মোংলা বন্দর জেটিতে রক্ষিত ১০০টির বেশি আমদানি করা বিভিন্ন মডেলের রিকন্ডিশনড গাড়ি ও অন্য মালপত্র নিলামে তুলেছে মোংলা কাস্টম হাউস। বন্দর দিয়ে আমদানি করা গাড়িগুলো দীর্ঘদিন ধরে খালাস করেননি আমদানিকারকরা। সম্প্রতি মোংলা কাস্টম হাউসের ওয়েবসাইটে নিলামযোগ্য গাড়ি ও অন্য মালপত্রের চূড়ান্ত ক্যাটালগ প্রকাশ করা হয়েছে।১৮ থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত দরপত্র কেনার সময় নির্ধারিত ছিল।
তবে সারা দেশে ইন্টারনেট সংযোগে ত্রুটি থাকায় এবং অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে পুনরায় সময় বাড়ানো হবে। শিগগির এ বিষয়ে আবারো নিলামের সময়সীমা ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছে কাস্টমস সূত্র। নিলামে তোলা পণ্যের মধ্যে রয়েছে টয়োটা, করোলা, নিশান, লেক্সাস, হাইছি, নোয়াসহ বিভিন্ন ব্যান্ডের গাড়ি। নিলামে ওঠা গাড়ির মধ্যে ১৯৯৩, ৯৬, ৯৭, ৯৮, ৯৯, ২০০৬, ২০০৭, ২০০৮, ২০০৯, ২০১১, ২০১৩, ২০১৭, ২০১৮, ২০১৯, ২০২০, ২০২১ ও ২০২২ সালের বিভিন্ন মডেলের গাড়ি রয়েছে।
মোংলা কাস্টম হাউসের ওয়েবসাইটে নিলামের জন্য গাড়ি ও অন্যান্য পণ্যের চূড়ান্ত ক্যাটালগ প্রকাশ ছাড়াও কিছু গ্যাস সিলিন্ডার এবং অন্যান্য পণ্যও নিলাম করা হবে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মোংলা বন্দর দিয়ে আমদানি করা এসব গাড়ি ৩০ দিনের মধ্যে ছাড় করানোর নিয়ম থাকলেও সংশ্লিষ্ট আমদানিকারকরা তা করেননি। এরপর আমদানিকারকদের আরো ১০ কার্যদিবস সময় দেয়ার পরও গাড়ি ছাড় না করায় নিয়মানুযায়ী পর্যায়ক্রমে নিলামে ওঠানো হচ্ছে এসব গাড়ি।
গাড়ির নিলামে অনলাইন থেকে বিড করা যাবে। এছাড়া নিলামে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সর্বোচ্চ দরদাতার তালিকা প্রকাশের পর গাড়িগুলো বিক্রি হবে। জানা গেছে, মোংলা কাস্টমের রাজস্ব আয়ের শতকরা ৫২ শতাংশ আসে আমদানি করা গাড়ির শুল্ক থেকে। দীর্ঘদিন আমদানি করা গাড়ি বন্দরে পড়ে থাকলে অন্যান্য পণ্য রাখায় সমস্যা তৈরি হয়।
নিলামপ্রক্রিয়া চালু রাখলে গাড়ি বা অন্যান্য পণ্য রাখতে ব্যবসায়ীদের সুবিধার পাশাপাশি সঠিক সময়ে সরকারের রাজস্ব আদায় সম্ভব হয়।
তথ্য বলছে, জাপান থেকে মোংলা বন্দর দিয়ে গাড়ি আমদানি শুরু হয় ২০০৯ সালের ৩ জুন। প্রথম চালানে এ বন্দর দিয়ে ২৫৫টি গাড়ি আমদানি করা হয়। সেই থেকে এ পর্যন্ত মোংলা বন্দর দিয়ে এক লাখ ৮৪ হাজার ৮৯৯টি গাড়ি আমদানি করা হয়, যা মোট আমদানি করা গাড়ির শতকরা ৬০ ভাগ।
