টানা পাঁচ কার্যদিবস পতনের পর অবশেষে সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস গতকাল বৃহস্পতিবার দেশের শেয়ারবাজারে মূল্যসূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা গেছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে লেনদেন। তবে দাম বাড়ার তালিকায় যে কয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট রয়েছে তার বেশি রয়েছে দাম কমার তালিকায়।
প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) দাম বাড়ার তুলনায় দাম কমার তালিকায় প্রায় দ্বিগুণ প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এরপরও সবকটি মূল্যসূচকের বড় উত্থান হয়েছে। সূচকের এই বড় উত্থানে সব থেকে বেশি ভূমিকা রেখেছে ব্যাংক। অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) দাম বাড়ার থেকে দাম কমার তালিকায় বেশি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এরপরও বাজারটিতে মূল্যসূচকের বড় উত্থান হয়েছে। বাজারটিতে সূচক বাড়তে মূল ভূমিকা পালন করেছে ব্যাংক কোম্পানিগুলো। এর আগে গত ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতন হলে টানা চার কার্যদিবস শেয়ারবাজারে ঊল্লম্ফন হয়। তবে নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর আট কার্যদিবস লেনদেন অংশ নেয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমে। আর শেষ পাঁচ কার্যদিবস টানা সূচক কমে। ফলে শেয়ারবাজারে পুঁজি হারা বিনিয়োগকারীদের হাহাকার বাড়তে থাকে। এ পরিস্থিতি বৃহস্পতিবার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমার মাধ্যমে। ফলে লেনদেন শুরুতে সূচক ঋণাত্মক হয়ে পড়ে। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম কমায় এক পর্যায়ে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ৫২ পয়েন্ট কমে যায়। এতে আবারও পতনের শঙ্কা পেয়ে বসে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে।
এ পরিস্থিতিতে ঝলক দেখাতে থাকে ব্যাংক কোম্পানিগুলো। দাম কমার তালিকা থেকে বেরিয়ে একের পর এক ব্যাংক দাম বাড়ার ক্ষেত্রে দাপট দেখাতে থাকে। ফলে পতন থেকে বেরিয়ে আসে সূচক। লেনদেনের শেষদিকে ব্যাংকের শেয়ার দাম বাড়ার প্রবণতা আরো বেড়ে যায়। ফলে সূচকের বড় উত্থান দিয়েই দিনের লেনদেন শেষ হয়। দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে ১৫১টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের স্থান হয়েছে দাম বাড়ার তালিকায়। বিপরীতে দাম কমেছে ২১০টি প্রতিষ্ঠানের। আর ৩৩টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। অন্যদিকে তালিকাভুক্ত ৩৬টি ব্যাংকের মধ্যে ৩৫টির শেয়ার দাম বেড়েছে এবং দাম কমেছে মাত্র একটির।
৬টি ব্যাংকের শেয়ার দাম একদিনে যতটা বাড়া সম্ভব ততোটাই বেড়েছে। দাম বাড়ার তালিকায় ব্যাংকের এমন দাপটের দিনে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৯২ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ৬৯৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৪২ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ৪৭ পয়েন্টে উঠে এসেছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১৭ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ২১৯ পয়েন্টে অবস্থান করছে। মূল্যসূচকের বড় উত্থানের পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও বেড়েছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৭৭৮ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৫৩৬ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। সে হিসেবে লেনদেন বেড়েছে ২৪১ কোটি ৭২ লাখ টাকা। এই লেনদেনে সব থেকে বেশি অবদান রেখেছে গ্রামীণফোনের শেয়ার। কোম্পানিটির ৮৪ কোটি ৬৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ব্র্যাংক ব্যাংকের ৩৬ কোটি ৯১ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ২৮ কোটি ৫৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ। এ ছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- জেএমআই হসপিটাল রিকুইজিট অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিং, রবি, ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো, ইউসিবি ব্যাংক, ইউনিলিভার কনজুমার কেয়ার, আইএফআইসি ব্যাংক এবং সিটি ব্যাংক। অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ১৭৫ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেয়া ১৯৫টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৭০টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১১৩টির এবং ১২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ১৩ কোটি ২২ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ১৩ কোটি ১৬ লাখ টাকা।