সাভার-আশুলিয়া-গাজীপুর

পোশাক কারখানায় শান্তিপূর্ণ উৎপাদন কার্যক্রম

প্রকাশ : ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিনিধি

সাভার, আশুলিয়া, গাজীপুর ও টঙ্গী অঞ্চলের পোশাক কারখানাগুলোতে গত শনিবার বেশিরভাগ কারখানায় উৎপাদন স্বাভাবিক ছিল। সেনাবাহিনী এবং অন্যান্য যৌথ বাহিনীর অভিযান ও টহলের কারণে বাইরের এলাকায় কোনো উল্লেখযোগ্য শ্রমিক বিক্ষোভ দেখা যায়নি। তবে আশুলিয়ার কিছু কারখানার ভেতরে শ্রমিক অসন্তোষ এবং বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে। এসব বিক্ষোভের কারণে অন্তত ১৭টি কারখানা বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।

আশুলিয়া অঞ্চলে যৌথ বাহিনীর টহল এবং কারখানা বন্ধের ঘোষণা : ঢাকার সাভার ও আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে শনিবার যৌথবাহিনী সেনাবাহিনী, র‌্যাব এবং পুলিশের উপস্থিতি দেখা গেছে। এ কারণে শ্রমিকরা তাদের দাবি আদায়ে নতুন কৌশল অবলম্বন করেছে। শনিবার সকালে শ্রমিকরা নির্ধারিত সময় অনুযায়ী কারখানায় প্রবেশ করলেও তারা কাজে যোগ না দিয়ে কর্মবিরতি পালন করে এবং কারখানার ভেতরে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এই পরিস্থিতিতে আশুলিয়ার অন্তত ১৭টি কারখানা বন্ধ ঘোষণা করতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ। শিল্প পুলিশের বরাত দিয়ে জানা গেছে, শনিবার সকাল থেকে সাভার-আশুলিয়ার বেশিরভাগ কারখানা চালু ছিল। নিউ এইজ, নাসা, অনন্ত এবং শারমিনসহ বেশ কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা কর্মস্থলে প্রবেশ করলেও কাজে যোগ না দিয়ে কর্মবিরতি পালন করেছে। পরবর্তীতে শ্রমিকদের ভেতরে বিক্ষোভের ফলে এই কারখানাগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

নিরাপত্তা পরিস্থিতি এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল : আশুলিয়ার পলাশবাড়ী এলাকায় পার্ল গার্মেন্টস কারখানার সামনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল এবং সেনাবাহিনীর উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর সড়কের নরসিংহপুর এলাকায় বিভিন্ন কারখানার সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে এবং সড়কে টহল অব্যাহত ছিল। বেশ কিছু কারখানা মালিকপক্ষের সঙ্গে শ্রমিকদের দাবি-দাওয়া নিয়ে সুরাহা না হওয়ায় আগে থেকেই বন্ধ ছিল।

বিশেষ করে বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর সড়কের নরসিংহপুর এলাকায় অনন্ত অ্যাপারেলস এবং আল-মুসলিমসহ বেশ কয়েকটি কারখানায় কাজ বন্ধ রয়েছে। তবে শনিবার কোনো কারখানায় শ্রমিকদের মধ্যে হামলা, ভাঙচুর বা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি। শ্রমিকরা বিক্ষোভ করে কাজে যোগ না দিয়ে যার যার মতো কারখানা থেকে বের হয়ে চলে যায়।

শ্রমিকদের বিক্ষোভ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারি : শনিবার সকাল থেকে আশুলিয়ার বিভিন্ন এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছিল। যৌথ বাহিনীর অভিযান এবং সেনাবাহিনীর কঠোর অবস্থানের ফলে সড়কজুড়ে কোনো শ্রমিক আন্দোলন বা বিক্ষোভ দেখা যায়নি।

আশুলিয়ার ডিইপিজেডের নতুন ও পুরাতন উভয় জোনে কাজ স্বাভাবিকভাবে চলছিল এবং দুই ইপিজেডের সামনেই সেনাবাহিনী ও পুলিশ সতর্ক অবস্থানে ছিল। যদিও আশুলিয়ার কিছু কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ দেখা গিয়েছে, তবে কারখানাগুলোর বড় একটি অংশে পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক ছিল। কারখানায় অশান্তি ও বিক্ষোভ সৃষ্টির জন্য রাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যৌথ অভিযানে দুজন শ্রমিককে আটক করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা শ্রমিকদের উস্কানি দিয়ে আন্দোলন করার জন্য প্ররোচিত করছিল। আটক হওয়া ব্যক্তিরা হলেন আশুলিয়ার জামগড়া এলাকার রিসান ভুইয়া এবং মিঠুন হাসান।

