নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ ব্যবস্থা, কাঁচামাল আমদানিতে সুবিধা ও সরকার নির্ধারিত ডলারের দামে ব্যাংকে এলসি খোলার ব্যবস্থা করার পরামর্শ দিয়েছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা। একই সঙ্গে সাপ্লাই চেইন ঠিক করা, চোরা কারবার বন্ধ করা, গ্যাস সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখার কথাও জানান ব্যবসায়ীরা। গত বুধবার দুপুরে ভোজ্যতেল, চিনি ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন, বাংলাদেশ ব্যাংক, শিল্প, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সরকারি ও বেসরকারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের মতবিনিময় সভায় এ কথা জানান বসুন্ধরা গ্রুপের ফুড বিভাগের বিক্রয় ও বিপণন বিভাগের প্রধান মো. রেদোয়ানুর রহমান। এতে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারপার্সন প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী। এ ছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মো. বিন ইয়ামিন মোল্লার নেতৃত্বে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সভায় অংশগ্রহণ করেন। সভায় বসুন্ধরা, মেঘনা, সিটি, এস আলম, দেশবন্ধু, এডিবল অয়েল, টি কে গ্রুপের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। বিশ্ববাজারে সয়াবিন তেলের দাম ৫২ শতাংশ কমেছে কিন্তু আমাদের এখানে কেন কমেনি? দাম কমানো হবে কিনা? শিক্ষার্থীদের এমন প্রশ্নের জবাবে বসুন্ধরা গ্রুপের ফুড বিভাগের বিক্রয় ও বিপণন বিভাগের প্রধান রেদোয়ানুর রহমান বলেন, আমি বলি কোন জায়গায় কাজ করার সুযোগ আছে। আমি আমাদের কোম্পানির তথ্য সব কিছু নিয়ে এসেছি। এখানে তা প্রকাশ করতে পারি। এখানে আমি কিছু প্রস্তাব দিতে পারি। আজ থেকে দুই বছর আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে বলেছিলাম, যতদিন ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ চলবে আমরা কোনো লাভ ছাড়া পণ্য (সয়াবিন তেল) বিক্রি করতে পারি। এতে এক টাকাও প্রফিট করব না। আমাদের কারখানা ৪ মাস বন্ধ ছিল। আমরা তখন সরকারকে বলেছিলাম, আপনারা আমাদের ক্রুড অয়েল দেন। যেহেতু ডলার সংকটের কারণে আমদানি করতে পারছি না। কারণ আমাদের কারখানায় ৫-৭ হাজার লোক কাজ করে, তারা বেকার হয়ে যাবে। রেদোয়ানুর রহমান বলেন, সাপ্লাই চেইন ঠিক করতে হবে। ক্রুড ওয়েল ব্রাজিল থেকে আনতে ৪৫ থেকে ৫৫ দিন লাগে। তেলবীজ এনে সেটা বাজারজাত করতে ৬০ দিনের ওপরে সময় লাগে। এ সময় কমিয়ে আনতে হবে। তিনি বলেন, সরকারের বেঁধে দেয়া দামে আমরা ডলার কিনতে পারি না। ডলারের দাম বাংলাদেশ ব্যাংকের দাম অনুসারে পাওয়া যায় না। সব ব্যাংকেই ডলারের দাম বেশি রাখে। এই খরচটা গ্যাপ থেকে যায়। এই জায়গা ঠিক করতে হবে। ২০২২ সালের মার্চ পর্যন্ত ডলারের দাম ছিল ৮৭ টাকার কম। এরপর থেকে ডলারের দাম বেড়ে হয়েছিল ১২২ টাকা। সভায় সিটি গ্রুপের উপদেষ্টা অমিতাভ চক্রবর্তী বলেন, ট্যারিফ কমিশন থেকে খোলা চিনির দাম ১৩০ টাকা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই চিনি এখন বিক্রি হচ্ছে ১২৫ টাকা। তার মানে কমিশনের চেয়ে ৫ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে। আবার সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে ৬ টাকা কমে সয়াবিন তেল ও পাম ওয়েল বিক্রি করা হচ্ছে। ভারতে ৭৮ টাকা কেজি চিনি বিক্রি হয় কীভাবে, ছাত্রদের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ভারত চিনির ৫৭ শতাংশ কাঁচামাল আমদানি করে, বাকিটা তারা নিজেরা উৎপাদন করে। ওরা প্রতিকেজি চিনিতে সব ধরনের ভ্যাট-ট্যাক্সসহ দেয় ৩ টাকা ৭২ পয়সা। আর আমদের দিতে হয় ৪০-৪২ টাকা। এ অবস্থায় আমাদের চিনির দাম বেড়ে যায়। সিটি গ্রুপের এই প্রতিনিধি বলেন, সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপের লোকসান হয়েছে ভারত থেকে চোরাই পথে চিনি আসার কারণে। এখন ভারত থেকে ৪০ শতাংশ চিনি চোরাকারবারের মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। এটা বন্ধ করতে হবে। অন্যান্য কোম্পানির প্রতিনিধিরা বলেন, সরকারের বেঁধে দেয়া দামে আমরা ডলার কিনতে পারি না। ডলারের দাম বাংলাদেশ ব্যাংকের দাম অনুসারে পাওয়া যায় না। সব ব্যাংকেই ডলারের দাম বেশি রাখে। এই খরচটা গ্যাপ থেকে যায়। এই জায়গা ঠিক করতে হবে। সাপ্লাই চেইন ঠিক করতে হবে। চোরাকারবার বন্ধ করতে হবে। এগুলো করা না গেলে দেশে ব্যবসা করা কঠিন হবে। গ্যাস সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন করতে হবে। ব্যাংকে এলসি খোলার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। যেখানে সরকার নির্ধারিত দামে ডলার পাওয়া যাবে।