বাংলাদেশের অর্থ, বাণিজ্য এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বৈষম্য দূর করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেছেন, ‘আমরা ফেরেশতা নই, আমাদের ভুলগুলো ধরিয়ে দিন। আমরা জনগণের সহায়তা চাই।’ গত মঙ্গলবার রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে ২৪তম আইসিএবি ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড প্রদান অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি। সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সমাজে আকাশসমান বৈষম্য বিরাজ করছে। অনেক মানুষ মাসে একবারও মাংস খেতে পারেন না। এটি দুঃখজনক হলেও এটাই আমাদের বাস্তবতা।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমরা এই বৈষম্য দূর করার চেষ্টা করছি এবং এটি এমন এক সমস্যা যা আমরা সহনীয়ভাবে গ্রহণ করতে পারি না।’ তিনি সমাজের এক বাস্তব উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, ‘অফিসের এক পিয়নকে আমি জিজ্ঞাসা করলাম, সে কী নিয়ে এসেছে লাঞ্চে। টিফিন ক্যারিয়ারে কিছু কাঁচা কলা আর একগাদা ঝোল দেখে আমি মর্মাহত হই। সে জানালো, মাসে একবারও মাংস খেতে পারে না। এটাই অধিকাংশ মানুষের জীবনযাত্রার প্রতিচ্ছবি।’ অর্থ উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, ‘আমরা বৈষম্য দূর করার জন্য কাজ করছি এবং এটি এমন একটি চ্যালেঞ্জ যা অগ্রহণযোগ্য। জনগণকে আমাদের ভুলগুলো ধরিয়ে দেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা সহযোগিতা চাই।’ অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ব্যাংকিং খাতের বিষয়ে বলেন, ‘এই সময়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা সবচেয়ে বেশি জরুরি। যদি টাকা-পয়সার হিসাব ঠিকমতো না রাখা হয়, তবে একসময় তা ধরা পড়ে যাবে।’ তিনি ব্যাংকিং ব্যবস্থার বর্তমান অবস্থার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন ব্যাংকের প্রতিবেদন পর্যবেক্ষণ করছি এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রকৃত চিত্র প্রকাশ পায় না।’ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নিয়ে নানা ধরনের অনুরোধ আসে উল্লেখ করে উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘কেউ বলে, স্যার, এই লোক চুরি করে, একে দায়িত্ব থেকে সরান; কিংবা ওই লোক ভালো, তাকে দায়িত্বে আনেন। এভাবে নানা বার্তা আসে। এর মধ্যে অনেক প্রকৃত অভিযোগ রয়েছে। আবার অনেকে নিজের স্বার্থের জন্যও বলে। তবে যারা প্রকৃত অভিযোগ তুলে ধরেন, সেগুলো বিবেচনা করা হচ্ছে।’ সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বিশেষ পরিস্থিতিতে আমরা একটা দল (টিম) বর্তমানে দায়িত্বে এসেছি। আমরা ক্ষমতা গ্রহণ করিনি, বরং দায়িত্ব পালন করতে এসেছি। তবে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে গিয়ে ভেতরে ঢুকে সব জায়গায় ভীতিকর (হরেন্ডাস) অবস্থা দেখছি। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। আমরা কাজ করছি; আমাদের ভুল হলে ধরিয়ে দেবেন।’ দুষ্টের দমন ও শিষ্টের লালনের জন্য প্রতিষ্ঠানের সঠিক নিরীক্ষা প্রয়োজন বলে জানান উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, সততা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি সবচেয়ে বেশি জরুরি। যদিও আমাদের দেশে এসব অভ্যাস তৈরি হয়নি। বরং আমাদের দেশে কাজ করতে গিয়ে প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ও নিরীক্ষকদের মধ্যে একধরনের সখ্য হয়ে যায়। ম্যানেজমেন্ট যে কাগজপত্র দেয়, তার ওপরে ভিত্তি করেই নিরীক্ষা করা হয়, বিস্তর অনুসন্ধান হয় না।। এটা ভালো অভ্যাস নয়। অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা দায়িত্ব নেয়ার পরে দেখছি যে কী অবস্থা রয়েছে ব্যাংকগুলোতে। প্রায় সব ব্যাংকের নিরীক্ষা প্রতিবেদন মানসম্মত নয়। মানের বিবেচনায় এগুলো সব ডিসকোয়ালিফায়েড হওয়া উচিত।’