চট্টগ্রাম বন্দরে মারাত্মকভাবে বেড়েছে কনটেইনার জট
প্রকাশ : ০৮ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
তামীম রহমান, চট্টগ্রাম
বাংলাদেশের ইতিহাসে সম্মরণকালের সেরা অভ্যুত্থানের দেখেছে দেশবাসীসহ সারা বিশ্ব। এরই প্রভাবে দেশের প্রতিটি জায়গায় স্থবিরতা বিরাজ করছে। চট্টগ্রাম বন্দরেও এর প্রভাব পড়েছে খুব ভালভাবে। চট্টগ্রাম বন্দরে সৃষ্টি হয়েছে কন্টেইনার জট।
বন্দর কতৃপক্ষ জানায়, এখন পর্যন্ত প্রায় ৪৪ হাজার (২০ ফুট দৈর্ঘ্য) কন্টেইনার জট সৃষ্টি হয়েছে। যা এযাবৎকালের সর্বোচ্চ রেকর্ড। ইন্টারনেট বন্ধ ও কারফিউ থাকার কারণে কাস্টমসের পণ্য খালাসের কাজ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। ফলে কন্টেইনার জট মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পায়। তবে আশার কথা হচ্ছে, সৃষ্ট এ কন্টেইনার জট নিরসনে দিনরাত এক হয়ে কাজ করছে বন্দর কতৃপক্ষ। সাম্প্রতিক অস্থিরতার কারনে বন্দরের কাজ থমকে যাওয়ায় এমন অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। বন্দর সূত্র জানায়, দেশের চলমান অস্থিরতায় চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আমদানি পণ্য ডেলিভারি (সরবরাহ) কমেছে। ব্যাহত হচ্ছে পণ্য রপ্তানিও।
তবে বন্দরের ভেতরে জাহাজে পণ্য ওঠাণ্ডনামা চলছে। ডেলিভারি কমায় বন্দরে তৈরি হয়েছে কনটেইনার জট। বন্দরের ভেতরে আমদানি কনটেইনারের সংখ্যা এরই মধ্যে ৪৪ হাজার টিইইউএস (২০ ফুট দৈর্ঘ্য) ছাড়িয়ে গেছে। রপ্তানি নেমে এসেছে এক-চতুর্থাংশে। ব্যবসায়ীরা জানান, বন্দরে পণ্য আটকা পড়লে সরবরাহ ব্যবস্থা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আমদানি খরচও বেড়ে যায়। কারণ বন্দরে চার দিনের বেশি সময় পণ্য পড়ে থাকলে দিতে হয় ডেমারেজ চার্জ।
কনটেইনারে শিল্পের কাঁচামাল, ইলেকট্রনিক্স পণ্যসহ বিভিন্ন ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি হয়। এর আগে গত ১৮ জুলাই থেকে দেশব্যাপী ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় টানা পাঁচ দিন আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছিল। ওই সময় কাস্টমসের সার্ভার বন্ধের জেরে আমদানি-রপ্তানি পণ্যের শুল্কায়ন সম্ভব হয়নি। কাস্টমসের ছাড়পত্র না পাওয়ায় বন্দর থেকে পণ্য বের করা যায়নি। এর প্রভাবে তৈরি হয়েছিল কনটেইনার জট। সেই ধকল সামলাতে বন্দর যখন হিমশিম খাচ্ছিল, ঠিক তখন অর্থাৎ গত রোববার থেকে ফের পণ্য ডেলিভারি কমতে শুরু করে। ওইদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘাত-সহিংসতার মুখে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পণ্যবাহী গাড়ি চলাচল কমে যায়। একই সঙ্গে বন্দর থেকে কনটেইনার ডেলিভারিও কমতে থাকে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে প্রতিদিন তিন-সাড়ে তিন হাজার কনটেইনার ডেলিভারি হয়।
