ঢাকা ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন

খাদ্য মূল্যস্ফীতির ‘লাল’ শ্রেণিতে বাংলাদেশ

ব্যয় ৭৫ শতাংশ
খাদ্য মূল্যস্ফীতির ‘লাল’ শ্রেণিতে বাংলাদেশ

বিগত দুই সপ্তাহ ধরে চালের বাজার চড়া। এ সপ্তাহে এসে চালের দাম আরো বেড়েছে। এ দফায় খুচরা বাজারে চালের দাম বাড়লো কেজিতে ২ থেকে ৩ টাকা আর পাইকারি বাজারে বস্তাপ্রতি চালের দাম বেড়েছে ৫০ থেকে ১০০ টাকা। শুধু চাল নয় অন্যান্য নিত্যপণ্যের দামও বেড়েছে। খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতিতে। গত মে মাসে দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৮৯ শতাংশে। গ্রামে এ হার ৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ।

এর আগে এপ্রিলে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ। গত মাসে দেশে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমলেও পৌনে ১১ শতাংশের ওপরে উঠেছে খাদ্য মূল্যস্ফীতি, যা দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতিকে নিয়ে গেছে ১০ শতাংশের কাছাকাছি।

বিশ্বব্যাংকের ‘রেড ক্যাটাগরিতে’ পড়ে গেছে দেশের মূল্যস্ফীতি, ফলে খাদ্য কিনতেই একজনকে ব্যয় করতে হচ্ছে আয়ের ৭৫ শতাংশ। এই তালিকায় বাংলাদেশের সঙ্গে আরো আছে কঙ্গো, গাম্বিয়া, গিনি, লাইবেরিয়া, মাদাগাস্কার, অ্যাঙ্গোলা, ক্যামেরুন, পূর্ব তিমুর, কেনিয়া, লেসোথো।

জুন ২০২৩ থেকে মে ২০২৪ পর্যন্ত ১৩ মাসের একটা চিত্র দেখিয়েছে বিশ্বব্যাংক। এই ১৩ মাস মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে রেড ক্যাটাগরিতে পড়েছে বাংলাদেশ। ১৩ মাসের যে চিত্র প্রকাশ করেছে সেখানে প্রতিটা মাস লাল সাইন দিয়ে দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে মূল্যস্ফীতি কম দেখানো হয়েছে সোমালিয়া ও আফগানস্তানে। ভারত ও পাকিস্তানও ভালো অবস্থানে রয়েছে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে। সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের প্রকাশিত ফুড সিকিউরিটি আপডেট-২০২৪ এ তথ্য দেখা গেছে। বছরে দুইবার এই তথ্য প্রকাশ করে সংস্থাটি। কৃষি মন্ত্রণালয়সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন মার্কেট থেকে তথ্য সংগ্রহ করেই এমন তথ্য প্রকাশ করা হয়।

বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ আবাসিক অফিসের মিডিয়া কর্মকর্তা মেহরীন এ মাহবুব জাগো নিউজকে বলেন, ফুড সিকিউরিটি আপডেট বছরে দুইবার প্রকাশিত হয়। শুধু বাংলাদেশ নয় বিশ্বের অন্যান্য দেশ নিয়েও এই রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়। বাংলাদেশের মার্কেট প্রাইস সংগ্রহ করে তথ্য প্রকাশ করা হয়। কৃষি মন্ত্রণালয় ও সরকারের নানা মনিটরিং সংস্থা থেকেও তথ্য নেয়া হয়। এটা রেগুলার ব্রিফ। এই রিপোর্টে দেখা গেছে, বিশ্বব্যাংকের ‘রেড ক্যাটাগরিতে’ মূল্যস্ফীতি।

খাদ্য মূল্যস্ফীতি কোন দেশে কত বেশি, তা বোঝাতে বিভিন্ন দেশকে চার শ্রেণিতে ভাগ করেছে বিশ্বব্যাংক। যেসব দেশের খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৩০ শতাংশ বা তার বেশি, সেসব দেশকে ‘বেগুনি’ শ্রেণিতে, ৫ থেকে ৩০ শতাংশের মধ্যে যেসব দেশের খাদ্য মূল্যস্ফীতি, তাদের ‘লাল’ শ্রেণিতে রাখা হয়েছে। এছাড়া ২ থেকে ৫ শতাংশের মধ্যে মূল্যস্ফীতির দেশগুলোকে ‘হলুদ’ ও ২ শতাংশের কম মূল্যস্ফীতির দেশগুলোকে ‘সবুজ’ শ্রেণিতে রাখা হয়েছে। সব মিলিয়ে ১৭২টি দেশের খাদ্য মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়েছে সংস্থাটির প্রতিবেদনে। বাংলাদেশের পাশাপাশি আরো ১৪টি দেশ এই শ্রেণিতে আছে।

খাবারের দাম নিয়ে সবচেয়ে ভালো আছে পাঁচটি দেশ। সবুজ শ্রেণিভুক্ত দেশগুলো হলো আফগানিস্তান, ইরাক, সেশেলস, সৌদি আরব ও সোমালিয়া। ভালো অর্থাৎ হলুদ শ্রেণিতে থাকা দুটি দেশ হলো লিবিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।

বাংলাদেশের মানুষকে গড় আয়ের অর্ধেকের মতো খরচ করতে হয় খাবার কিনতে। গরিব মানুষের খাবারের পেছনে ব্যয় আরো বেশি। গরিব মানুষরা তাদের আয়ের প্রায় ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশ খরচ করেন খাবার কেনার পেছনে।

বিশ্বব্যাংকের রিপোর্ট ১২ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ ১২ দশমিক ৬ এবং সর্বনিম্ন ৯ দশমিক ৬ শতাংশ মূল্যস্ফীতির চিত্র দেখিয়েছে বাংলাদেশ। রিপোর্টে দেখানো হয়েছে ধান উৎপাদনে বাংলাদেশ ও চীন উপযুক্ত পরিবেশ পেয়ে থাকে দক্ষিণ এশীয়ায়। চীনে মূল্যস্ফীতি সহনীয় থাকলেও উল্টোপথে হাঁটছে বাংলাদেশ।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত