স্বর্ণ চোরাচালানের সিন্ডিকেট ‘দিলীপ-দোলন’
প্রকাশ : ২৮ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিনিধি
জুয়েলারি ব্যবসার আড়ালে আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে স্বর্ণ চোরাকারবারের বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন দিলীপ কুমার আগরওয়াল, যিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক উপকমিটির সদস্য। আরেকজন বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির (বাজুস) বহিষ্কৃত সাবেক সভাপতি এনামুল হক দোলন। স্বর্ণ চোরাচালানের টাকায় নামে-বেনামে তারা হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। চোরাচালানের অর্থে এলাকায় গড়েছেন অবৈধ সম্পদের পাহাড়। তাদের চোরাচালান ও বিলাসী জীবনযাপনের কথা স্থানীয় লোকজন জানলেও আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরেও ভয়ে মুখ খুলতে রাজি নয় কেউ। দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ উঠলেও শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের ছত্রচ্ছায়ায় দায়মুক্তি পেয়েছেন কেউ কেউ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বৈধ উপায়ে স্বর্ণ আমদানির সুযোগ থাকলেও অতিমুনাফার লোভে চোরাচালানের সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছিলেন দোলন-দীলিপ। তাদের ছত্রচ্ছায়ায় আকাশ, স্থল ও সমুদ্র তিন পথেই হয় স্বর্ণ চোরাচালান। হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে অর্থপাচারেও সরাসরি সম্পৃক্ত ছিল এই চক্র। নোয়াখালী-১ (চাটখিল-সোনাইমুড়ি) আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য এইচ এম ইব্রাহীমও ছিলেন এই সিন্ডিকেটের সক্রিয় সদস্য। তার মাধ্যমেই দোলন-দীলিপ সিন্ডিকেটকে সরাসরি মদদ দিতেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ শীর্ষস্থানীয় একাধিক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য এই সিন্ডিকেট থেকে নিয়মিত মাসোহারা নিতেন। সম্পৃক্ততা ছিল আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্তাব্যক্তিদেরও। দিলীপ কুমার আগরওয়াল : তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, দিলীপ কুমার আগরওয়ালের আকাশচুম্বী উত্থানের নেপথ্যে আছে ভয়ংকর চোরাকারবার ও প্রতারণার গল্প। এক সময়ের সামান্য ঠিকাদার দুই দশকের ব্যবধানে হয়ে উঠেছেন বাণিজ্যিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (সিআইপি)। তার পৈতৃক নিবাস চুয়াডাঙ্গায় সরেজমিনে অনুসন্ধানকালেও নানা অবিশ্বাস্য কাহিনি বেরিয়ে এসেছে। স্থানীয় বাসিন্দারাও দিলীপের রাতারাতি বিত্তশালী বনে যাওয়ার ঘটনাকে রীতিমতো আলাদিনের চেরাগ হাতে পাওয়া বলেই মনে করছে। নথি পর্যালোচনায় দেখা যায়, কাগজে-কলমে দিলীপ কুমার আগরওয়ালের বার্ষিক আয় চার কোটি চার লাখ ৩৯ হাজার ৮৫৪ টাকা। তার ওপর নির্ভরশীলদের আয় তিন কোটি ৫৭ লাখ ১২ হাজার ৩৮২ টাকা। কিন্তু সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, স্বর্ণ ও নকল হীরা বিক্রি করে দিলীপ কুমারের বার্ষিক আয় আরো কয়েক গুণ, যা দিয়ে বেনামে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন তিনি।