গত সোমবার সারা দেশে সরকারি ছুটি এবং ঢাকা লংমার্চ কর্মসূচি থাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে গাড়ি চলাচল কার্যত বন্ধ ছিল। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক জানান, গত মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় ৩২৯ টিইইউএস কনটেইনার ডেলিভারি হয়েছে। এদিন তিন হাজার ৬৭৪ টিইইউএস জাহাজে উঠানো-নামানো হয়। বন্দরের ইয়ার্ডে আছে ৪৪ হাজার ১১৭ টিইইউএস কনটেইনার। বন্দর সূত্র জানায়, স্বাভাবিক অবস্থায় ইয়ার্ডে ৩০ থেকে ৩২ হাজার কনটেইনার থাকে। এখনো ধারণক্ষমতা ছাড়িয়ে না গেলেও জট তৈরি হয়েছে। বন্দরের কনটেইনার ধারণক্ষমতা ৫৩ হাজার। তবে স্বাভাবিক হ্যান্ডলিংয়ের জন্য ২০ শতাংশ জায়গা ফাঁকা রাখতে হয়।
এদিকে পণ্য রপ্তানিও কমেছে। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে রপ্তানি হওয়া পণ্যের প্রায় ৯৫ শতাংশ ১৯টি বেসকারি ডিপোতে নিয়ে রাখার পর কনটেইনারজাত করা হয়। এরপর শুল্কায়ন শেষে জাহাজীকরণের জন্য পাঠানো হয় বন্দরে। বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপোস অ্যাসোসিয়েশন (বিকডা) সচিব রুহুল আমিন শিকদার জানান, গত সোমবার ৪০০-৫০০ রপ্তানি পণ্যবোঝাই কনটেইনার ডিপো থেকে বন্দরে জাহাজীকরণের জন্য পাঠানো হয়েছে। যা স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় মাত্র ২৫ শতাংশ।
তিনি বলেন, গত সোমবার রাতে ডিপোগুলোতে কাজ হয়নি। গত মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত থমথমে অবস্থা ছিল। বুকিং দেয়া আছে, এমন পণ্য আমরা বন্দরে পাঠানোর চেষ্টা করছি। যাতে জাহাজ ধরা যায়।
শিপমেন্ট যেন বাতিল না হয়। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ সূত্র জানায়, গতকাল পণ্যের শুল্কায়ন হয়েছে তবে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে আমদানি-রপ্তানিকারকের প্রতিনিধি বা এজেন্টদের ভিড় কম ছিল। গতকাল বুধবার কাস্টমস হাউজে কর্মব্যস্ততা লক্ষ্য করা যায়। এদিকে, গত সোমবার বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিবহন বিভাগ থেকে এ বিষয়ে বিজ্ঞপ্তিতে জানান হয়, তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ সদস্যদের আমদানি করা কন্টেইনার কেবলমাত্র ৪ মের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ডেলিভারি গ্রহণ করা হলে সেগুলোর বিপরীতে আদায়যোগ্য স্টোর ভাড়া শতভাগ মওকুফ করা হবে।
বন্দর কর্মকর্তাদের মতে, বন্দরে পড়ে থাকা কন্টেইনারের অন্তত ৪০ ভাগ তৈরি পোশাক কারখানাগুলোর আমদানি করা। যাতে রয়েছে পোশাক কারখানার কাঁচামাল ও আনুষঙ্গিক সরঞ্জাম। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত মঙ্গলবার পর্যন্ত বন্দর চত্বরে জমে থাকা আমদানি পণ্যভর্তি কন্টেইনারের সংখ্যা ছিল ৪৩ হাজার ৭৩৪ একক (টিইইউস), যা মোট ধারণক্ষমতার চাইতে ছয় হাজার এককেরও বেশি। প্রসঙ্গত, করোনাভাইরাস সংক্রমণ মোকাবিলায় ছুটির কারণে দেশব্যাপী পরিবহন সংকট, পণ্য ছাড়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সীমিত কার্যক্রমের ফলে পণ্য ডেলিভারি নিতে নানা সমস্যার কথা বিবেচনায় নিয়ে আমদানিকারকদের এ ছাড় দিয়েছিল কর্তৃপক্ষ।