দেশের শেয়ারবাজারে এক দিনের ঊর্ধ্বমুখী অবস্থা থাকার পর পুনরায় অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবস গতকাল বুধবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমলেও, ওষুধ ও বস্ত্র খাতের শেয়ারগুলোর অবদানে সামান্য বেড়েছে প্রধান মূল্যসূচক। দুই খাতের বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বৃদ্ধি এই সূচককে ঊর্ধ্বমুখী রাখার পেছনে মূল ভূমিকা পালন করেছে। অন্যদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) শেয়ারবাজারে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বেড়ে মূল্যসূচককে ঊর্ধ্বমুখী করেছে। একইসাথে, সিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও কিছুটা বেড়েছে।
লেনদেনের শুরু ও বাজারের অস্থিরতা : গতকাল বুধবারের লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বৃদ্ধির মাধ্যমে। ফলে ডিএসইর প্রধান সূচক লেনদেনের এক পর্যায়ে ৪১ পয়েন্ট পর্যন্ত বেড়ে যায়। তবে, প্রথম ঘণ্টার লেনদেন শেষে বাজারের চিত্র পরিবর্তন হতে থাকে। বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম কমতে শুরু করে, যা বাজারের স্থিতিশীলতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এই পরিস্থিতিতে, বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ঋণাত্মক ধারায় চলে আসে। তবে, এই অস্থিরতার মধ্যেও ওষুধ ও বস্ত্র খাতের শেয়ারের দাম বৃদ্ধির ফলে বাজারের প্রধান সূচক ঊর্ধ্বমুখী হতে সক্ষম হয়। দিনশেষে, বাজারের লেনদেন সমাপ্ত হলে ডিএসইর প্রধান সূচক সামান্য হলেও ঊর্ধ্বমুখী থেকে যায়।
লেনদেন ও মূল্যসূচকের পরিবর্তন : ডিএসইতে দিনের শেষে বিভিন্ন খাতের ১৬৩টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে, যখন ১৭২টি প্রতিষ্ঠানের দাম কমেছে। এছাড়াও, ৬২টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম অপরিবর্তিত ছিল। বস্ত্র খাতে ৩৩টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বেড়েছে এবং ১২টির দাম কমেছে। অন্যদিকে, ওষুধ খাতের ১৭টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বেড়েছে এবং ১২টির দাম কমেছে। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের দাম কমার পরও ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ১১ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ৭১৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। তবে, বাছাই করা ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৬ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ১০৭ পয়েন্টে অবস্থান করছে। ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক ৫ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ২৪০ পয়েন্টে অবস্থান করেছে।
লেনদেনে ঊর্ধ্বগতি : ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও বৃদ্ধি পেয়েছে। দিনের মোট লেনদেন হয়েছে ৬২৫ কোটি ১৫ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট। এর আগের কার্যদিবসে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৫৬২ কোটি ৭২ লাখ টাকা, যা থেকে দেখা যায়, লেনদেন বেড়েছে ৬২ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। এদিন, লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষস্থান দখল করে অগ্নি সিস্টেম, যার মোট লেনদেন ছিল ৩২ কোটি টাকা। দ্বিতীয় স্থানে থাকা লিন্ডে বাংলাদেশের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২২ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। তৃতীয় স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবলস, যার শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২০ কোটি ২৪ লাখ টাকার। ডিএসইতে লেনদেনের শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আরো রয়েছে সোনালী আঁশ, এনআরবি ব্যাংক, গ্রামীণফোন, ইসলামী ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, ইবনে সিনা এবং একমি ল্যাবরেটরিজ।
সিএসইর পরিস্থিতি : চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) সূচক বেড়েছে। সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই ৩৪ পয়েন্ট বেড়ে লেনদেন শেষ করেছে। সিএসইতে মোট ২৩৯টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১১৪টির শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে, ৯০টির দাম কমেছে এবং ৩৫টির দাম অপরিবর্তিত ছিল। সিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ৫ কোটি ৯১ লাখ টাকা, যা আগের দিনের ৫ কোটি ৭৮ লাখ টাকার তুলনায় সামান্য বেশি। অবশেষে, ওষুধ ও বস্ত্র খাতের প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বৃদ্ধির কারণে দেশের শেয়ারবাজার সামান্য হলেও ঊর্ধ্বমুখী অবস্থানে রয়েছে। বাজারে অস্থিরতা সত্ত্বেও, এই দুই খাতের অবদান সূচককে সামান্য ঊর্ধ্বমুখী রাখতে সক্ষম হয়েছে।