ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

আগস্টেও সংকোচনমুখী অর্থনীতির পরিস্থিতি

আগস্টেও সংকোচনমুখী অর্থনীতির পরিস্থিতি

চলতি বছরের জুলাই মাসের তুলনায় দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা খানিকটা উন্নতি হলেও আগস্ট মাসে অর্থনীতির সার্বিক সূচকগুলো সংকোচনমুখী অবস্থানেই রয়েছে বলে জানিয়েছে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই)। আজ রোববার রাজধানীর গুলশানে এমসিসিআই কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত একটি সংবাদ সম্মেলনে আগস্ট মাসের পারচেজিং ম্যানেজারস ইনডেক্স (পিএমআই) প্রকাশ করা হয়।

এই অনুষ্ঠানে এমসিসিআই-এর মহাসচিব ও প্রধান নির্বাহী (সিইও) ফারুক আহমেদ এ তথ্য জানান। মেট্রোপলিটন চেম্বার এবং পলিসি এক্সচেঞ্জ কর্তৃক প্রণীত সর্বশেষ পিএমআই সূচকের তথ্যে জানা গেছে, আগস্টে দেশের পিএমআই সূচক ৬ দশমিক ৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৪৩ দশমিক ৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। তবে জুন মাসে এই সূচক ছিল ৬৩ দশমিক ৯ পয়েন্ট, যা জুলাই মাসে কমে ৩৬ দশমিক ৯ পয়েন্টে এসে দাঁড়ায়। অর্থাৎ ১ মাসে সূচকটি কমেছে ২৭ পয়েন্ট। এমসিসিআই তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করে, জুলাই ও আগস্ট মাসে টানা আন্দোলন ও সহিংস পরিস্থিতির ফলে দেশে সরবরাহ ব্যবস্থায় ব্যাপক বিঘ্ন ঘটে, যার প্রভাব কৃষি, উৎপাদন, নির্মাণ এবং সেবা খাতের ওপর ব্যাপকভাবে পড়ে। এই চারটি খাতের সামগ্রিক অবনমন পিএমআই সূচকের সংকোচনমুখী অবস্থাকে প্রমাণ করে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগের পর ছাত্রদের আন্দোলনের মুখে গত ৮ আগস্ট ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে। নতুন সরকারের দায়িত্ব নেয়ার পর কিছুদিন পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকলেও, আগস্টের শেষের দিকে শ্রমিকদের বিক্ষোভ এবং দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়, যার প্রভাব অর্থনীতিতে পড়েছে। এর ফলে পিএমআই সূচকে প্রত্যাশিত উত্থান লক্ষ্য করা যায়নি। পিএমআই সূচকটি মূলত একটি সমীক্ষাভিত্তিক সূচক, যা দেশের ব্যবসা পরিস্থিতি পরিমাপ করে। বিশ্বের প্রায় ৮০টিরও বেশি দেশে এই সূচক প্রচলিত রয়েছে। প্রতি মাসে কোম্পানির উচ্চপদস্থ নির্বাহীদের মতামতের ভিত্তিতে এটি তৈরি হয়, যেখানে অর্থনীতির সম্প্রসারণ বা সংকোচনের অবস্থা উঠে আসে। পিএমআই সূচকটি শূন্য থেকে ১০০ পয়েন্টের মধ্যে পরিমাপ করা হয়। কোনো খাতে সূচক ৫০ এর বেশি থাকলে অর্থনীতির সম্প্রসারণ নির্দেশ করে, আর ৫০ এর নিচে থাকলে সংকোচন বোঝায়। আগস্ট মাসের খাতভিত্তিক পিএমআই সূচকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, দেশের চারটি প্রধান খাত- কৃষি, উৎপাদন, নির্মাণ এবং সেবা- ভিন্ন ভিন্নভাবে প্রভাবিত হয়েছে।

কৃষি খাত : আগস্টে কৃষি খাতের পিএমআই সূচক ৩৮ দশমিক ৭ পয়েন্টে পৌঁছায়, যা জুলাই মাসে ছিল ৩৫ দশমিক ৪ পয়েন্ট। অর্থাৎ, ১ মাসে কৃষি খাতে ৩ দশমিক ৩ পয়েন্টের উন্নতি হয়েছে।

উৎপাদন খাত : আগস্ট মাসে উৎপাদন খাতের পিএমআই মান ছিল ৪৭ দশমিক ৭ পয়েন্ট, যা জুলাই মাসে ছিল ৩৪ দশমিক ১ পয়েন্ট। এই খাতে ১৩ দশমিক ৬ পয়েন্টের একটি উল্লেখযোগ্য উন্নতি দেখা গেছে।

নির্মাণ খাত: আগস্টে নির্মাণ খাতের সূচক ছিল ৪০ পয়েন্ট, যা জুলাই মাসে ছিল ৪৫ পয়েন্ট। অর্থাৎ, এই খাতের পিএমআই সূচক কমেছে প্রায় ৫ পয়েন্ট। এমসিসিআই জানায়, টানা আন্দোলনের কারণে সরকারি প্রকল্পের নির্মাণকাজ বন্ধ থাকায় এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর নির্মাণকাজ ধীরগতিতে এগোনোর ফলে এই খাতে সূচকের নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা গেছে।

সেবা খাত : সেবা খাতে আগস্টের পিএমআই সূচক ছিল ৪৩ দশমিক ২ পয়েন্ট, যা জুলাই মাসে ছিল ৩৭ পয়েন্ট। অর্থাৎ, এই খাতে সূচক বেড়েছে ৬ দশমিক ২ পয়েন্ট।

দেশের পিএমআই সূচক মে মাসে তার সর্বোচ্চ মানে পৌঁছায়, যা ছিল ৭০ দশমিক ১ পয়েন্ট। ওই মাসে কৃষি, উৎপাদন, নির্মাণ এবং সেবা খাতের উল্লেখযোগ্য সম্প্রসারণ হয়েছিল। তবে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে রাজনৈতিক অস্থিরতা, সরবরাহ ব্যবস্থার বিপর্যয়, শ্রমিক অসন্তোষ এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে অর্থনৈতিক কার্যক্রমে বিপর্যস্ত অবস্থা সৃষ্টি হয়। এর ফলে দেশের অর্থনীতির সংকোচনমুখী প্রবণতা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এমসিসিআই এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, আগস্ট মাসের শেষের দিকে অর্থনৈতিক কার্যক্রমের ওপর শ্রমিক বিক্ষোভ এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাব পড়েছে, যা অর্থনীতির সার্বিক পুনরুদ্ধারের গতি বাধাগ্রস্ত করেছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত