দেশের আর্থিক খাত পুনর্গঠনের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে। এর অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকে বড় ধরনের প্রশাসনিক রদবদল করা হয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরে একই বিভাগে দায়িত্ব পালন করা কর্মকর্তাদের নতুন দপ্তরে বদলি করা হয়েছে, যার মধ্যে ২২ জন অতিরিক্ত পরিচালক এবং ৬৩ জন যুগ্ম পরিচালক রয়েছেন। মোট ৮৫ জন কর্মকর্তাকে একযোগে বদলি করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের হিউম্যান রিসোর্সেস ডিপার্টমেন্ট-১ থেকে দুটি আলাদা আলাদা চিঠির মাধ্যমে এই বদলির আদেশ দেয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বদলি নীতিমালা মানা হচ্ছিল না। একই কর্মকর্তা বছরের পর বছর একই বিভাগে দায়িত্ব পালন করছিলেন এবং কেউ কেউ একই সঙ্গে একাধিক বিভাগের দায়িত্বও পালন করছিলেন। তবে নতুন গভর্নর দায়িত্ব গ্রহণের পর, এই অনিয়মের অবসান ঘটানোর উদ্যোগ নেয়া হয়। বিশেষত, যারা তিন বছরের বেশি সময় ধরে একই বিভাগে দায়িত্ব পালন করছিলেন, তাদের অন্য বিভাগে বদলি করা হয়েছে। ধারাবাহিকভাবে আরো বদলি প্রক্রিয়া চলবে, যা দেশের আর্থিক খাতকে ঢেলে সাজানোর অংশ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বদলির তালিকায় উল্লেখযোগ্য কিছু কর্মকর্তার মধ্যে রয়েছেন, ফিন্যান্সিয়াল সেক্টর সাপোর্ট অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যানিং ডিপার্টমেন্টের ফিরোজ মাহমুদ ইসলামকে হিউম্যান রিসোর্সেস ডিপার্টমেন্ট-১ এ বদলি করা হয়েছে। ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগের (ডিভিশন-২) রাশিদা খানমকে ফরেক্স রিজার্ভ অ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্টে (ডিভিশন-১) পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া, ফরেক্স রিজার্ভ অ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্টের (ডিভিশন-১) কাজী শৈবাল সিদ্দিকীকে ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ (ডিভিশন-২) এ বদলি করা হয়েছে। বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) সৈয়দ কামরুল ইসলাম, জোবায়দা আফরোজ এবং মো. মাসুদ রানাকে যথাক্রমে ডেট ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্ট, সাসটেইনেবল ফিন্যান্স ডিপার্টমেন্ট এবং বাংলাদেশ ব্যাংক ট্রেনিং একাডেমিতে বদলি করা হয়েছে। এ ছাড়া, ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগ-২ এর মোহাম্মদ আরফান আলীকে অ্যাকাউন্ট অ্যান্ড বাজেটিং ডিপার্টমেন্টে (ডিভিশন-১), কমন সার্ভিসেস ডিপার্টমেন্ট-১ এর মো. তারিকুল ইসলামকে ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগ-৭, এবং হিউম্যান রিসোর্সেস ডিপার্টমেন্ট-২ এর হাসনে আরা বেগমকে সচিব বিভাগে বদলি করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের বদলি নীতিমালা অনুযায়ী, ২০০০ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারিতে পরিচালনা পর্ষদের ২১২তম সভায় পরিদর্শন বিভাগে পাঁচ বছর এবং অন্যান্য বিভাগে তিন বছর পর বদলির নীতিমালা অনুমোদিত হয়। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে এই নীতিমালা কার্যকর ছিল না। নতুন গভর্নরের অধীনে এই নীতিমালার পুনরায় কার্যকর করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এই বদলির মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কার্যক্রমে নতুন গতি আনা এবং প্রতিষ্ঠানটির অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা পুনঃস্থাপন করা হচ্ছে। সরকারের আর্থিক খাত পুনর্গঠনের লক্ষ্যে এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, যা দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।