দরপতনের ধারা থেকে কিছুতেই বের হতে পারছে না দেশের শেয়ারবাজার। দিন যত যাচ্ছে তত খাদের মধ্যে তলিয়ে যাচ্ছে শেয়ারবাজার। প্রতিদিনই পুঁজি হারাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। ফলে বাড়ছে হাহাকার। আগের কার্যদিবসের ধারাবাহিকতায় সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবস গতকাল বুধবারও শেয়ারবাজারে দরপতন হয়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমার পাশাপাশি কমেছে সবক’টি মূল্যসূচক। সেই সঙ্গে ডিএসইতে কমেছে লেনদেনের পরিমাণও।
মূল্যসূচক কমে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স তিন বছর আগের অবস্থানে ফিরে গেছে। সূচকটি এখন ৩৭ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে রয়েছে। সেই সঙ্গে ডিএসইতে চার মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন লেনদেনের ঘটনা ঘটেছে। শেয়ারবাজারের এ মন্দা অবস্থা কাটাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি হস্তক্ষেপ চেয়েছেন বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ। ‘পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী জাতীয় ঐক্য ফাউন্ডেশন’ নামের একটি সংগঠনের ব্যানারে সংবাদ সম্মেলন করে এ হস্তক্ষেপ চাওয়া হয়। সংগঠনটির সভাপতি মো. রুহুল আমিন আকন্দ বলেন, বিনিয়োগকারীরা প্রতিনিয়ত তাদের পুঁজি হারাচ্ছে এবং অনেক বিনিয়োগকারী এরই মধ্যে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে সর্বস্বান্ত হয়ে পথে বসেছেন।
এদিকে বর্তমানে দেশের শেয়ারবাজার ক্রান্তিকালে রয়েছে উল্লেখ করে শেয়ারবাজারে নতুন করে করের বোঝা না চাপানোর অনুরোধ জানিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ। তাই আগামী অর্থবছরের (২০২৪-২৫) বাজেটে ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স আরোপ না করার দাবি জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, টানা ১০ কার্যদিবস দরপতন হওয়ার পর সোমবার দেশের শেয়ারবাজারে কিছুটা ঊর্ধ্বমুখীর দেখা মেলে। তবে পরের কার্যদিবস গত মঙ্গলবার শেয়ারবাজারে ফের দরপতন হয়।
এ পরিস্থিতিতে গতকাল বুধবার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমার মাধ্যমে। ফলে লেনদেনের শুরুতেই সূচক ঋণাত্মক হয়ে পড়ে। লেনদেনের ১০ মিনিটের মাথায় সূচক কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী হলেও তা ৫ মিনিটের বেশি স্থায়ী হয়নি। বরং লেনদেনের সময় যত গড়িয়েছে দরপতনের মাত্র তত বেড়েছে। এতে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমার পাশাপাশি সবকটি মূল্যসূচকের বড় পতন হয়েছে। দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে মাত্র ৬৪টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। বিপরীতে দাম কমেছে ২৮৬টি প্রতিষ্ঠানের। আর ৪৪টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
ফলে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৫০ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ২২৮ পয়েন্টে নেমে গেছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১৩ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ১৩৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১৬ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৮৬৯ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
সবকটি মূল্যসূচক কমার পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও কমেছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৩০৬ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৪৪০ কোটি ৭২ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন কমেছে ১৩৪ কোটি ৫ লাখ টাকা। লেনদেন শুধু আগের দিনের তুলনায় কমেনি চলতি বছরের ৩ জানুয়ারির পর সর্বনিম্ন লেনদেন হয়েছে।