বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি আবারও কমেছে। ব্যাংক ঋণের সুদহার বেড়ে যাওয়া, তারল্য সংকটের পাশাপাশি সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির প্রভাবে এমনটা হয়েছে বলে মনে করেন খাত সংশ্লিষ্টরা। এপ্রিলে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি কমে ৯ দশমিক ৯০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এটি গত পাঁচ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। তবে গত মার্চে কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী হয় বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত মার্চে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি কিছুটা বাড়লেও এপ্রিলে তা কমে যায়। আলোচিত মাসটিতে বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৯ শতাংশ। গত পাঁচ মাসের মধ্যে এ প্রবৃদ্ধি সর্বনিম্ন। এর আগের মাস মার্চে এ খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি কিছুটা বেড়ে ১০ দশমিক ৪৯ শতাংশে উন্নীত হয়েছিল।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনায় উঠে আসে, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল ১১ শতাংশ। তবে কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ ঋণ বিতরণ না হওয়ায় অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধে (জানুয়ারি-জুন) বেসরকারি ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ১০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। এ হিসাবে লক্ষ্যমাত্রায় না এলেও তার কাছাকাছি রয়েছে এপ্রিলে ঋণ বিতরণ। এ বিষয়ে বেসরকারি ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, গত রমজান ঘিরে আমদানি বেড়েছিল, এতে গত মার্চে ঋণ প্রবৃদ্ধিও বাড়ে। মাসটিতে প্রবৃদ্ধি কিছুটা বেড়ে ১০ দশমিক ৪৯ শতাংশে উন্নীত হয়, যা ছিল ৯ মাসে সর্বোচ্চ। তবে ঈদের পর বেসরকারি খাতের ব্যবসায়ীরা আমদানির ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করছেন।
বিশেষত দেশের অর্থনীতি ও আন্তর্জাতিক বাজারের মন্থর গতির কারণে এমনটি করছেন তারা। যে কারণে ঋণের গতি কমিয়ে দিয়েছে। ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ১২ দশমিক ৬২ শতাংশ। এরপর থেকে টানা সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঋণের প্রবৃদ্ধি কমে যায়। অক্টোবরে কিছুটা বেড়ে ১০ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ হয়, নভেম্বরে ফের কমে যায়। তবে নভেম্বরের তুলনায় ডিসেম্বরে মার্জিনাল প্রবৃদ্ধি হয়। মুদ্রানীতিতে জুনে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে, যা আগে ছিল ১১ শতাংশ। সর্বোপরি অর্থ সরবরাহের লক্ষ্যমাত্রা ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৯ দশমিক ৭ শতাংশ করা হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) এলসি খোলা ও নিষ্পত্তির পরিমাণ আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় যথাক্রমে কমেছে ৪ দশমিক ২৩ শতাংশ ও ১৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ। গত অর্থবছরের প্রথম আট মাসে এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে ৫১ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার। চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে ৪৪ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলার। চলতি অর্থবছরে আট মাসে মূলধনী যন্ত্রপাতির এলসি নিষ্পত্তি ২৫ দশমিক ৩৬ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে এক দশমিক ৮৫ বিলিয়ন ডলারে। এছাড়া শিল্পের কাঁচামাল আমদানি নিষ্পত্তি ২৫ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে এক দশমিক ৪৩ বিলিয়ন ডলারে।