অন্তর্বর্তী সরকারের দ্বিতীয় সপ্তাহ

বাজার মূলধন হারালো ১৬ হাজার কোটি টাকা : সূচকের বড় পতন

প্রকাশ : ২৫ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিনিধি

গত সপ্তাহে দেশের শেয়ারবাজারে লেনদেন হওয়া পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে চার কার্যদিবসেই সূচকের পতন হয়েছে। ফলে সপ্তাহজুড়ে কমেছে লেনদেনে অংশ নেয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম। এতে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন ১৬ হাজার কোটি টাকার ওপরে কমে গেছে। আর প্রধান মূল্যসূচক কমেছে ২০০ পয়েন্টের বেশি। দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেয়া অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে এটি শেয়ারবাজারের দ্বিতীয় সপ্তাহ। হাসিনা সরকার পতনের পর শেয়ারবাজারে উল্লম্ফন হলেও নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম সপ্তাহটিও বিনিয়োগকারীদের জন্য খুব একটা ভালো যায়নি। আন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর প্রথম সপ্তাহজুড়ে শেয়ারবাজারে দরপতনের পাল্লা ভারি হয়। ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় যে কয়টি প্রতিষ্ঠান নাম লেখায়, তার দ্বিগুণের বেশির স্থান হয় দাম কমার তালিকায়। ফলে কমে মূল্যসূচক। তবে দরপতনের পরও বাজার মূলধন বাড়ে। তবে দ্বিতীয় সপ্তাহে এসে দরপতনের মাত্রা যেমন বড় হয়েছে, তেমনি সবকটি মূল্যসূচকের বড় পতন হয়েছে। সেই সঙ্গে কমেছে লেনদেনের গতি। গত সপ্তাহে ডিএসইতে যে কয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে, তার ১১ গুণ বেশি প্রতিষ্ঠানের স্থান হয়েছে দাম কমার তালিকায়। ফলে প্রধান মূল্যসূচক ৩ শতাংশের ওপরে কমে গেছে। আর লেনদেন কমেছে ৫১ শতাংশের বেশি। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে পড়ে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা দেশ থেকে চলে যান। আন্দোলন ঘিরে পরিস্থিতি অশান্ত হয়ে উঠলে দেশে কারফিউ জারি করে ৩ দিন সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। তবে হাসিনা সরকারের পতন হলে ৬ আগস্ট থেকে আবার সরকারি-বেসরকারি সব অফিস খুলে দেয়া হয়। ফলে শেয়ারবাজারেও লেনদেন চালু হয়। হাসিনা সরকার পতনের পর টানা চার কার্যদিবস শেয়ারবাজারে উল্লম্ফন হয়। চারদিনে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক প্রায় ৮০০ পয়েন্ট বেড়ে যায়। হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে এরই মধ্যে দুই সপ্তাহ শেয়ারবাজারে লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেন হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে মাত্র ৩২টির স্থান হয়েছে দাম বাড়ার তালিকায়। বিপরীতে দাম কমেছে ৩৫৭টির। আর ৫টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম সপ্তাহে ১০৫টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ে। বিপরীতে দাম কমে ২৭৮টির। আর ১৫টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। দাম বাড়ার তুলনায় দাম কমার তালিকায় ১১ গুণ বেশি প্রতিষ্ঠান থাকায় গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৯২ হাজার ৮৩১ কোটি টাকা। যা আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৭ লাখ ৮ হাজার ৯৬৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ১৬ হাজার ১৩৩ কোটি টাকা বা ২ দশমিক ২৮ শতাংশ। আগের সপ্তাহে বাজার মূলধন বাড়ে ৫ হাজার ৫১ কোটি টাকা বা দশমিক ৭২ শতাংশ। এদিকে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স গত সপ্তাহে কমেছে ২০৩ দশমিক ৯২ পয়েন্ট বা ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ২০ দশমিক ৯৭ পয়েন্ট বা দশমিক ৩৫ শতাংশ। অর্থাৎ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম দুই সপ্তাহে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক কমলো ২২৪ পয়েন্ট। প্রধান মূল্যসূচকের পাশাপাশি কমেছে ইসলামী শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক। গত সপ্তাহে সূচকটি কমেছে ৪৫ দশমিক ৬৪ পয়েন্ট বা ৩ দশমিক ৬১ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ১০ দশমিক ১৯ পয়েন্ট বা দশমিক ৮০ শতাংশ। বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক গত সপ্তাহেও কমেছে। গত সপ্তাহজুড়ে এই সূচকটি কমেছে ৮৮ দশমিক ৭৬ পয়েন্ট বা ৪ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ৪৬ দশমিক ৬২ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ১৯ শতাংশ। মূল্যসূচক কমার পাশাপাশি লেনদেনের গতিও কমেছে। গত সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৬২৪ কোটি ৪১ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় বাজার ২৮২ কোটি ২২ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন কমেছে ৬৫৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা বা ৫১ দশমিক ৩০ শতাংশ। সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে গ্রামীণফোনের শেয়ার। কোম্পানিটির শেয়ার প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ৫৭ কোটি ৬৯ লাখ টাকা, যা মোট লেনদেনের ৯ দশমিক ২৪ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ব্র্যাক ব্যাংকের শেয়ার প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ৪৪ কোটি ১ লাখ টাকা। প্রতিদিন গড়ে ২৮ কোটি ২৬ লাখ টাকা লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস। এ ছাড়া লেনদেনের শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- ইউসিবি ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ, জেএমআই হসপিটাল রিকুইজিট অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিং, রবি এবং ইসলামী ব্যাংক।