স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগে জটিলতা নিরসন
অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা চায় বিএসইসি
প্রকাশ : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিনিধি
দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠনে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের বিষয়ে সৃষ্ট আইনি জটিলতা নিরসনে অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা চেয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। ডিএসইতে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের প্রক্রিয়া নিয়ে যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে, তা সমাধানের জন্য সম্প্রতি বিএসইসি মন্ত্রণালয়ের কাছে একটি চিঠি প্রেরণ করেছে।
বিতর্কের সূত্রপাত ও সমস্যার মূল কারণ : গত ২১ আগস্ট নতুন সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদের বেশ কয়েকজন স্বতন্ত্র পরিচালক পদত্যাগ করেন। এর পরপরই ডিএসইর শেয়ারহোল্ডার পরিচালকরা নতুন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের জন্য কিছু নাম প্রস্তাব করেন, যা বিএসইসি উপেক্ষা করে। ১ সেপ্টেম্বর, বিএসইসি নিজেই সাতজন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেয়, যা নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। নিয়োগকৃত পরিচালকরা হলেন কে এ এম মাজেদুর রহমান (ডিএসইর সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক), মো. কামরুজ্জামান (আর্মি ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের মহাপরিচালক), ড. নাহিদ হোসেন (অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব), ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মফিজুল ইসলাম রাশেদ, অধ্যাপক মো. হেলালউদ্দিন (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়), সৈয়দ হাম্মাদুল করিম (মেটলাইফ বাংলাদেশের সাবেক মহাব্যবস্থাপক), এবং মো. ইসহাক মিয়া (বাংলাদেশ ডাটা সেন্টার ও ডিজাস্টার রিকভারি সাইটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক)। তবে, নতুনভাবে নিয়োগ পাওয়া স্বতন্ত্র পরিচালক মাজেদুর রহমান, হেলালউদ্দিন ও নাহিদ হোসেনের নিয়োগ নিয়ে আইনি আপত্তি উঠেছে। নিয়ম অনুযায়ী, ডিএসইর সঙ্গে জড়িত কোনো ব্যক্তি বা নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানের কর্মী স্বতন্ত্র পরিচালক হতে পারবেন না। কিন্তু মাজেদুর রহমান ও হেলালউদ্দিনের অতীতে ডিএসইর সঙ্গে সম্পর্ক ছিল, যা নিয়ম ভঙ্গ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এফআইডি অতিরিক্ত সচিব ড. নাহিদ হোসেনও নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানের কর্মী হওয়ায় তার নিয়োগ নিয়েও আপত্তি রয়েছে।
ব্রোকারদের আপত্তি ও পুনর্বিবেচনার দাবি : নিয়োগ প্রক্রিয়ার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ) গত বৃহস্পতিবার বিএসইসিকে লিখিতভাবে আপত্তি জানায় এবং নিয়োগের পুনর্বিবেচনার দাবি করে। ডিএসইর বেশিরভাগ শেয়ার মালিক ব্রোকার হাউসগুলোর হওয়ায় তাদের এই আপত্তি বেশ গুরুত্ব বহন করে। ডিবিএর আপত্তি অনুসারে, ডিএসই রেগুলেশনস এবং ডিমিউচুয়ালাইজেশন স্কিম অনুযায়ী, যারা গত তিন বছরের মধ্যে ব্রোকারেজ হাউজের সঙ্গে সম্পর্কিত ছিলেন, তারা স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পেতে পারেন না। সেই অনুযায়ী, মাজেদুর রহমান এবং হেলালউদ্দিনের নিয়োগে আইনি সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। এফআইডির কর্মী ড. নাহিদ হোসেনের নিয়োগ নিয়েও আপত্তি জানানো হয়েছে, কারণ নিয়ম অনুসারে, কোনো নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানের কর্মী ডিএসইর স্বতন্ত্র পরিচালক হতে পারবেন না।
বিএসইসির চিঠি ও মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার প্রয়োজন : জটিলতা নিরসনে বিএসইসি অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের (এফআইডি) সচিবের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছে। বিএসইসি এই চিঠিতে জানায়, ডিএসইর পর্ষদ পুনর্গঠন এবং বাজারের স্বাভাবিক কার্যক্রম বজায় রাখতে স্বতন্ত্র পরিচালকদের নিয়োগ করা জরুরি। তবে ডিএসইর এনআরসি কমিটি না থাকায় নিয়মিত প্রক্রিয়ায় স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের সুযোগ নেই। তাই বিএসইসি নিজের ক্ষমতাবলে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দিলেও আইনি জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে, যা সমাধানে অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা প্রয়োজন। বিএসইসি আরো জানায়, ১ সেপ্টেম্বর কমিশনের ৯১৮তম জরুরি সভায় এক্সচেঞ্জেস ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইন ২০১৩-এর ধারা ২৪ অনুযায়ী কে এ এম মাজেদুর রহমানকে স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। তবে তিনি পূর্বে ডিএসইর একটি ট্রেকহোল্ডার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত থাকায় তার নিয়োগ নিয়ে আপত্তি ওঠে। এফআইডির নির্দেশনা পাওয়া না পর্যন্ত এই জটিলতা সমাধান সম্ভব নয় বলে জানায় বিএসইসি।
জটিলতার সমাধানের অপেক্ষায় : বিএসইসির এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এফআইডিকে চিঠি পাঠানোর পর গত সপ্তাহে একটি কর্মদিবস পেরিয়েছে, তবে এখনো পর্যন্ত কোনো নির্দেশনা আসেনি। গত শুক্র ও শনিবার ছুটি থাকায় দ্রুত কোনো সিদ্ধান্ত আসার সম্ভাবনা নেই। এই জটিলতার সমাধানে অর্থ মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে, কারণ ডিএসইর পরিচালনা কার্যক্রম বর্তমানে প্রভাবিত হচ্ছে। পুঁজিবাজারের স্বাভাবিক কার্যক্রম নিশ্চিত করতে এবং বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা করতে বিএসইসি এ বিষয়টি দ্রুত সমাধান করতে চায়, তাই তারা মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনার অপেক্ষায় রয়েছে।