কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতার কারণে পোশাক রপ্তানিকারকদের সাতদিনের বন্দর ডেমারেজ চার্জ মওকুফ (পণ্য খালাসের বিলম্ব ফি) করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ ঘোষণার পর অন্য খাতগুলোর অনেকে মনে করছেন তারাও এ সুবিধা পাবেন। তবে ক্ষতিগ্রস্ত অন্য খাতগুলোও এ সুবিধা পাবে কি না সে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন নৌ-মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব।
বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় আমদানি-রপ্তানিকারক সব খাত কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গত রোববার নৌ-প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘সরকারের কাছে বিভিন্ন বিষয়ে তাদের দাবি আছে। এগুলো কিছু আছে এনবিআর, কিছু অর্থ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত, কিছু বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত। সেগুলো তারা আমাকে অবহিত করেছে। বিষয়গুলো সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধান করা হবে। এ মুহূর্তে আমার কাছে যেটুকু সামর্থ্য আছে সেটুকু আমি করতে পারি। পণ্য আনা-নেয়ার ক্ষেত্রে একটা আতঙ্ক তৈরি হয়েছিল। কিন্তু চট্টগ্রাম বন্দর সেবা দেয়ার জন্য প্রস্তুত ছিল।’ খালিদ মাহমুদ বলেন, ‘বিজিএমইএর পক্ষ থেকে আজ আনুষ্ঠানিকভাবে বলা হয়েছে। আমরা সর্বোচ্চ সাতদিনের ডেমারেজ চার্জ মওকুফ করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বিজিএমইএর পক্ষ থেকে যদি আমাদের তালিকটা দেয়, তাহলে আমরা সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবো।’ এ আন্দোলনে পোশাকখাতের মতো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অন্য খাতও। তারাও বন্দর ডেমারেজ চার্জ মওকুফ চায়। জানতে চাইলে পণ্য প্রক্রিয়াকরণ ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাগ্রো-প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশন (বাপা) জানায়, তাদের সদস্যদের ১২০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। বাপার সাধারণ সম্পাদক ইকতাদুল হক বলেন, ‘প্রত্যেকটি খাত এ আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্ত। সবাই বন্দরের মাশুল মওকুফ চায়। কোনো একটি খাতকে এককভাবে এ সুবিধা না দিয়ে সবাইকে দেয়া দরকার।’ তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা ভেবেছিল প্রত্যেকটি খাতকে সাতদিনের ডেমারেজ চার্জ মওকুফ করা হয়েছে। এ বিষয়টি এখনো পরিষ্কার করা হয়নি।’ দেশে চলমান কারফিউ এবং বন্দর ও কাস্টমসের সার্ভারে অনলাইন সংযোগ না থাকা/ধীরগতি থাকার কারণে সব খাতই নির্দিষ্ট সময়ে পণ্য খালাস করতে সক্ষম হয়নি। বর্তমানে বন্দর ও কাস্টমসের সার্ভার চালু হওয়ার ফলে পণ্য খালাস প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কিন্তু এরই মধ্যে উল্লেখিত কারণে পণ্য খালাস প্রক্রিয়া ব্যাহত হওয়ার কারণে বন্দরে সৃষ্টি হয়েছে কনটেইনার জট। আমদানিকারকদের ওপর ধার্য হয়েছে অতিরিক্ত ডেমারেজ চার্জ। দেশ থেকে সবজিসহ অন্য কৃষিপণ্য রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ ফ্রুটস ভেজিটেবলস অ্যালাইড প্রোডাক্টস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের উপদেষ্টা মনজুর আহমেদ বলেন, ‘আন্দোলনে আমরা প্রায় একশো কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি বিঘ্নিত হয়েছে। যেগুলো পাঠানো যায়নি। আমরা ক্ষতির তথ্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে জানিয়েছি। আমাদেরও দাবি ডেমারেজ চার্জ সব খাতের জন্য মওকুফ করা হোক। এদিকে কয়েকদিন আগে পণ্য আমদানি ও রপ্তানিকারকদের সব খাতের জন্য বন্দর ও শিপিং ডেমারেজ চার্জ মওকুফ করার দাবি জানিয়েছিল ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। একই সঙ্গে বন্দরের ক্লিয়ারিং কার্যক্রম স্বাভাবিক হওয়ার ১৫ দিন পর্যন্ত চার্জ আরোপ না করার অনুরোধ জানায় সংগঠনটি। গতকাল সোমবার এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে সব পর্যায়ে কথা বলছি। আমরা চাই পণ্য আমদানি-রপ্তানিকারকদের সব খাতের চার্জ মওকুফ হোক।’