ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

রেন্টাল বিদ্যুৎ প্রকল্পে ক্যাপাসিটি চার্জ

বৈদেশিক অর্থ পাচার ও দুর্নীতির অভিযোগ

বৈদেশিক অর্থ পাচার ও দুর্নীতির অভিযোগ

গত ১৫ বছরে বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের সময় রেন্টাল-কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মাধ্যমে বিশাল অংকের অর্থ বিদেশে পাচার হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এসব প্রকল্পের সুবিধা নিতে বিশেষ আইনের অধীনে কোনো প্রতিযোগিতা বা টেন্ডার ছাড়াই বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের অনুমতি দেয়া হয়। শেখ হাসিনা সরকার, বিদ্যুৎ বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তারা এবং বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যবসায়ী এই অর্থ পাচারে জড়িত থাকার অভিযোগে সমালোচনার মুখে পড়েছে।

ক্যাপাসিটি চার্জের নামে অর্থ পাচার : ক্যাপাসিটি চার্জ হচ্ছে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতার জন্য সরকার থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদকদের দেওয়া একটি নির্দিষ্ট অর্থের পরিমাণ। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, বিদ্যুৎ উৎপাদন ছাড়াই এই চার্জের বিশাল অংশ অর্থপাচারে ব্যবহৃত হয়েছে। বিদ্যুৎ না সরবরাহ করলেও সরকার বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর মালিকদের এই ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করে আসছে, যা বৈশ্বিক ‘নো ইলেকট্রিসিটি নো পেমেন্ট’ নীতির সরাসরি লঙ্ঘন।

সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে প্রভাবশালীদের নাম : এসব প্রকল্পের নেতৃত্ব দিয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, বিদ্যুৎ উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী এবং বিদ্যুৎ বিভাগের অন্যান্য কর্মকর্তারা। তারা সরকারের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীদের বিনা প্রতিযোগিতায় বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের সুযোগ দিয়েছেন। সামিট গ্রুপ, এস আলম গ্রুপ, ইউনাইটেড গ্রুপসহ বিভিন্ন প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠান এ সুযোগের মূল সুবিধাভোগী।

ক্যাপাসিটি চার্জের হিসাব : বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্যানুসারে, গত ১৫ বছরে ১ লাখ ৬ হাজার কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ পরিশোধ করা হয়েছে, যার উল্লেখযোগ্য অংশ চলে গেছে নীতিনির্ধারক ও প্রভাবশালীদের পকেটে। এর মাধ্যমে সরকারের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা বিশাল অংকের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে এবং তা বিদেশে পাচার করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

ক্যাপাসিটি চার্জ ও টেন্ডার ছাড়াই লাইসেন্স প্রদান : ২০১০ সালে রেন্টাল-কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো আপৎকালীন চাহিদা মেটানোর জন্য অনুমোদন পেলেও, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই প্রকল্পগুলোকে টিকিয়ে রাখা হয়েছে। টেন্ডার ছাড়াই এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের লাইসেন্স দেয়া হয়, ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ বাড়ার পাশাপাশি ক্যাপাসিটি চার্জও অতিরিক্ত হয়ে যায়। বিদ্যুৎ খাতে এ ধরনের অনিয়মের মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা বিপুল অংকের মুনাফা অর্জন করেছে, যা সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে সম্ভব হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ক্যাপাসিটি চার্জের টাকার সিংহভাগই বিদেশে পাচার করা হয়েছে।

সামিট গ্রুপের প্রভাব ও লাভ : সামিট গ্রুপ, এস আলম গ্রুপ, ইউনাইটেড গ্রুপ এবং অন্যান্য প্রভাবশালী ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান এই বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ নিয়ন্ত্রণ করেছে। সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আজিজ খান ক্যাপাসিটি চার্জের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছেন। সামিট গ্রুপের বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো বাংলাদেশের বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনের একটি বড় অংশ নিয়ন্ত্রণ করে এবং ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ বিপুল অংকের অর্থ সংগ্রহ করেছে। ২০১৯ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে সামিট গ্রুপকে ৪ হাজার ৪০৬ কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ প্রদান করা হয়, যা মোট ক্যাপাসিটি চার্জের প্রায় ১২.৫৭ শতাংশ। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় এসব সুবিধা পেয়ে সামিট গ্রুপ সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত