পতন থেকে বের হয়ে আসার আভাস দিচ্ছে দেশের শেয়ারবাজার। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) মূল্যসূচকের বড় উত্থান হয়েছে। একই সঙ্গে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠান। পাশাপাশি আট কার্যদিবস পর ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৫০০ কোটি টাকার বেশি। এর মাধ্যমে টানা দুই কার্যদিবস সূচক ও লেনদেন বাড়লো।
ডিএসইর মতো অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মিলেছে। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ায় এ বাজারটিতে বেড়েছে সবকয়টি মূল্যসূচক। একই সঙ্গে বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ। এর মাধ্যমে টানা চার কার্যদিবস পতনের পর বাজারটিতে সূচক বাড়লো।
সরকারি চাকরিতে শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে দেশে সহিংস পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে টানা তিন কার্যদিবস শেয়ারবাজারে লেনদেন বন্ধ থাকে। পরিস্থিতির উন্নতি হলে গত সপ্তাহের বুধবার থেকে আবার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয়। তবে আতঙ্কে মাত্রাতিরিক্ত বিক্রির চাপে বুধবার শেয়ারবাজারে বড় দরপতন হয়। একইসঙ্গে লেনদেন কমে ২০০ কোটি টাকার নিচে নেমে যায়।
অবশ্য পরের কার্যদিবস গতকাল বৃহস্পতিবার ঘুরে দাঁড়ায় শেয়ারবাজার। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার পাশাপাশি মূল্যসূচকের বড় উত্থান হয়। একই সঙ্গে বাড়ে লেনদেনের গতি। তবে চলতি সপ্তাহের প্রথম তিন কার্যদিবস শেয়ারবাজারে ঢালাও দরপতন হয়। ফলে মূল্যসূচকের বড় পতন দেখতে হয় বিনিয়োগকারীদের। টানা তিন কার্যদিবস পতনের পর বুধবার ডিএসইতে সূচক সামান্য বাড়ে।
এ পরিস্থিতিতে গতকাল বৃহস্পতিবার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে। এতে লেনদেন শুরু হতেই ডিএসইর প্রধান সূচক ঊর্ধ্বমুখী হয়ে ওঠে। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ায় লেনদেনের ৯ মিনিটের মাথায় ডিএসইর প্রধান সূচক ৪১ পয়েন্ট বেড়ে যায়। কিন্তু এরপর হঠাৎ একশ্রেণির বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রির চাপ বাড়ান। ফলে সূচকও নিচের দিকে নামতে থাকে। ফলে আবারও পতনের শঙ্কা পেয়ে বসে বিনিয়োগকারীদের। এ পরিস্থিতিতে বাড়তে থাকে একের পর এক বিমা কোম্পানির শেয়ারের দাম। যা লেনদেনের শেষ পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। যার ইতিবাচক প্রভাব পড়ে অন্যান্য খাতের ওপরও। ফলে দাম কমার তালিকা থেকে বেরিয়ে আসে একের পর এক প্রতিষ্ঠান। এতে মূল্যসূচকের বড় উত্থান দিয়েই শেষ হয় দিনের লেনদেন।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে সব খাত মিলিয়ে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে ২৭৮ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। বিপরীতে দাম কমেছে ৬০ প্রতিষ্ঠানের। এছাড়া ৬০টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। বিমা খাতের ৫০টি কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে এবং ৬টির দাম কমেছে।
এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৫৩ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ৩৩৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১১ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ১৬৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে। এছাড়া বাছাই করা ভালো ৩০ কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১৪ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৯০০ পয়েন্টে উঠে এসেছে।
সূচক বাড়ার পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও বেড়েছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৫৫২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৪৭০ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন বেড়েছে ৮২ কোটি ১৭ লাখ টাকা। এর মাধ্যমে ১৬ জুলাইয়ের পর ডিএসইতে আবার ৫০০ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হলো। এই লেনদেনে সব থেকে বেশি অবদান রেখেছে টেকনো ড্রাগসের শেয়ার। কোম্পানিটির ৫২ কোটি ৩৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা অগ্নি সিস্টেমসের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২২ কোটি ২ লাখ টাকার। ২০ কোটি ৬২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে সি পার্ল বিচ রিসোর্ট।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছেÑ হাইডেলবার্গ সিমেন্ট, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ, ইউনিলিভার কনজ্যুমার কেয়ার, ওরিয়ন ইনফিউশন, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, উত্তরা ব্যাংক এবং এনআরবি ব্যাংক।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ২৬ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেয়া ২০৭ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৯৮টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৮৯টির এবং ২০টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৩৩৮ কোটি ৭ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ১৩ কোটি ৬২ লাখ টাকা।