আফ্রিকায় চীনের ঋণ পুনরায় বৃদ্ধি ঝুঁকি এড়াতে কৌশলগত পরিবর্তন
* চীন আফ্রিকাকে প্রতি বছর ১ হাজার কোটি ডলার ঋণ প্রদান করতো * ঋণ প্রদানের নতুন পন্থা অনুসন্ধান করছে চীন * চীন আফ্রিকায় বিভিন্ন অবকাঠামো প্রকল্পে বিনিয়োগ
প্রকাশ : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিনিধি
আফ্রিকার দেশগুলোতে চীনের ঋণ প্রদান নিয়ে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে আলোচনা চলছে। চীনের অর্থনৈতিক সম্প্রসারণ এবং ভূরাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের জন্য আফ্রিকাকে ঋণ প্রদান করা হচ্ছে বলে বিভিন্ন মহলে অভিযোগ রয়েছে। কিছু সময়ের জন্য চীনের ঋণপ্রবাহে শ্লথগতি দেখা গেলেও, ২০২৩ সালে এই ধারা পুনরায় ঊর্ধ্বগতি লাভ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট পলিসি সেন্টারের সাম্প্রতিক এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, চীনের ঋণদাতারা ২০২৩ সালে আফ্রিকায় ৪৬১ কোটি ডলার ঋণের অনুমোদন করেছে, যা সাত বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো ঋণের পরিমাণে বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়। চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) প্রকল্পের অধীনে ২০১২ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত চীন আফ্রিকাকে প্রতি বছর ১ হাজার কোটি ডলারেরও বেশি ঋণ প্রদান করেছিল। তবে কোভিড-১৯ মহামারি এবং বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি শ্লথ হয়ে গেলে ঋণের প্রবাহেও ভাটা পড়ে। ২০২৩ সালের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, আফ্রিকায় চীনের ঋণ ২০২২ সালের তুলনায় তিনগুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। চীন এখন ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর সাথে আরো টেকসই ও ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করতে আগ্রহী। বিশেষজ্ঞদের মতে, চীন তাদের ঋণ প্রদানের কৌশলে পরিবর্তন এনে নতুন পন্থা অনুসন্ধান করছে। আফ্রিকার দেশগুলোর মধ্যে চীনের ঋণের ব্যাপকতা প্রাচীন সিল্ক রোডের প্রেরণায় গৃহীত বিআরআই প্রকল্পের মাধ্যমে বেড়েছে। এই উদ্যোগের শুরুতে চীন আফ্রিকায় বিভিন্ন অবকাঠামোগত প্রকল্পে বিনিয়োগ করে। তবে ২০১৯ সাল থেকে চীনের বিনিয়োগ ও ঋণপ্রবাহ কমতে শুরু করে, যার পেছনে রয়েছে কোভিড-১৯ মহামারি, চীনের অর্থনৈতিক শ্লথগতি এবং আফ্রিকার কিছু দেশের ঋণের চাপ। চীন বর্তমানে আফ্রিকার আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী, যা ঝুঁকি এড়ানোর একটি কৌশল হিসেবে দেখা যাচ্ছে। ২০২৩ সালে চীন যে ঋণ প্রদান করেছে, তার ১০ শতাংশ সৌর ও জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে বিনিয়োগ করা হয়েছে, যা নবায়নযোগ্য শক্তির প্রতি চীনের আগ্রহের ইঙ্গিত দেয়। তবে চীনের ঋণ প্রদানের কৌশল এখনো স্পষ্ট নয়। চীন রুগ্ন অর্থনীতির দেশগুলোকেও ঋণ প্রদান করেছে, যার মধ্যে রয়েছে নাইজেরিয়া ও অ্যাঙ্গোলা। আফ্রিকায় চীনের অংশীদারিত্বের গুণমান ভবিষ্যতে বজায় থাকবে কি না, তা সময়ই বলে দেবে। সামগ্রিকভাবে, আফ্রিকায় শিল্পায়ন, বাজার সম্প্রসারণ এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির আরো সুযোগ রয়েছে, এবং এই কারণে মহাদেশটির প্রতি বিশ্ব অর্থনীতির শীর্ষ দেশগুলোর আগ্রহ বৃদ্ধি পাচ্ছে। চীন আফ্রিকায় ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে শীর্ষে থাকলেও, সাম্প্রতিক সময়ে এই ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা নতুন কৌশল ও সুযোগ অনুসন্ধানের ইঙ্গিত দেয়।