নিলামে কেন ওঠে : সাধারণত শুল্ক ফাঁকি, মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে পণ্য আমদানি, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শুল্ক পরিশোধ না করা, সময়মতো ছাড় না করার কারণে পণ্যগুলো নিজেদের অধীন নেয় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। পরে তা নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করা হয়। পণ্যের আমদানি মূল্যের ওপর ভিত্তি করে সংরক্ষিত মূল্য নির্ধারণ করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। কাস্টমসের নিয়মানুযায়ী, সংরক্ষিত মূল্যের ন্যূনতম ৬০ শতাংশ দামে বিক্রি করতে হয়।
গাড়ির যন্ত্রাংশ চুরি : চট্টগ্রাম, মোংলাসহ দেশের বিভিন্ন কাস্টম হাউসে নিলামকৃত গাড়ির ইঞ্জিনসহ মূল্যবান যন্ত্রাংশ খোয়া যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। নিলামে অংশ নেয়া অনেক ব্যবসায়ী এ বিষয়ে এনবিআরে লিখিত অভিযোগ দিলেও কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। তবে ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন, নিলামে অংশ নিয়ে শুল্ক-কর পরিশোধ করে গাড়ি কিনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তারা। এ বিষয়ে জানতে একাধিক কাস্টম হাউসে যোগাযোগ করলেও কাস্টমস কর্মকর্তারা বলছেন, অভিযোগ ভিত্তিহীন।
পণ্য অনুযায়ী দাম বেশি : পণ্যের গুণগত মান অনুযায়ী সংরক্ষিত মূল্য অনেক বেশি থাকে। এ কারণে ক্রেতারা আগ্রহী থাকেন না। কারণ ব্যবসায়ীরা এসব পণ্য ব্যবহারের জন্য কেনেন না। তারা বিক্রির জন্য কেনেন। কেউ লোকসানের উদ্দেশে কেনেন না। কাস্টমসের নিয়মণ্ডকানুনের কারণে অনেকবার নিলামে তুলেও পণ্য বিক্রি হয় না। এরপর দীর্ঘদিন শেডে পড়ে থাকায় গুণগত মান আরো খারাপ হয়।
বিক্রি না হলেও দাম কমায় না নিলাম কমিটি : নিলামে অংশ নেয়া ব্যবসায়ীরা বলছেন, নিয়মানুযায়ী প্রথম দরপত্রের যদি কোনো পণ্যের দাম ৬০ শতাংশ না ওঠে তবে তা অনুমোদন হবে না। দ্বিতীয় নিলামে যদি প্রথম দরপত্রের চেয়ে বেশি দাম পাওয়া যায় তবে বিক্রির সুযোগ রয়েছে। এরপর তৃতীয়, চতুর্থ বা পর্যায়ক্রমে পরের দরপত্রে দাম কমানোর সুযোগ রয়েছে। কিন্তু এসব নিয়ম মানা হয় না। কারণ বিধান অনুযায়ী, এসব সিদ্ধান্ত গ্রহণ বা মূল্য নির্ধারণ করার এখতিয়ার দেয়া হয়েছে নিলাম কমিটিকে। এই বিধানকে ব্যবহার করে তারা পণ্যের দাম কমায় না। তাই পণ্যগুলো বারবার নিলামে তুলেও ক্রেতা পাওয়া যায় না।
নিলামে তুলেও বিক্রি হয় না, সরকারি অর্থের গচ্ছা : বারবার নিলামে তুলেও অনেক পণ্য বিক্রি করতে পারে না কাস্টম হাউস। পণ্যের গুণগত মানের চেয়ে তুলনামূলক দাম বেশি নির্ধারণ করা, কাস্টমসের নিয়মানুযায়ী নির্ধারিত দামে বিক্রিসহ নানা কারণে এসব পণ্য বিক্রি করতে পারছে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। ফলে বছরের পর বছর সমুদ্রবন্দরের শেডগুলোর জায়গা দখল হয়ে আছে। পাশাপাশি পণ্যগুলো দীর্ঘদিন পড়ে থেকে অকেজো বা বিকল হয়ে যাচ্ছে। বারবার নিলাম আয়োজন করার কারণে গচ্ছা যাচ্ছে সরকারি অর্থ।