এপ্রিল-জুন প্রান্তিক
বেশিরভাগ ব্যাংকের মুনাফা বেড়েছে
প্রকাশ : ০৫ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
অর্থনৈতিক ক্ষেত্রের নানা বিরূপ অবস্থার মধ্যেও গত এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর বেশির ভাগের মুনাফা বেড়েছে। ব্যাংকগুলোর মুনাফার হার বেড়েছে গড়ে ২৩ শতাংশের বেশি। যদিও যেসব উৎপাদন ও মূল সেবা খাতধর্মী কোম্পানিগুলোকে অর্থায়ন করে মুনাফা করে ব্যাংকগুলো, গত কয়েকটি প্রান্তিকে সেই কোম্পানিগুলোর বেশির ভাগের মুনাফা কমেছে। জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, এ ধরনের দুই-তৃতীয়াংশ কোম্পানির মুনাফা কমেছে বা লোকসান করেছে।
গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ৩৬ ব্যাংক কোম্পানির মধ্যে দ্য সিটি ব্যাংক ছাড়া বাকি সব জুনে সমাপ্ত দ্বিতীয় প্রান্তিক ও অর্ধবার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ব্যাংকগুলোর প্রকাশিত অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২৪ ব্যাংকের মুনাফা গত বছরের তুলনায় বেড়েছে, কমেছে ৮টির এবং একটির মুনাফা অপরিবর্তিত। বরাবরের মতো আইসিবি ইসলামিক এবং ন্যাশনাল ব্যাংক লোকসানে।
মুনাফায় থাকা ২৪ ব্যাংক দ্বিতীয় প্রান্তিকে কর-পরবর্তী নিট ২ হাজার ৪৭৬ কোটি টাকা মুনাফা করেছে বলে জানিয়েছে। এসব ব্যাংকের নিট মুনাফা গত বছরের একই সময়ে ছিল ২ হাজার ৭৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ বছর ব্যবধানে ব্যাংকগুলোর দ্বিতীয় প্রান্তিকে নিট মুনাফা বেড়েছে ৪০০ কোটি টাকা বা প্রায় ২১ শতাংশ। লোকসানে থাকা আইসিবি ইসলামিক এবং ন্যাশনাল ব্যাংকের মোট লোকসান হয়েছে ১০৩ কোটি টাকা, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল প্রায় ১৫৪ কোটি টাকা।
ব্যাংকগুলোর অর্ধবার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় আরো দেখা গেছে, চলতি বছরে প্রথম ছয় মাসে মুনাফায় থাকা ৩৩ ব্যাংক নিট ৪ হাজার ৩১৩ কোটি টাকা মুনাফা করেছে, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৩ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা। এক্ষেত্রে মুনাফায় প্রবৃদ্ধি ১৭ শতাংশ।
গত বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের তুলনায় এ বছর একই সময়ে নিট মুনাফা বৃদ্ধির শীর্ষে আছে-এনআরবি, মিডল্যান্ড, ওয়ান, স্ট্যান্ডার্ড, এনআরবিসি, উত্তরা, পূবালী, মার্কেন্টাইল, প্রাইম এবং ব্র্যাক ব্যাংক। এসব ব্যাংকের নিট মুনাফা কমপক্ষে ৫০ শতাংশ বা তার বেশি হারে বেড়েছে। মুনাফায় ৩০ শতাংশের ওপর প্রবৃদ্ধির তথ্য দিয়েছে আল-আরাফাহ, গ্লোবাল ইসলামী, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল এবং ইস্টার্ন ব্যাংক।
গত এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে সর্বাধিক ১৯৬ কোটি টাকা কর-পরবর্তী মুনাফা করার তথ্য দিয়েছে পূবালী ব্যাংক, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ১০৯ কোটি টাকা। একইভাবে উত্তরা ব্যাংকের মুনাফা ৭১ কোটি থেকে ১৪৮ কোটি টাকা, প্রাইম ব্যাংকের মুনাফা ৯০ কোটি থেকে ১৪১ কোটি টাকা, ব্র্যাক ব্যাংকের মুনাফা ৮৪ কোটি থেকে ১২৬ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। এছাড়া ইস্টার্ন ব্যাংকের কর-পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে ১৭৬ কোটি টাকা, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ১৩৫ কোটি টাকা। এক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩০ শতাংশের বেশি।
সরকারি বিল-বন্ড ও শেয়ারবাজার থেকেও আয়ের বাইরে ব্যাংকগুলো মূলত উৎপাদন ও সেবাধর্মী কোম্পানিগুলোকে দেওয়া ঋণের বিপরীতে সুদ আয় এবং এলসি কমিশন থেকেও বড় আয় করে। গত জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে তালিকাভুক্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গিয়েছিল, সেগুলোর দুই-তৃতীয়াংশের নিট মুনাফা কমেছিল বা লোকসান করেছে।
যাদের অর্থায়ন করে ব্যাংক মুনাফা করে তাদের অনেকের ব্যবসা মন্দাদশায় থাকলেও ব্যাংকগুলোর মুনাফা কী করে বাড়ছে- এমন প্রশ্নে ইস্টার্ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী রেজা ইফতেখার বলেন, পরিবর্তীত পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলো নানা ধরনের উদ্ভাবন বা ব্যবসা কৌশল করে মুনাফা বাড়ানোর চেষ্টা করছে।
তবে মুনাফা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে মন্দ ঋণ বা বিনিয়োগের বিপরীতে আইন অনুযায়ী যে প্রভিশন করতে হয়, তার প্রকৃত হিসাব না করে মুনাফার হিসাব করায় তা নিট মুনাফা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বলে মনে করেন তিনি। তিনি বলেন, ব্যাংকগুলো গত জুন শেষে যে আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তা অনিরীক্ষিত। এক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর প্রকৃত প্রভিশন কতটা করতে হবে, তা জানে না।
আনুমানিক হিসাবে প্রভিশনিং করে নিট মুনাফা হিসেবে করে থাকে। কারও কারও প্রভিশন প্রকৃত যতটা করার দরকার ছিল, তার থেকে কম হয়। এতে আয়ের অঙ্কটা বেড়ে যায় এবং বেশি মুনাফা দেখাতে সহায়ক হয়। ইস্টার্ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরও জানান, এর বাইরে যেসব ব্যাংকের অতিরিক্ত তারল্য রয়েছে, তারা সরকারি বিল-বন্ডে বিনিয়োগ করে ভালো মুনাফা করেছে। কেউ কেউ আন্তঃব্যাংক ধার দিয়েও মুনাফা করেছে, যা ব্যাংকের সার্বিক মুনাফা বৃদ্ধি করেছে।
এছাড়া খরচ কমিয়েও মুনাফা বাড়ানো যায়। যেমন, ইস্টার্ন ব্যাংকের আগে যেখানে পরিচালন খরচ ছিল ৪৪-৪৫ শতাংশ, তা এ বছর ৩৯ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। নিট মুনাফায় এরও প্রভাব আছে।