবং কোনো কোনো ব্যাংক কাগজের ব্যবহারও কমিয়ে আনছে। টেকসই অর্থায়নের ক্ষেত্রে সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহৃত হচ্ছে বা হবে এমন প্রকল্পগুলোকে প্রধান্য দেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি চার বছর বছর ধরে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সাসটেইনেবল রেটিং বা টেকসই মান প্রকাশ করছে।
টেকসই উন্নয়নের অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য এ উদ্যোগ যা মূলত পাঁচটি সূচকের ওপর ভিত্তি করে করা হয়। সূচকগুলো হলো, টেকসই অর্থায়ন, সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রম, পরিবেশবান্ধব প্রকল্পে অর্থায়ন, টেকসই কোর ব্যাংকিং সূচক এবং ব্যাংকিং সেবার পরিধি।