গাজীপুরের পোশাক কারখানায় শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি : গাজীপুরে শনিবার সকাল থেকে বিভিন্ন পোশাক কারখানায় শ্রমিকরা শান্তিপূর্ণভাবে কাজে যোগ দেন। শুক্রবার রাতে যৌথ বাহিনী গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করলেও কাউকে আটক বা গ্রেফতার করা হয়নি।

গাজীপুর শিল্প পুলিশ জানায়, গত কয়েক দিন ধরে গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় শ্রমিকরা ছোটখাটো দাবি নিয়ে বিক্ষোভ এবং ভাঙচুর করে। তবে যৌথ বাহিনীর অভিযান শুরু হওয়ার পর গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় কোনো বিক্ষোভের ঘটনা আর ঘটেনি। গাজীপুরের কোনাবাড়ী এলাকায় যৌথ বাহিনীর অভিযানে বৃহস্পতিবার রাতে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়, যার বিরুদ্ধে শ্রমিকদের উসকানি দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে শুক্রবার রাতের অভিযানে কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। শনিবার সকাল থেকে শিল্প পুলিশ গাজীপুরের বিভিন্ন শিল্প এলাকায় সতর্ক অবস্থানে ছিল।

টঙ্গীর পরিস্থিতি এবং বিএনপির অবস্থান কর্মসূচি : গাজীপুরের টঙ্গী শিল্পাঞ্চলে শ্রমিক অসন্তোষ এবং বিক্ষোভ প্রতিহত করতে বিএনপি নেতাকর্মীরা টানা চার দিন ধরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে। ফলে বিসিক শিল্পাঞ্চলে কোনো বিক্ষোভ বা শ্রমিক আন্দোলনের ঘটনা ঘটেনি।

শনিবার সকালেও টঙ্গী পূর্ব থানা বিএনপি এবং এর অঙ্গ সংগঠনগুলো বিসিক এলাকায় অবস্থান নিয়ে নিরাপত্তা বজায় রাখে। টঙ্গী পূর্ব থানা বিএনপির সভাপতি সরকার জাবেদ আহমেদ সুমনের নেতৃত্বে শনিবার সকাল ৯টা থেকে বিসিক এলাকায় বিএনপির নেতাকর্মীরা অবস্থান করেন। তাদের উপস্থিতির ফলে বিসিক এলাকায় শ্রমিক অসন্তোষ সৃষ্টি হওয়ার কোনো সুযোগ হয়নি।

শ্রমিকদের অভিমত এবং ভবিষ্যৎ কার্যক্রম : কোনাবাড়ী এলাকার তোষুকার কারখানার শ্রমিক কফিল উদ্দিন জানান, তারা কাজে যোগ দিয়ে নিজেদের পরিবারের জন্য উপার্জন করতে চান এবং আন্দোলনে যোগ দিতে চান না।

তার মতে, বহিরাগত ব্যক্তিরা শ্রমিকদের ভুল বুঝিয়ে আন্দোলনে নামাতে উস্কানি দেয়। তিনি আরও বলেন, শ্রমিকরা যদি বেশি কাজ করে, তবে তারা বেশি উপার্জন করতে পারবে। তাই অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টিকারী ব্যক্তিদের থেকে শ্রমিকদের দূরে থাকা উচিত। সাভার, আশুলিয়া, গাজীপুর এবং টঙ্গী অঞ্চলের পোশাক কারখানাগুলোতে গত শনিবার দিনের শেষ পর্যন্ত বেশিরভাগ কারখানায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল। যৌথ বাহিনীর অভিযানের কারণে কোনো বড় ধরনের অশান্তি বা বিক্ষোভ দেখা যায়নি, তবে কিছু কারখানায় শ্রমিকদের কর্মবিরতি এবং বিক্ষোভের কারণে সাময়িকভাবে কাজ বন্ধ করতে হয়েছে।