একশ্রেণির বিনিয়োগকারীর মুনাফা তুলে নেওয়ার প্রবণতার কারণে গতকাল সোমবার লেনদেনের পুরো সময়জুড়ে দেশের শেয়ারবাজারে ব্যাপক অস্থিরতা দেখা যায়। এ অস্থিরতার মধ্যে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্যসূচক সামান্য বেড়েছে। তবে কমেছে বাছাই করা সূচক। একই সঙ্গে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ। পাশাপাশি দাম কমার তালিকায় নাম লিখিয়েছে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান। অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) দাম কমার থেকে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। ফলে এ বাজারটিতে সবক’টি মূল্যসূচক বেড়েছে। তবে আগের কার্যদিবসের তুলনায় অস্বাভাবিকভাবে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ।
এদিন শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেনের শুরুতেই সূচকের ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মেলে। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ায় লেনদেন শুরুর ৩০ মিনিটের মাথায় ডিএসইর প্রধান সূচক ২১ পয়েন্ট বেড়ে যায়।
তবে এরপর দাম বাড়ার তালিকা থেকে একের পর এক প্রতিষ্ঠান দাম কমার তালিকায় চলে আসে। ফলে লেনদেনের ৪০ মিনিটের মাথায়ই ডিএসইর প্রধান সূচক ঋণাত্মক হয়ে পড়ে। অবশ্য ১৫ মিনিটের মধ্যে আবার সূচক পজেটিভ হয়। এভাবে লেনদেনের পুরো সময়জুড়ে সূচক কখনো পজেটিভ, আবার কখনো ঋণাত্মক হয়ে পড়ে।
এমন অস্থিরতার মধ্যে দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে ১৬৪টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। বিপরীতে দাম কমেছে ১৯৭টির আর ৩৩টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
এরপরও ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৫ পয়েন্ট বেড়ে পাঁচ হাজার ৫৬৪ পয়েন্টে উঠে এসেছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় দশমিক ৩১ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ২১৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৪ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ৯৫৯ পয়েন্টে অবস্থান করছে। বাজারের এ পরিস্থিতি সম্পর্কে ডিএসইর এক সদস্য বলেন, ঈদের পর শেয়ারবাজারে এক ধরনের টানা উত্থান হয়েছে। এ কারণে বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ শেয়ার বিক্রি করে মুনাফা তুলে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। মুনাফা তুলে নেওয়ার প্রবণতার কারণে আজ শেয়ার বাজারে কিছুটা অস্থিরতা দেখা যায়। তিনি বলেন, বাজারে কিছুটা অস্থিরতা দেখা দিলেও তা নিয়ে দুশ্চিন্তার তেমন কোনো কারণ নেই। কারণ, সার্বিকভাবে শেয়ারবাজার এখন যে অবস্থায় রয়েছে এখান থেকে বড় দরপতনের সম্ভাবনা কম। তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে ভালো কোম্পানি বাছাই করে বিনিয়োগ করলে এ বাজারেও ভালো মুনাফা করা সম্ভব। এদিকে, দিনভর ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৮৮৮ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৯০৮ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন কমেছে ২০ কোটি ২০ লাখ টাকা।
এ লেনদেনে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে সি পার্ল বিচ রিসোর্টের শেয়ার। কোম্পানিটির ৩৭ কোটি ৬৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ফারইস্ট নিটিংয়ের ২৫ কোটি ৬৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ২৩ কোটি ৫৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ওরিয়ন ফার্মা।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ, বিচ হ্যাচারি, আফতাব অটোমোবাইল, স্যালভো কেমিক্যাল, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স এবং সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্স।
অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ৮১ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ২৭৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৪৪টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১১০টির এবং ২৪টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ১৯ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ১৭৯ কোটি ৬২ লাখ টাকা।