পেট্রোবাংলা কার্যালয়ে হামলা
পাঁচ কর্মকর্তা বরখাস্ত তিতাসের এক কর্মকর্তার পদাবনতি
প্রকাশ : ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিনিধি
তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানির নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে শাহনেওয়াজ পারভেজের নিয়োগের বিরোধিতা করে পেট্রোবাংলার প্রধান কার্যালয় পেট্রো সেন্টারে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় পেট্রোবাংলার পাঁচজন কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তাছাড়া, তিতাস গ্যাসের এক মহাব্যবস্থাপককে পদাবনতি দিয়ে উপমহাব্যবস্থাপক করা হয়েছে। পেট্রোবাংলা এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, গত মঙ্গলবার ওই হামলার ঘটনার পরপরই ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার (সিসিটিভি) ভিডিও দেখে হামলায় জড়িতদের চিহ্নিত করা হয়েছে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সাময়িক বরখাস্ত হওয়া ব্যক্তিরা হলেন- মো. তারিকুল ইসলাম, উপমহাব্যবস্থাপক (অনুসন্ধান ও সমীক্ষা প্রকল্প), মো. আব্দুল জলিল, উপমহাব্যবস্থাপক (সেবা), মো. ফজলুল হক, ব্যবস্থাপক (পরিকল্পনা কৌশল), মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন, ব্যবস্থাপক (ইঞ্জিনিয়ারিং), এবং মো. নজরুল ইসলাম, উচ্চমান সহকারী, প্রশাসন বিভাগ। তাদের মঙ্গলবার থেকেই বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। একই সাথে, তিতাস গ্যাস কোম্পানির মহাব্যবস্থাপক (কারিগরি ক্যাডার) মো. হেলালউদ্দিন তালুকদারকে পদাবনতি দিয়ে উপমহাব্যবস্থাপক করা হয়েছে। তিতাস গ্যাসের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হারুনুর রশীদ মোল্লাহর ইন্ধনে এই হামলা হয়েছে বলে অনেকেই ধারণা করছেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় হারুনুর রশীদ মোল্লাহকে তিতাসের এমডি পদ থেকে সরিয়ে নতুন এমডি হিসেবে শাহনেওয়াজ পারভেজকে নিয়োগ দেয়া হয়, যিনি গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেডের (জিটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। পেট্রোবাংলার এক কর্মকর্তা বলেন, ‘নতুন এমডি দায়িত্ব গ্রহণের পর তিতাসের কিছু দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তা নিজেদের অপকর্ম ফাঁস হওয়ার ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। এই কারণেই তারা তাকে দায়িত্ব গ্রহণে বাধা দেয়ার চেষ্টা করে এবং এরপর হামলা সংঘটিত হয়।’ গত মঙ্গলবার সকালে শাহনেওয়াজ পারভেজ তার দপ্তরে যোগদান করতে গেলে তিতাসের কিছু কর্মকর্তা এবং কর্মচারী তাকে বাধা দেয়। এর কিছুক্ষণ পর শতাধিক লোক লাঠিসোঁটা নিয়ে পেট্রোবাংলা কার্যালয়ে হামলা চালায়। তারা পেট্রোবাংলার সামনের কাচের গেট ভেঙে ফেলে এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হাজিরার জন্য নির্মিত ই-গেটেও ভাঙচুর করে। সিঁড়ি বেয়ে চতুর্থ তলায় ওঠার সময় বিভিন্ন ফ্লোরে রাখা ফুলের টব ভেঙে ফেলে এবং তা নিচে ফেলে দেয়। হামলাকারীরা পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানের দপ্তরেও আক্রমণের চেষ্টা করে। বাধা দেয়ার সময় পেট্রোবাংলার কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারী আহত হন। তাদের মধ্যে চারজন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন, এবং একজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পেট্রোবাংলা এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তাদের আওতাধীন কোম্পানিগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগের বিষয়টি আইনত পেট্রোবাংলার এখতিয়ারভুক্ত। তিতাসের কোনো কর্মকর্তাকে এই পদে নিয়োগ দেয়ার মতো মেধা তালিকায় থাকা না থাকায় পেট্রোবাংলা তার বাইরে থেকে একজন সৎ ও দক্ষ কর্মকর্তাকে নিয়োগ করেছে। এই নিয়োগের বিরোধিতা করে তিতাসের দুর্নীতিগ্রস্ত একটি চক্র পেট্রোবাংলা কার্যালয়ে হামলা চালিয়েছে। বিবৃতিতে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, ‘তিতাসের দুর্নীতিগ্রস্ত চক্রটি তাদের অপকর্ম আড়াল করার জন্য এবং বর্তমান জ্বালানি খাতে অস্থিতিশীলতা তৈরির উদ্দেশ্যে এই হামলা চালিয়েছে। পেট্রোবাংলা এ ঘটনার পর দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে এবং ভবিষ্যতে এর পুনরাবৃত্তি রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।’ পেট্রোবাংলার কর্মকর্তাদের মতে, নতুন এমডি দায়িত্ব গ্রহণ করার পর তিতাসের মধ্যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।