প্রতি মাসেই রপ্তানির তথ্য প্রকাশ করে থাকে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। তবে রপ্তানি আয়ের পরিসংখ্যানে তথ্যগত গরমিল সংশোধনের জন্য আগামী তিন মাস রপ্তানির তথ্য প্রকাশ করবে না ইপিবি। এ সময়ের মধ্যে রপ্তানি আয়ে তথ্যের গরমিলের কারণ খুঁজে বের করে সংশোধনের পর পুরনায় মাসভিত্তিক তথ্য প্রকাশ করা হবে। গত সোমবার অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। রপ্তানি তথ্যের গরমিল সংশোধনের উদ্দেশে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত এ সভায় অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, অর্থ বিভাগের সচিব ড. মো খায়েরুজ্জামান মজুমদার, ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেনসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গতকালের সভায় বাংলাদেশ ব্যাংক ও ইপিবির রপ্তানির পরিসংখ্যানে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে গরমিলের অন্তর্নিহিত কারণ উদ্ঘাটনের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআর, ও ইপিবি আগামী তিন মাসের মধ্যে এ গরমিলের মূল কারণ খুঁজে বের করবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। ফলে এ সময়ে রপ্তানির পরিসংখ্যান প্রকাশ করবে না ইপিবি। গরমিলের কারণ উদ্ঘাটনের পর সেটি সংশোধন করে মাসভিত্তিক তথ্য প্রকাশ করা হবে। বৈঠকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রপ্তানি আয়ের তথ্য গড়মিলের প্রকৃত তথ্য উদঘাটনে এখন থেকে সরাসরি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান, সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী সমিতি, এনবিআর ও বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তথ্য সংগ্রহ করা। এভাবে একটি তথ্যভাণ্ডার করা হবে। এসব কাজ সঠিকভাবে সমন্বয় করেই নির্মোহভাবে সেই পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হবে। দেশে রপ্তানি নিয়ে নিয়মিতভাবে পরিসংখ্যান প্রকাশ করে ইপিবি ও বাংলাদেশ ব্যাংক।
গত দশ অর্থবছরে এ দুই সংস্থার রপ্তানি আয় পরিসংখ্যানের পার্থক্য ক্রমেই বাড়তে দেখা গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, গত বছরের জুলাই থেকে গত মে পর্যন্ত রপ্তানি আয় হয়েছে ৪ হাজার ৭৩ কোটি ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৪ দশমিক ২৮ শতাংশ কম। যদিও ইপিবি গত মাসে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) বরাত দিয়ে প্রকাশ করা তথ্যে দাবি করে, ১১ মাসে (জুলাই-মে) রপ্তানি আয় হয়েছিল ৫ হাজার ১৫৪ কোটি ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২ শতাংশ বেশি। অর্থাৎ এ দুই সংস্থার তথ্যে রপ্তানি আয়ে গরমিল দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৮১ কোটি ডলার। শুধু গত অর্থবছরেই নয় বরং গত ১০ বছরে দুই সংস্থার তথ্যে গড়মিল দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬ হাজার ৫০০ কোটি ডলার। এর আগে পণ্য রপ্তানির তথ্যে গরমিলের বিষয়টি ৩ জুলাই সামনে আনে বাংলাদেশ ব্যাংক। তারা বলেছে, এত দিন ইপিবির পরিসংখ্যান ধরে রপ্তানির হিসাব করা হতো। তবে সে অনুযায়ী দেশে রপ্তানি আয় আসছিল না। এ নিয়ে দেশি ও বিদেশি বিভিন্ন সংস্থা থেকেও প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে।