বাজেটে নেই দিকনির্দেশনা
এলডিসি উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কতটা প্রস্তুত বাংলাদেশ
প্রকাশ : ২৪ জুন ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় প্রবেশ করবে বাংলাদেশ। উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ-পরবর্তীকালে বাংলাদেশ ব্যবসা-বাণিজ্যে এতদিন যেসব সুবিধা পেয়ে আসছে, সেগুলো সীমিত হয়ে যাবে। এতে দেশের রপ্তানি খাত নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। সেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আগেভাগেই নিতে হবে প্রস্তুতি। আর্থিক খাতে আনতে হবে বড় ধরনের সংস্কার।
মূল্যস্ফীতি, ডলার সংকট, বিনিয়োগ হ্রাস, বৈদেশিক ও অভ্যন্তরীণ ঋণের চাপসহ নানা প্রতিকূলতায় কঠিন সময় পার করছে দেশের অর্থনীতি। সংকট উতরে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করা, ২০২৬ সালের মধ্যে স্বল্পোন্নত দেশের গ্রুপ থেকে দেশকে উত্তরণের জন্য প্রস্তুত করা এবং সম্ভাবনাময় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার লক্ষ্যে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট প্রণয়ন করেছে সরকার। তবে বাজেট বক্তৃতায় এলডিসি উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কর্মপরিকল্পনা সম্পর্কে দিকনির্দেশনার ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজেটে কিছু চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করা হলেও এলডিসি উত্তরণের পর কীভাবে তা কাটিয়ে ওঠা যায়, সে বিষয়ে দিকনির্দেশনার অভাব রয়েছে। ২০২৬ সালকে এলডিসি উত্তরণের বছর হিসাব করলে হাতে সময় আর মাত্র ১ বছর। সেক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের করণীয় এবং তাদের আরও বেশি স্বনির্ভর করতে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন ছিল, যা বাজেট বক্তৃতায় অনেকাংশেই অনুপস্থিত। গত ৬ জুন জাতীয় সংসদে নতুন অর্থবছরের বাজেট পেশ করার সময় অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়শীল দেশে উত্তরণের পাশাপাশি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) বিধিবিধানের সঙ্গে সঙ্গতি রাখতে কিছু ক্ষেত্রে কিছু পণ্যের শুল্কহার বা ট্যারিফ যৌক্তিক করতে হবে। ট্যারিফ যৌক্তিকীকরণের অন্যতম শর্ত হলো- বর্তমানে বলবৎ ন্যূনতম ও ট্যারিফ মূল্য এবং রেগুলেটারি ডিউটি- সম্পূরক শুল্ক পর্যায়ক্রমে প্রত্যাহার করা। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সঙ্গে অঙ্গীকারের অংশ হিসেবে যেসব পণ্যের আমদানি পর্যায়ে ট্যারিফ শিডিউলে উল্লেখিত হার অতিক্রম করেছে সেসব পণ্যের ট্যারিফ আবদ্ধ ট্যারিফে আনতে হবে। ২০২৬ সালে এলডিসি উত্তরণের পর শিল্পকে স্বনির্ভর করতে পর্যায়ক্রমে সব ধরনের রপ্তানিতে প্রণোদনা কমানোর পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এরই অংশ হিসেবে গত ৩০ জানুয়ারি তৈরি পোশাক, কৃষি ও চামড়াসহ ৪৩টি খাতে পণ্য রপ্তানির বিপরীতে ভর্তুকি বা নগদ সহায়তা কমানোর ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ফেব্রুয়ারিতে জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসির (সিডিপি) ২০২৪ সালের ত্রিবার্ষিক মূল্যায়ন প্রতিবেদনে এলডিসি উত্তরণ ঘিরে বাংলাদেশের সম্ভাবনার কথা উঠে আসে। যেখানে বিভিন্ন সূচকে এলডিসি উত্তরণের সবশেষ মূল্যায়নেও বেশ ভালোভাবেই উত্তীর্ণ হয়েছে বাংলাদেশ। ওই প্রতিবেদনে মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ, জলবায়ু ও অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা, এসব সূচকে বাংলাদেশ আশাব্যঞ্জক অবস্থায় রয়েছে। এলডিসি উত্তরণ হয়েছে বা হওয়ার পথে- এমন দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র বাংলাদেশই টানা তিনটি মূল্যায়নে সব সূচকে চ্যালেঞ্জ উতরে গেছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দেশীয় শিল্পকে প্রস্তুত করার পদক্ষেপ হিসেবে আমি কিছু সুবিধা কমানোর প্রস্তাব করছি এবং বিভিন্ন পণ্যের ক্ষেত্রে ১ শতাংশের পরিবর্তে ৫ শতাংশ সিডি বেঁধে দেওয়ার সুপারিশ করছি। এলডিসি স্ট্যাটাস থেকে উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণের পাশাপাশি পণ্য সঞ্চালন প্রক্রিয়ায় ব্যয় কমানোর প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় আমরা লজিস্টিক খাত অগ্রাধিকার খাত হিসেবে বিবেচনা করছি।’ লজিস্টিক খাতের উন্নয়নের মাধ্যমে এলডিসি পরবর্তী সময়ে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা এবং বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্য ও সেবার প্রতিযোগিতা সক্ষমতা ধরে রাখা সম্ভব হবে বলেও আশার কথা জানান অর্থমন্ত্রী।
ফেব্রুয়ারির প্রতিবেদনে সিডিপি দেখিয়েছে, বাংলাদেশসহ যে ছয়টি দেশ এলডিসি উত্তরণের পথে রয়েছে, সবগুলো দেশের সামনেই চ্যালেঞ্জ চারটি। চ্যালেঞ্জগুলো হলো- বৈশ্বিক সংকট, ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি এবং বিদেশি সহায়তা বৃদ্ধি। তবে এলডিসি উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকার খাতভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা করছে বলে জানিয়েছেন আবুল হাসান মাহমুদ আলী। এ বিষয়ে বাজেট বক্তৃতায় তিনি বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণ, বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার সঙ্গে অবাধ ও অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি সই এবং ডব্লিউটিওর শর্ত মেনে চলার কারণে আমদানি শুল্ক থেকে আয় কমার সম্ভাবনা রয়েছে।