অর্থনীতিতে চার চ্যালেঞ্জের সামনে ড. ইউনূস সরকার

প্রকাশ : ২৩ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিনিধি

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর একে একে দৃশ্যমান হচ্ছে দেশের অর্থনীতির প্রকৃত চিত্র। নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই চলছে রাষ্ট্র সংস্কারের কাজ। এতে ড. ইউনূস সরকারের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে অর্থনীতির দুর্বলতা। এর মধ্যে প্রধানত চারটি খাতকে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে ছাত্র-জনতার এই সরকার। দেশের বিদ্যমান অর্থনৈতিক অবস্থার তথ্য-চিত্র সমৃদ্ধ একটি শ্বেতপত্র প্রস্তুত ও অর্থনীতিকে সুসংহত করতে সামনে যেসব বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে তা বিবৃতি দিয়ে প্রকাশ করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। ড. ইউনূস সরকারের সামনে চার চ্যালেঞ্জ- ১. অর্থনীতি পুনরায় সচল করার পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে যেসব সমস্যা রয়েছে সেগুলো নিরসনে কাঠামোগত সংস্কার। ২. নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি ও দুর্নীতি প্রতিরোধ। ৩. ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা। কর ও শুল্ক নীতির সংস্কার। ৪. বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ। শেখ হাসিনা সরকার ১৮ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকার ঋণ রেখে গেছে। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ঋণের যে স্থিতি ছিল তা বাংলাদেশের তিনটি বাজেটের মোট অর্থ বরাদ্দের সমান। অন্তর্র্বর্তী সরকার বলছে, গত প্রায় দেড় দশক ধরে বাংলাদেশের অর্থনীতি বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জে নিপতিত রয়েছে। বিগত সরকারের চরম অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি, অর্থ-পাচার এবং অপরিণামদর্শী প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে দেশি-বিদেশি ঋণ গ্রহণ কার্যক্রমের কারণে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক হয়ে পড়ে। এ ছাড়া পতনকালে শেখ হাসিনা সরকার ১৮ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকার ঋণ রেখে গেছে। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ঋণের যে স্থিতি ছিল তা বাংলাদেশের তিনটি বাজেটের মোট অর্থ বরাদ্দের সমান। সামগ্রিকভাবে দুর্নীতি, অর্থ-পাচারের অবাধ সুযোগ, বাজার সিন্ডিকেটের ফলে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা অসহনীয় হয়ে পড়ে। ড. ইউনূস সরকার বলছে, বিগত সরকার বাজেট ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে কর আদায় করে রাজস্ব বৃদ্ধির চেষ্টা না করে দেশি-বিদেশি ঋণের প্রতি ঝুঁকেছিল। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় জিডিপির তুলনায় কর সংগ্রহ ১৪ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও গত ছয়-সাত বছরে এ অনুপাত ১১ শতাংশ থেকে উল্টো ৮ শতাংশে নেমে এসেছে। অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনার এটি একটি দিক মাত্র। সামগ্রিকভাবে দুর্নীতি, অর্থ-পাচারের অবাধ সুযোগ, বাজার সিন্ডিকেটের ফলে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা অসহনীয় হয়ে পড়ে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যের বরাত দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার জানায়, গত জুলাই মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল প্রায় ১২ শতাংশ। খাদ্য মূল্যস্ফীতি আরো বেশি, তা ১৪ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। বিগত সরকারের শেষ সময়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি অনেকটাই মুখ থুবড়ে পড়েছে। বিগত সরকারের সার্বিক অব্যবস্থাপনার ফলে সৃষ্ট অর্থনীতির নজিরবিহীন নাজুক পরিস্থিতিতে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করতে হয়েছে। প্রস্তাবিত শ্বেতপত্রটি প্রস্তুতের জন্য দেশের বরেণ্য ব্যক্তিত্ব ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা যেতে পারে। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে পরামর্শ করে তিনি কমিটির প্রয়োজনীয় সংখ্যক সদস্যকে মনোনীত করতে পারেন। জানানো হয়, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণকালে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার একটি সামগ্রিক চিত্র শুরুতেই সরকারের হাতে থাকা প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে দেশের বিদ্যমান অর্থনৈতিক অবস্থার তথ্য-চিত্র সমৃদ্ধ একটি শ্বেতপত্র প্রস্তুতের ধারণা দেয়া হয়েছে। ধারণাপত্রে বলা হয়েছ, প্রস্তাবিত শ্বেতপত্রে দেশের বিদ্যমান অর্থনীতির সামগ্রিক চিত্র থাকার পাশাপাশি অর্থনৈতিক বিষয়ে সরকারের কৌশলগত পদক্ষেপ গ্রহণ, এসডিজি বাস্তবায়ন এবং এলডিসি হতে উত্তরণে করণীয় বিষয়ে প্রতিফলন থাকবে। শ্বেতপত্রটি প্রণয়নকালে বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও মতবিনিময় করা হবে বলেও জানানো হয়েছে। প্রস্তাবিত শ্বেতপত্রে যে বিষয়গুলো নিয়ে আলোকপাত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। পাবলিক ফাইন্যান্স ম্যানেজমেন্ট, মুদ্রাস্ফীতি এবং খাদ্য ব্যবস্থাপনা, আমদানি-রপ্তানিতে বাহ্যিক ভারসাম্য, জ্বালানি এবং বিদ্যুতের চাহিদা, সরবরাহ, মূল্য নির্ধারণ, খরচ এবং ক্রয় চুক্তি, বেসরকারি বিনিয়োগ, দেশে-বিদেশে কর্মসংস্থান। আরো জানানো হয়েছে, প্রস্তাবিত শ্বেতপত্রটি প্রস্তুতের জন্য দেশের বরেণ্য ব্যক্তিত্ব ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা যেতে পারে। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে পরামর্শ করে তিনি কমিটির প্রয়োজনীয় সংখ্যক সদস্যকে মনোনীত করতে পারেন। বাংলাদেশের বিদ্যমান অর্থনৈতিক অবস্থার শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি নামে প্রস্তাবিত কমিটি আগামী ৯০ দিনের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে হস্তান্তর করবেন।