সর্বজনিন পেনশন স্কিম চালু হওয়ার প্রায় ১১ মাস পর এর তহবিল বিধিমালার গেজেট জারি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
গত রোববার জারি করা গেজেট অনুযায়ী, পেনশন কর্মসূচির আওতায় জমা হওয়া অর্থ বিনয়োগে কম ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে প্রাথমিকভাবে ছয়টি খাত চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- সরকারি ট্রেজারি বন্ড, বিল, সুকুক বা এ ধরনের সরকারি সিকিউরিটিজ, তপশিলি ব্যাংকে স্থায়ী আমানত, শেয়ারবাজরের মিউচ্যুয়াল ফান্ড, এ ক্যাটেগরির বন্ড এবং সরকারের অবকাঠামো খাতে উন্নয়ন প্রকল্প।
সর্বজনিন পেনশন তহবিল (বিনিয়োগ ও সংরক্ষণ) নামের এ বিধিমালায় বলা হয়, তহবিল সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে আট সদস্যের একটি কমিটি থাকবে। ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হবেন জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য (তহবিল ব্যবস্থাপনা)। কমিটিতে কর্তৃপক্ষের সদস্য (বিনিয়োগ নীতি) অর্থ বিভাগের দুজন যুগ্ম সচিব; বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) পরিচালক পদের নিচে নন- এমন পদমর্যাদার কোনো কর্মকর্তা; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের চেয়ারম্যান এবং পেনশন কর্তৃপক্ষের মহাব্যবস্থাপক পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা থাকবেন। পেনশন কর্তৃপক্ষের কাছে ত্রৈমাসিক ও বার্ষিক প্রতিবেদন দাখিল করবে কমিটি।
তহবিল ব্যবস্থাপনা কমিটির দায়িত্ব ও কার্যাবলি প্রসঙ্গে বলা হয়, আর্থিক বাজার, পুঁজিবাজারসহ বিনিয়োগ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ক্ষেত্র পর্যালোচনা করে কম ঝুঁকিপূর্ণ ও অধিক লাভজনক পোর্টফোলিও বা খাতে বিনিয়োগের সুপারিশ প্রদান করবে। এছাড়া তহবিলের ব্যবসা উন্নয়ন ও তহবিলের অনুকূলে সম্পদ আহরণের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সুপারিশ, বিনিয়োগযোগ্য অর্থের পরিমাণ নিরূপণে কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় সুপারিশ, তহবিলের পুঞ্জীভূত অর্থের হিসাব পর্যালোচনা, তহবিল এবং বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্ট অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি সময় সময় কর্তৃপক্ষকে অবহিতকরণ এবং সরকার, পরিচালনা পর্ষদ বা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সময় সময় তহবিল ব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগ বিষয়ে জারিকৃত নীতিগত সিদ্ধান্তগুলো অনুসরণপূর্বক তহবিল ব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত সুপারিশ প্রদান করবে এ কমিটি।
তহবিল ব্যবস্থাপনা কমিটির সুপারিশ পর্যালোচনা করে সর্বজনিন পেনশন কর্তৃপক্ষ পরিচালনা পর্ষদ অর্থ বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেবে। বিনিয়োগের ক্ষেত্র হবে- দীর্ঘমেয়াদি ট্রেজারি বন্ড, বিল, সুকুক বা এ ধরনের সরকারি সিকিউরিটিজ। এছাড়া দীর্ঘ মেয়াদে ‘এএ’ এবং স্বল্প মেয়াদে ‘এসটি-ওয়ান’ মান পেয়েছে- এমন কোনো তপশিলি ব্যাংকে স্থায়ী আমানতও রাখা যাবে। তবে এ মানের মূল্যায়ন হতে হবে বাংলাদেশে অনুমোদিত কোনো রেটিং সংস্থা বা স্বীকৃত কোনো আন্তর্জাতিক রেটিং সংস্থার মাধ্যমে।
সরকার বা সরকারি কোনো সংস্থার অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য গৃহীত বাস্তবায়িত কোনো প্রকল্প বা প্রকল্পের সিকিউরিটিতে এ তহবিল বিনিয়োগ করা হবে। বাংলাদেশে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সেচঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) অনুমোদিত বা নিয়ন্ত্রিত মিউচুয়াল ফান্ড ও স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত ‘এ’ ক্যাটেগরির শেয়ার, বন্ড বা সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করার কথাও বলা হয়েছে। বিধিমালায় আরো বলা হয়, একক কোনো খাতে পেনশন তহবিলের ২৫ শতাংশের বেশি অর্থ বিনিয়োগ করা যাবে না। তবে সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে তা মানা হবে না। তহবিলের কোনো অর্থ ব্যক্তিমালিকানাধীন কোনো প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করা যাবে না।