আন্দোলন ও কারফিউর কারণে গত সপ্তাহে পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থা বেশ ভেঙে পড়েছিল। এর ব্যাপক প্রভাব পড়ে ঢাকার বাজারে, দেখা দেয় সংকট। সঙ্গে যোগ হয় পরিবহনের বাড়তি ভাড়া। ফলে বাজারে হু-হু করে বেড়ে যায় সবজি, মাছ, চাল, ডালসহ বেশির ভাগ নিত্যপণ্যের দাম। তবে দু’দিন ধরে পাল্টাতে শুরু করেছে পরিস্থিতি; বাড়তে শুরু করেছে পণ্য সরবরাহ। এরইমধ্যে কমেছে বেশির ভাগ সবজির দাম। তবে এখনও স্বস্তি ফেরেনি পেঁয়াজ, আলু আর চালের বাজারে। রয়ে গেছে পরিবহন ভাড়ার বাড়তি চাপও। ব্যাংক বন্ধ থাকায় নিত্যপণ্য বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোও গেল কয়েক দিন পণ্যের ক্রয়াদেশ নিতে পারেনি। এখন তারাও দ্রুত ক্রয়াদেশ নিচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, কারফিউ থাকলেও তা বেশ ঢিলেঢালা চলছে। পরিবহন চলাচলে তেমন বাধা নেই। তাই বিভিন্ন জেলা থেকে সব ধরনের পণ্য ঢুকছে ঢাকায়। দামও আগের তুলনায় কমেছে। আরো কমার কথা। তবে পরিবহন ভাড়া বেশি থাকায় তা দামের সঙ্গে সমন্বয় করতে হচ্ছে। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে সবজি, মাছ, চাল, ডালসহ সব ধরনের নিত্যপণ্যের সরবরাহ গত সপ্তাহের তুলনায় বেশি দেখা যায়। চিচিঙ্গা, পটোল ও ঢ্যাঁড়শ বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৭০ টাকা কেজি। সপ্তাহখানেক আগে এসব সবজি কিনতে ক্রেতাকে গুনতে হয় বাজারভেদে ৮০ থেকে ১০০ টাকা। একইভাবে ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া বেগুন ও বরবটির কেজি এখন ৮০ থেকে ৯০ টাকা। করলার কেজি ৫০ টাকার মতো কমে বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। অন্য সবজির দরও কেজিতে ৩০ থেকে ৫০ টাকা কমেছে। মরিচের দরও নেমেছে স্বাভাবিক পর্যায়ে; কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২২০ টাকায়। ডিমের ডজন ১০ টাকার মতো কমে বিক্রি হচ্ছে ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকা।
মুরগি ও মাছের বাজারেও দাম কিছুটা কম দেখা যায়। যদিও আলু ও পেঁয়াজের দরে খুব বেশি হেরফের দেখা যায়নি। এখনও দেশি ভালো মানের পেঁয়াজের কেজি বাজারভেদে বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা। আলুর কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা। নতুন করে না বাড়লেও আগের মতো চড়া দর রয়েছে চালের। বিশেষ করে মাঝারি আকারের চাল (বিআর-২৮ ও পায়জাম) বিক্রি হচ্ছে ৫৮ থেকে ৬০ টাকা কেজি।
কুষ্টিয়া, খুলনা, যশোরসহ কয়েকটি জেলা থেকে সবজি এনে ঢাকার কারওয়ান বাজার ও গাবতলীতে পাইকারি বিক্রি করেন নুর উল্যাহ। তিনি বলেন, আগে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকায় একটি পিকআপ ভাড়া করা যেত। এখন ১৫ হাজার টাকার কম হলে কথা বলেন না চালকরা। ফলে বাড়তি ভাড়াটা সবজি বিক্রি থেকে তুলতে হয়।
কারওয়ান বাজারের চাল ব্যবসায়ী ইসমাইল অ্যান্ড সন্সের স্বত্বাধিকারী জসিম উদ্দিন বলেন, সম্প্রতি ট্রাক ভাড়া অনেক বেড়েছে। ১৫ থেকে ১৬ টন চাল আনা যায়- এমন ধারণক্ষমতাসম্পন্ন ট্রাকের চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঢাকায় আসার ভাড়া ছিল ১৬ থেকে ১৭ হাজার টাকা। এখন দিতে হয় ২১ থেকে ২২ হাজার টাকা। তবে এই পরিবহন ভাড়া আন্দোলন ও কারফিউকে ঘিরে বাড়েনি। এসব ঘটনার আগেই বেড়েছিল।
এদিকে, তেজগাঁওয়ের ট্রাকস্ট্যান্ডেও গেল সপ্তাহের তুলনায় গতকাল চালকদের বেশ কর্মচঞ্চলতা দেখা যায়। ট্রাক ভাড়া বাড়ার বিষয়টি চালকরাও স্বীকার করেন। তবে পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা ভাড়া বেড়েছে বলে ব্যবসায়ীরা যে দাবি করছেন, তা সঠিক নয় বলে দাবি করেন ট্রাকচালকরা।