রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর কাছে সরকারের বিভিন্ন আমদানি ব্যয়ের প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার বকেয়া (ওভারডিউ) পরিশোধের জন্য দেশের বেশ কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংকের সহায়তা চেয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত রোববার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ফরেক্স রিজার্ভ ও ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্টের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে ১৫টি বেসরকারি ব্যাংকের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক সভায় এ সহায়তা চাওয়া হয়। সভায় উপস্থিত কয়েকটি ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সরকারি আমদানির প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার পেমেন্ট ওভারডিউ রয়ে গেছে। এসব পেমেন্ট পরিশোধের জন্য তাদেরকে প্রতিদিন ৫০ মিলিয়ন ডলার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর কাছে বিক্রি করার অনুরোধ করা হয়েছে। তবে চাহিদা মোতাবেক এসব ডলার দেয়া হবে কি না, এ বিষয়ে ব্যাংকগুলো এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, ‘রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর এসব ওভারডিউ ক্লিয়ার হলে সামগ্রিক ব্যাংক খাতই উপকৃত হবে।
কারণ, এসব ওভারডিউ থাকার কারণে বিদেশি করেসপন্ডেন্ট ব্যাংকগুলো আমাদের বেসরকারি ব্যাংকগুলোর লোন লিমিট কমিয়ে দিয়েছে। এ ছাড়া ঋণপত্র (এলসি) নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বিদেশি ব্যাংকগুলো ইতস্তত করে। ওভারডিউ ক্লিয়ার হলে বিদেশি ব্যাংকগুলোর সঙ্গে আমাদের দেশীয় ব্যাংকগুলোর সম্পর্ক ভালো হবে এবং তাদের খরচ কমে আসবে।’ ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, রিজার্ভ বাড়ানোর প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে আরো ৩ বিলিয়ন ডলার ঋণের জন্য আলোচনা শুরু হয়েছে। ‘রিজার্ভ থেকে আপাতত আমরা কোনো ডলার বিক্রি করব না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি,’ বলেন তিনি। সভায় উপস্থিত একটি বেসরকারি ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ১৯৭৪ সালে বন্যা হওয়ার পর খাদ্য আমদানি করার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু রিজার্ভে ডলার না থাকায় তা আমদানি করা যায়নি। একই ভাবে সম্প্রতি যে বন্যা হয়েছে, এর ফলে খাদ্য আমদানি বাড়াতে হতে পারে। ফলে রিজার্ভ থেকে আলাদা করে ডলার সহায়তা দিতে হতে পারে। এসব কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করতে চাইছে না। সভায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে ব্যাংকারদের কাছে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক চ্যানেল মিলিয়ে মোট রেমিট্যান্স কত হতে পারে, এ নিয়ে ধারণা জানতে চাওয়া হয়। ব্যাংকাররা তখন জানান, দেশে প্রতি বছর রেমিট্যান্স আসে ৩০-৪০ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে বৈধ চ্যানেলে ২০-২৪ বিলিয়ন ডলার আসে, বাকিটা আসে হুন্ডিতে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক হুন্ডি চ্যানেলের অন্তত ৮-১০ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স বৈধ চ্যানেলে নিয়ে আসতে পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ সময় ব্যাংকাররা ডলারের রেট পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়ার জন্য আহ্বান জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে। এ ছাড়াও তারা ডলারের রেট নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে সঠিক তথ্য রিপোর্টিং করার সুযোগও চান। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক নীতিনির্ধারণী কর্মকর্তা জানান, ডলারের রেট ১১০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১১৭ টাকা করার পরদিনই চাল ও তেলের পাইকারি দর বেড়ে গিয়েছিল। এতে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার জনগণকে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। তাই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে যা করার প্রয়োজন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক সেটাকেই প্রাধান্য দেবে বলে জানান তিনি। সভায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে অথরাইজড ডিলার ফোরামের মতো করে ট্রেজারি ফোরাম চালু করতে ব্যাংকারদের নির্দেশনা দেয়া হয়। এ সময় ব্যাংকাররা ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) পক্ষ থেকে দেয়া এমনই এক প্রস্তাবনার কথা স্মরণ করিয়ে দেন।