সংকটে অর্থনীতি, উচ্চ মূল্যস্ফীতির শঙ্কা
প্রকাশ : ০৬ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
চলমান পরিস্থিতির মধ্যে দেশের অর্থনীতির প্রায় সব সূচক খারাপ। মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়, রপ্তানি আয় ও শুল্ক-কর কোনো সূচকে স্বস্তি নেই। সার্বিক অর্থনীতি ধীরে ধীরে সংকটে পড়ছে। গত তিন সপ্তাহ ধরে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা, সংঘাত, প্রাণহানিতে অর্থনীতিকে আরো চাপের মধ্যে ফেলেছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, চলমান সহিংসতা বন্ধ না হলে দেশের অর্থনীতি আরো গভীর সংকটের মধ্যে পড়ে যেতে পারে। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, নিরাপত্তা ও রাজনীতি ঠিক না হলে দেশের অর্থনীতিও ঠিক হবে না। চলমান পরিস্থিতিতে অর্থনীতি বাঁচাতে রাজনৈতিক সমাধান অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে। চলমান রাজনৈতিক সংকটে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি আরো বৃদ্ধির আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন দেশের অর্থনীতিবিদরা। খাদ্যপণ্যের সরবরাহব্যবস্থা বিঘ্নিত হওয়ায় বাজারে জিনিসপত্রের দাম আরো বাড়তে পারে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, গত ১২ মাসের মধ্যে ৭ মাসই খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের ওপরে ছিল। গত বছরের আগস্ট মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশে উঠেছিল, যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সর্বোচ্চ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ, যা অর্থবছরওয়ারি হিসাবে অন্তত এক যুগের মধ্যে সর্বোচ্চ। পুরো বছরে কোনো মাসেই সার্বিক মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের নিচে নামেনি।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, গত কয়েক সপ্তাহের অনিশ্চয়তায় অর্থনীতির স্বাভাবিক গতি ব্যাপকভাবে ব্যাহত হয়েছে। পণ্য পরিবহন প্রায় বন্ধই ছিল। শ্রমজীবী মানুষ বেকার হয়ে পড়েছেন, তাদের রোজগার বন্ধ হয়ে গেছে।
বর্তমানে অর্থনীতির অন্যতম বড় সংকট হলো ক্ষয়িষ্ণু রিজার্ভ। গত এক বছরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বা মজুত প্রায় ১ হাজার কোটি ডলারের মতো কমেছে। মার্কিন ডলারের জোগান বাড়িয়ে রিজার্ভের পতন ঠেকাতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) থেকে ঋণসহায়তা নিয়েছে সরকার। তাতে অবশ্য রিজার্ভ তেমন বাড়েনি। প্রবাসী আয় আর রপ্তানি আয়েও বড় কোনো অগ্রগতি নেই।
আইএমএফের গণনাপদ্ধতি অনুসারে গত জুলাই মাস শেষে রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৪৮ কোটি ডলার, যা ১ বছর আগে ৩ হাজার কোটি ডলারের বেশি ছিল।