রপ্তানিকারকরা এখন বড় অঙ্কের এলসি (লেটার অব ক্রেডিট) খুলতে গিয়ে তীব্র ডলার সংকটের মুখোমুখি হচ্ছেন। রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) থেকে ব্যাংকগুলো নতুন ঋণ বিতরণ কমিয়ে দেয়ায় এই সংকট আরো প্রকট হয়েছে। ডলার সংকটের কারণে ব্যাংকগুলো পর্যাপ্ত ডলার সরবরাহ করতে পারছে না, ফলে কাঁচামাল আমদানিতে বিলম্ব ঘটছে, যা রপ্তানি কার্যক্রমে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। করোনাকালে রপ্তানি খাতকে চাঙ্গা রাখতে ইডিএফ-এর তহবিল ৭০০ কোটি ডলারে উন্নীত করা হয় এবং সুদের হার ২ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। এতে রপ্তানিকারকরা কম সুদে বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ পেতেন এবং দ্রুত এলসি খুলে আমদানি কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারতেন। তবে আইএমএফ-এর ঋণ চুক্তির শর্তানুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংককে রিজার্ভ থেকে বিনিয়োগ করা অর্থ বাদ দিয়ে নিট রিজার্ভের হিসাব প্রকাশ করতে বলা হয়। এর ফলে ইডিএফ-এর আকার ছোট করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, যা রপ্তানিকারকদের জন্য কঠিন পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। ইডিএফ-এর আকার এখন ৫০০ কোটি ডলারের নিচে নেমে এসেছে এবং এটি আরো কমিয়ে ৩০০ কোটি ডলারের মধ্যে সীমাবদ্ধ করার পরিকল্পনা রয়েছে। একই সঙ্গে তহবিলের সুদের হার ২ শতাংশ থেকে বেড়ে ৬.৮৯ শতাংশ করা হয়েছে, যা রপ্তানিকারকদের ঋণ খরচ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে এবং তাদের ডলার পাওয়ার প্রক্রিয়াকে আরো জটিল করে তুলেছে। আগে ব্যাংকগুলো নিজস্ব উৎস থেকে ডলারের জোগান দিয়ে দ্রুত এলসি খুলতে পারত। কিন্তু ডলার সংকটের কারণে এখন ইডিএফ তহবিলের ওপরই ব্যাংকগুলো বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। তহবিলের আকার কমানোর ফলে এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকেও ডলার পাওয়া যাচ্ছে না, যা বড় অঙ্কের এলসি খোলার ক্ষেত্রে রপ্তানিকারকদের সামনে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। রপ্তানিকারকরা তাদের রপ্তানি আয় থেকে যে ডলার পাচ্ছেন, তা দিয়ে ব্যাক টু ব্যাক এলসির দেনা পরিশোধ করার পর নিজেরা ১৫ শতাংশের কম ডলার রাখতে পারছেন। ফলে স্থানীয় ব্যয় মেটানোর জন্য ডলার ভাঙানোর প্রয়োজন হয়, কিন্তু অতিরিক্ত ডলার না থাকায় নতুন এলসি খুলতে সমস্যা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত বছরের ১ জানুয়ারি ১০ হাজার কোটি টাকার একটি প্রাক-জাহাজীকরণ তহবিল গঠন করেছে, যা থেকে রপ্তানিকারকরা টাকায় ঋণ নিতে পারেন। কিন্তু সেই ঋণ নিয়ে ডলার কেনা সম্ভব না হলে এলসি খোলা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে ডলার সংকটের কারণে রপ্তানি কার্যক্রমে আরো সমস্যা দেখা দিচ্ছে। ইডিএফ তহবিল থেকে ঋণসীমাও কমানো হয়েছে। আগে তৈরি পোশাকশিল্পের রপ্তানিকারকরা আড়াই কোটি ডলার ঋণ পেতেন, যা এখন ২ কোটি ডলারে নামিয়ে আনা হয়েছে। অন্য খাতের রপ্তানিকারকরাও একই ভাবে ঋণ সীমাবদ্ধতার শিকার হচ্ছেন।
বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ-এর প্রতিনিধিরা এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে বৈঠক করে ইডিএফ-এর আকার ছোট না করার এবং রপ্তানি খাতে ডলার সরবরাহ বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন। যদিও ডলারের প্রবাহ কিছুটা বেড়েছে, তা এখনো চাহিদার তুলনায় যথেষ্ট নয়। উল্লেখ্য, ১৯৮৯ সালে মাত্র ৩৮ লাখ ৭২ হাজার ডলার নিয়ে ইডিএফ তহবিল গঠিত হয়, যা পর্যায়ক্রমে ৭০০ কোটি ডলারে উন্নীত করা হয়েছিল। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে এর আকার কমিয়ে আনা হচ্ছে, যা রপ্তানিকারকদের জন্য আরো বড় চ্যালেঞ্জের সৃষ্টি করেছে।