শিল্পাঞ্চলে শ্রমিক অসন্তোষ
কারখানাকেন্দ্রিক আধিপত্যের লড়াই, ব্যাহত হচ্ছে উৎপাদন
প্রকাশ : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
সরকার পতনের পর দেশের বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে কারখানাকেন্দ্রিক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ ও আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় শ্রমিকদের ব্যবহার করে পরিস্থিতি অস্থিশীল করার চেষ্টা করছে একটি মহল। এতে ব্যাহত হচ্ছে উৎপাদন ও শৃঙ্খলা। দেশের রপ্তানিমুখী গার্মেন্টস শিল্পে এর প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন গার্মেন্টস শিল্পমালিক এবং শ্রমিক নেতারা। জানা গেছে, অব্যাহত শ্রমিক আন্দোলনের মুখে সাভার ও আশুলিয়ায় বেশ কয়েকটি পোশাক কারখানা বন্ধ করে দিয়েছে মালিকপক্ষ। এ নিয়ে ওই এলাকায় অস্থিরতা বিরাজ করছে। আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে নরসিংদী ও নারায়ণগঞ্জেও। গত রোববার বন্ধ কারখানা খুলে দেয়ার দাবিতে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের পলাশবাড়ী এলাকা অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শ্রমিকরা। অন্যদিকে গতকাল সোমবার চাকরি স্থায়ীকরণ, বকেয়া বেতন পরিশোধ এবং পুরুষ শ্রমিক নিয়োগের দাবিতে গাজীপুরে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শ্রমিকরা। এদিন সকাল থেকে চান্দনা চৌরাস্তা, ভোগরা, নাওজোর, কোনাবাড়ী, বোর্ডবাজার ও টঙ্গীতে বিক্ষোভ করেন তারা। শ্রমিকরা জানান, গাজীপুরের বিভিন্ন পোশাক কারখানায় শুধু নারী শ্রমিক নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। এতে বঞ্চিত হচ্ছেন পুরুষ শ্রমিকরা। তাই কারখানাগুলোতে পুরুষ শ্রমিক নিয়োগ দেয়ার জন্য দাবি জানিয়ে সকাল থেকেই বিভিন্ন কারখানার চাকরিবঞ্চিত পুরুষরা সড়কে নেমে আসেন। গাজীপুরের গাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশরাফুল ইসলাম বলেন, সকাল থেকে শ্রমিকরা বিভিন্ন দাবিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে তাদের সঙ্গে আলোচনা করা হচ্ছে। অন্যদিকে টঙ্গী এলাকার বাটা সু কোম্পানির শ্রমিকরা চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। এ ছাড়া গাজীপুর চন্দনা চৌরাস্তা ও ভোগরা বাইপাস এলাকায় পোশাক কারখানার পুরুষ শ্রমিকরা তাদের দাবি জানিয়ে ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন।
অন্যদিকে ১০ দফা দাবিতে টানা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর শ্রমিকরা। গতকাল সোমবার সকাল থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত তারা নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের মোজারমেইল এলাকায় অবস্থান নিয়ে অবরোধ করেন। এ সময় মহাসড়কটিতে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কারখানার এক শ্রমিক বলেন, এলাকায় প্রভাব বিস্তার করার জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের গ্রুপ থাকে। ক্ষমতার পালাবদলের পর তারা নিজেদের অবস্থান জানান দেয়ার জন্য শ্রমিকদের ব্যবহার করছেন। দেশে এটা সাধারণ ব্যাপার হয়ে গেছে। এতদিন আওয়ামী লীগের লোকজন কাজ করতেন, এখন পরিবর্তনের পর সেটা অন্য কেউ করবে। যেসব এলাকায় কারখানা আছে সেখানকার লোকাল কিছু লোক থাকেন যারা বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন। যেমন- ঝুটের ব্যবসা, খাবার ও অন্য সামগ্রী সরবরাহ। তিনি বলেন, যেহেতু রাজনৈতিক একটা পরিবর্তন এসেছে এবং এতদিন যারা বঞ্চিত ছিলেন তারা নতুন করে তাদের অবস্থা জানান দিতে চাচ্ছেন। ফলে শ্রমিকদের ভুল বুঝিয়ে এ ধরনের আন্দোলনের ডাক দিচ্ছেন। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকারকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।