শ্রমিক অসন্তোষের ১০ দিন
আসতে পারে ‘নো ওয়ার্ক নো পে’র ঘোষণা
প্রকাশ : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিনিধি
বিজিএমইএ’র একটি সূত্র জানায়, ট্রেড ইউনিয়ন নেতাদের আশ্বাস সত্ত্বেও গতকাল শনিবার সকাল থেকে শ্রমিক অসন্তোষের জেরে আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে অন্তত ৫০টি কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায় টানা দশম দিনেও গতকাল শনিবার শ্রমিক অস্থিরতার কারণে ছুটি ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছে অন্তত ৫০টি কারখানা। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে যে কোনো মুহূর্তে ‘নো ওয়ার্ক নো পে’র ঘোষণা আসতে পারে বলে জানিয়েছে শিল্প সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, বড় কয়েকটি শিল্প গ্রুপের শ্রমিকরা প্রতিদিন সকালে এসে কার্ড পাঞ্চ করার পর কাজ না করে বেরিয়ে পড়ে। বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ এর ১৩ (১) ধারায় বলা হয়েছে, কোনো প্রতিষ্ঠানের কোনো শাখা বা বিভাগে বে-আইনী ধর্মঘটের কারণে মালিক উক্ত শাখা বা প্রতিষ্ঠান আংশিক বা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিতে পারে। এক্ষেত্রে ধর্মঘটে অংশগ্রহণকারী শ্রমিকরা কোনো মজুরি পাবেন না।
বিজিএমইএ’র একটি সূত্র জানায়, ট্রেড ইউনিয়ন নেতাদের আশ্বাস সত্ত্বেও গতকাল শনিবার সকাল থেকে শ্রমিক অসন্তোষের জেরে আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে অন্তত ৫০টি কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে শারমীন গ্রুপ, হা-মীম গ্রুপ, অনন্ত গ্রুপের কারখানাগুলোও রয়েছে। এর মধ্যে কিছু কারখানার শ্রমিকরা কারখানায় এলেও কাজ না করে কারখানা থেকে বেরিয়ে যাওয়ায় কর্তৃপক্ষ এসব কারখানা ছুটি ঘোষণা করতে বাধ্য হয়। এ ছাড়াও শ্রমিক অসন্তোষের জেরে সকাল থেকেই বন্ধ ছিল নিউএইজ গ্রুপের ৪টি কারখানাসহ অন্তত ১৪টি কারখানা। সূত্র জানায়, হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক একে আজাদ সকালে কারখানায় গিয়ে শ্রমিকদের দাবিগুলো মেনে নেয়ার আশ্বাস দিলেও শ্রমিকরা লাঞ্চের আগে কারখানা থেকে বেরিয়ে যায়। এদিকে শিল্পাঞ্চলের সমস্যা সমাধানে এই মুহূর্তে মালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা করতে আশুলিয়ায় অবস্থান করছেন বিজিএমইএ’র প্রেসিডেন্ট খন্দকার রফিকুল ইসলাম, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট আব্দুল্লাহ হিল রাকিব, পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেলসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এর আগে দুপুরে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার মো. সারোয়ার আলম বলেন, আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত অন্তত ৪০টি কারখানা ছুটি ঘোষণা করার তথ্য আছে। এই সংখ্যা কমবেশি হতে পারে। কাঠগড়া জোনে একটি কারখানার শ্রমিকরা কাজ বন্ধ করে বসে আছে, আমরা সমস্যা সমাধানে কাজ করে যাচ্ছি। বিজিএমইএ সূত্র আরো জানায়, দিনের শুরুতে জিরাবো টু বিশমাইল সড়কে অবস্থিত পোশাক কারখানাগুলোর কার্যক্রম স্বাভাবিক থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই অঞ্চলের অন্তত দুটি কারখানায় ঝামেলা শুরু হয়। এর মধ্যে কন্টিনেন্টাল এর শ্রমিকরা বের হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি লুসাকার শ্রমিকরা বিভিন্ন দাবিতে কাজ বন্ধ করে রেখেছে বলে জানা গেছে। এর আগে গত শুক্রবার শিল্প মালিক, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও বিভিন্ন ট্রেড ইউনিয়নের নেতাসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে দুই দফা বৈঠকের পর বিজিএমইএ নেতারা আজ থেকে সব পোশাক কারখানা খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু সকাল থেকে শ্রমিকদের বিক্ষোভ এবং কাজ না করে শ্রমিকরা কারখানা থেকে বেরিয়ে যাওয়ায় মালিকপক্ষ এসব কারখানা ছুটি ঘোষণা করতে বাধ্য হয়। সকালে শিল্প পুলিশের একাধিক সুত্র টিবিএসকে জানায়, বিজিএমইএ’র ঘোষণা অনুযায়ী সকাল থেকে আশুলিয়ার অধিকাংশ পোশাক কারখানা খোলা রাখা হলেও বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর সড়কের নরসিংহপুর জোনে অবস্থিত একাধিক কারখানার শ্রমিকরা বিভিন্ন দাবিতে কাজ না করে কারখানা থেকে বেরিয়ে যেতে শুরু করলে পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে ওঠে। তবে অন্যান্য দিনের তুলনায় পরিস্থিতি আজ শনিবার অনেকটাই ভালো ছিল জানিয়ে শিল্প পুলিশ জানায়, শিল্পাঞ্চলের কোথাও কোনো কারখানায় হামলা-ভাঙচুরের মত ঘটনার খবর আজ পাওয়া যায়নি। এদিকে তৃণমূলের শ্রমিক নেতারা মনে করছেন, বিজিএমইএসহ নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে অংশীজনদের সঙ্গে দফায় দফায় যে আলোচনা চলছে, এতে তৃণমূলের শ্রমিক নেতাদের অংশগ্রহণ কম। যেটি সমস্যা সমাধান না হওয়ার একটি অন্যতম কারণ। চলমান শ্রমিক অসন্তোষে শ্রমিক নেতাদের নিয়ন্ত্রণ কম বলেও দাবি করেন তারা।