২০২৩ সালের জুলাই ও আগস্টে বিদ্যুতের ভর্তুকি বাবদ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) অনুকূলে হাজার কোটি টাকা ছাড় করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ অর্থ দিয়ে শুধু বেসরকারি খাতের ইন্ডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্লান্ট (আইপিপি) এবং রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাওনা পরিশোধ করতে বলা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, সরকারের কোষাগারে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় চাহিদা অনুযায়ী ভর্তুকি অর্থ ছাড় করা সম্ভব হচ্ছে না। পিডিবির অনুকূলে গত ১৮ জুলাই ১ হাজার কোটি টাকা ছাড় করে জ্বালানি বিভাগকে চিঠি দিয়েছে অর্থ বিভাগ। এতে বলা হয়, বিদ্যুৎ খাতের ভর্তুকি বাবদ ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত আইপিপি, রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাওনা পরিশোধ করা হয়েছে। এর পরের দুই মাসে মোট ৫ হাজার ৪২৬ কোটি ৮ লাখ টাকার দাবি এসেছে। এ দুই মাসের জন্য এরইমধ্যে ১ হাজার ৮০৮ কোটি টাকার নগদ ভর্তুকি ও বন্ডের মাধ্যমে দেওয়া হয়েছে। আরো ১ হাজার কোটি টাকা চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকি ও প্রণোদনা ব্যবস্থাপনা খাতের বরাদ্দ থেকে দেওয়া হলো।
ছাড় করা অর্থ ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু শর্তজুড়ে দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। বলা হয়েছে, আইপিপি, রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাওনা পরিশোধ ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্যে এ অর্থ ব্যয় করা যাবে না। এ অর্থ ভবিষ্যতে অডিটের মাধ্যমে নিরুপিত মোট প্রদেয় অর্থের সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে। বিদ্যুৎ খাতের ক্যাপাসিটি চার্জের পরিমাণ যৌক্তিকভাবে কমিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। সুষ্ঠু ভর্তুকি ব্যবস্থাপনার স্বার্থে পিডিবি, অধীন প্রতিষ্ঠান ও বিদ্যুৎ উৎপাদন ইউনিটসমূহে রিয়াল টাইম ডেটানির্ভর ইআরপি সফটওয়্যার অতিসত্বর বাস্তবায়নের ব্যবস্থা নিতে হবে। একই সঙ্গে আর্থিক শৃঙ্খলা ও জাতীয় বাজেট ব্যবস্থাপনার স্বার্থে আর্থিক ক্ষমতা অর্পণ আদেশ অনুযায়ী আর্থিক সংশ্লেষসংবলিত বিষয়াবলি, যেমন- বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তি নবায়ন অথবা নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন বিবেচনার জন্য অর্থ বিভাগে পাঠাতে হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, নগদ অর্থে ভর্তুকির অর্থ পরিশোধ করা কঠিন হয়ে পড়ায় বিশেষ বন্ডের মাধ্যমে দায় পরিশোধের উদ্যোগ নেয়া হয়। এর অংশ হিসেবে গত ৩০ জুন পর্যন্ত বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎ উদ্যোক্তাদের ব্যাংক ঋণের বিপরীতে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার বিশেষ বন্ড ইস্যু করা হয়েছে। একই সঙ্গে বাজেট থেকে ভর্তুকি বাবদ অর্থ ছাড় করা হয়েছে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, গত ৩০ জুন পর্যন্ত ভর্তুকি বাবদ বকেয়া দাঁড়াবে অন্তত ৩০ হাজার কোটি টাকা। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাজেটে বরাদ্দ করা ৪০ হাজার কোটি টাকা থেকে ভর্তুকি পরিশোধ করা হবে, যার বেশির ভাগই যাবে ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ। বিদ্যুৎকেন্দ্র বিদ্যুৎ উৎপাদন করুক বা না করুক, একটা নির্দিষ্ট ফি তাদের উৎপাদন ক্ষমতার ওপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করা আছে, যা ক্যাপাসিটি চার্জ নামে পরিচিত। গবেষণা সংস্থা সিপিডির এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ক্যাপাসিটি পেমেন্ট ২৮ হাজার কোটি টাকায়, যা ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ছিল ৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা।