চলতি হিসাবের ঘাটতি বাংলাদেশে বাড়ছে

প্রকাশ : ০৭ জুলাই ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

ডলার সংকটের কারণে আমদানি নিয়ন্ত্রণে নানা উদ্যোগ নেয় সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর প্রভাবে বৈদেশিক বাণিজ্যের ঘাটতি কিছুটা কম হয়েছে। তবে বিদেশি ঋণ ও বিনিয়োগ কম আসছে, রপ্তানি আয়ও কমেছে; অন্যদিকে আগের নেওয়া ঋণ পরিশোধের চাপ বেড়েছে। এতে করে চলতি হিসাবের ঘাটতি বাড়ছে। পাশাপাশি বহির্বিশ্বের সঙ্গে দেশের সামগ্রিক লেনদেনে বড় ঘাটতি তৈরি হচ্ছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক গত অর্থবছরের (২০২৩-২৪) প্রথম ১০ মাসের (জুলাই-এপ্রিল) বৈদেশিক লেনদেন ভারসাম্যের (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট) পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, গত অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিলে তিন হাজার ৩৬৭ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। এ ময় আমদানি হয়েছে ৫ হাজার ২৩৭ কোটি ডলারের পণ্য। এতে করে অর্থবছরের ১০ মাসে এক হাজার ৮৭০ কোটি (১৮ দশমিক ৭০ বিলিয়ন) ডলারের বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ। বর্তমান বিনিময় হার হিসাবে দেশীয় মুদ্রায় (প্রতি এক ডলার ১১৮ টাকা ধরে) এর পরিমাণ ২ লাখ ২০ হাজার ৬৩৬ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে এই সময়ে বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ২ হাজার ৩৬০ কোটি ডলার। ডলার সংকট কাটাতে নানা উপায়ে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বিভিন্ন পণ্য আমদানিতে শুল্ক বাড়িয়েছে সরকার। একই সঙ্গে তুলনামূলক কম প্রয়োজন বা বিলাসী পণ্যের এলসি খোলার সময় শতভাগ পর্যন্ত নগদ মার্জিনের শর্ত দেওয়া আছে। এসব কারণে আমদানি কমেছে। ১০ মাসে বৈদেশিক বাণিজ্যের আর্থিক হিসাবে ২২৩ কোটি ডলার উদ্বৃত্ত হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের (২০২২-২৩) একই সময়ের এ উদ্বৃত্ত ছিল ৩৫৪ কোটি ডলার। তবে সামগ্রিক লেনেদেন ভারসাম্যে বড় ঘাটতি তৈরি হয়েছে।

কোনো দেশের চলতি হিসাব মূলত বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাণিজ্য এবং মানুষের আয়কেন্দ্রিক আয়-ব্যয়ের হিসাব। চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকার অর্থ হলো নিয়মিত লেনদেনে দেশকে কোনো ঋণ করতে হচ্ছে না। আর ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়। সেই হিসাবে উন্নয়নশীল দেশের চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকা ভালো। সবশেষ তথ্য বলছে, গত অর্থ বছরের ১০ মাসে চলতি হিসাবে ঘাটতি ৫৭৩ কোটি ডলার বা ৬৭ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। তার আগের অর্থবছরে একই সময়ে এ ঘাটতি ছিল এক হাজার ১৮ কোটি ডলার। সামগ্রিক লেনেদেনে (ওভারঅল ব্যালান্স) বড় ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ। জুলাই-এপ্রিল মাসে সামগ্রিক লেনেদেনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৫৬ কোটি ডলার (ঋণাত্মক)। এই সূচকটি আগের বছর একই সময় ঘাটতি ছিল ৮৮০ কোটি ডলার। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্যে ঘাটতি বেড়ে যাওয়া মানে বিভিন্ন উৎস থেকে দেশে যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আসছে, তার চেয়ে বেশি পরিশোধ করতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে পরিশোধ ঝুঁকি এড়াতে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ বা রিজার্ভ থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রচুর পরিমাণ ডলার বিক্রি করছে। সদ্য বিদায়ী অর্থবছর দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ১ হাজার ২৬৯ কোটি ডলার বা ১২ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১ হাজার ৩৫৮ কোটি ডলার (১৩ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন) বিক্রি করা হয়েছিল। আর ২০২১-২২ অর্থবছরে বিক্রি হয় ৭ দশমিক ৬২ বিলিয়ন বা ৭৬২ কোটি ডলার। সব মিলিয়ে তিন অর্থবছরে রিজার্ভ থেকে ৩৩ দশমিক ৮৯ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে এক হাজার ৯১২ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা।