আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের পর দেশের শেয়ারবাজারে বড় দরপতন হয়েছে। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটর দাম কমার পাশাপাশি প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সবকটি মূল্যসূচকের বড় পতন হয়েছে। একই সঙ্গে ডিএসইতে লেনদেন কমে ৩০০ কোটি টাকার ঘরে নেমেছে। শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রস্তাবিত বাজেটে শেয়ারবাজারের জন্য কোনো সুখবর নেই। বরং শেয়ারবাজারবিরোধী বাজেট হয়েছে। বাজেট প্রস্তাবে ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের ৫০ লাখ টাকার ওপর ক্যাপিটাল গেইনে ট্যাক্স আরোপ করা হয়েছে। আবার অতালিকাভুক্ত কোম্পানির কর্পোরেট ট্যাক্স হার কমানো হয়েছে। এতে তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে কর হারের ব্যবধান আরো কমে এসেছে। এর ফলেই বাজেট প্রস্তাবের পর শেয়ারবাজারে বড় দরপতন হয়েছে। নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের পর গতকাল রোববার ছিল প্রথম কর্যদিবস। এদিন শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমার মাধ্যমে।
লেনদেনের শুরুতে দেখা দেওয়া এই নেতিবাচক প্রবণতা অব্যাহত থাকে শেষ পর্যন্ত।
এমনকি লেনদেনের শেষ দিকে দরপতনের মাত্রা বেড়ে যায়। এতে দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে মাত্র ৩৩টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। বিপরীতে দাম কমেছে ৩৪০টি প্রতিষ্ঠানের। আর ১৯টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। ফলে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৬৫ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ১৭১ পয়েন্টে নেমে গেছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১৫ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ১২০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ২২ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৮৩৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৩৫৭ কোটি ৯০ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৫৪২ কোটি ৬০ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন কমেছে ১৮৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা।
এ বিষয়ে ডিএসইর এক সদস্য বলেন, বাজেট প্রস্তাবের আগেই এবার ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের ওপর ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স আরোপ হতে পারে, এমন গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। যার পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জসহ শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে দাবি জানানো হয়েছিল এবার ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স আরোপ না করার। কিন্তু শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টদের দাবি উপেক্ষা করে ক্যাপিটাল গেইনের ওপর ট্যাক্স আরোপ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের ক্ষেত্রে ৫০ লাখ টাকার ওপরে ক্যাপিটাল গেইন হলে তার ওপর ১৫ শতাংশ ট্যাক্স দিতে হবে। ৫০ লাখ টাকা ক্যাপিটাল গেইন করা বিনিয়োগকারীর সংখ্যা কম; কিন্তু এ ধরনের বিনিয়োগকারীরা বাজারে বড় ধরনের প্রভাব রাখেন। বড় বিনিয়োগকারীরা বাজারে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়লে লেনদেনের গতি কমে এবং দরপতন হয়। এখন হয়তো সেটিই হচ্ছে। লেনদেন খরার বাজারে টাকার অঙ্কে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে লাভেলো আইসক্রিমের শেয়ার। কোম্পানিটির ১৫ কোটি ৯১ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ফরচুন সুজের ১৫ কোটি ১৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ১৩ কোটি ৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ। এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- ইউনিলিভার কনজুমা কেয়ার, সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস, ই-জেনারেশন, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ওরিয়ন ফার্মা এবং ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো। অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ১০৬ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ২১৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩৪টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৫১টির এবং ৩২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ১০৭ কোটি ৮২ লাখ টাকা।