ঢাকা ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বিশ্বব্যাংকের কাছে সরকারের ১০০ কোটি ডলারের আবেদন

বিশ্বব্যাংকের কাছে সরকারের ১০০ কোটি ডলারের আবেদন

বাংলাদেশ সরকার বিশ্বব্যাংকের কাছে ১০০ কোটি ডলারের বাজেট সহায়তা চেয়েছে। এই অর্থ সহায়তা মূলত জ্বালানি খাতে খরচ মেটানোর জন্য ব্যবহৃত হবে এবং তা দুই কিস্তিতে দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) এই সহায়তার জন্য বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করছে। জানা গেছে, এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করতে বিশ্বব্যাংকের একটি দল আগামী সপ্তাহে ঢাকায় আসবে। দলটি যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনের প্রধান কার্যালয় থেকে আসছে এবং বৈঠকে অর্থনীতির বিভিন্ন খাত নিয়ে আলোচনা হবে। সরকার ১০০ কোটি ডলার চাইলেও, কতটা সহায়তা পাওয়া যাবে তা নির্ভর করবে চূড়ান্ত আলোচনা ও শর্তাবলীর ওপর।

বাজেট সহায়তার প্রয়োজনীয়তা : বৈদেশিক মুদ্রার মজুত কমে যাওয়া এবং ডলার সংকটের কারণে সরকার বাজেট সহায়তা চাচ্ছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে এবং ডলার সংকট থেকে বের হতে সরকারের মূল লক্ষ্য হলো রপ্তানি আয় বৃদ্ধি, প্রবাসী আয় বাড়ানো, এবং বৈদেশিক ঋণের মাধ্যমে দেশীয় প্রকল্পগুলোতে তহবিল সংস্থান করা। এ ছাড়া, বাজেট সহায়তা গ্রহণও গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। জ্বালানি খাতে বিশেষত বিদ্যুৎ ও জ্বালানির খরচ মেটাতে বাজেট সহায়তার ব্যবহার পরিকল্পনা করা হয়েছে। যেহেতু জ্বালানি খাতের ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে, তাই এই অর্থ সহায়তা দিয়ে ওই খাতের খরচ কমিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত শক্তিশালী করার লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে।

উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার শর্তাবলী : এডিবি, বিশ্বব্যাংকসহ বহুজাতিক ঋণদাতা সংস্থাগুলো সাধারণত বাজেট সহায়তা দেয়ার সময় কিছু নির্দিষ্ট শর্ত দিয়ে থাকে। এই শর্তগুলোতে প্রায়ই থাকে আর্থিক খাতের সংস্কার, রাজস্ব খাতের উন্নয়ন, সুশাসন প্রতিষ্ঠায় আইনি সংস্কার, ভর্তুকি হ্রাস, করছাড় কমানো, এবং আর্থিক খাতের অন্যান্য বড় ধরনের সংস্কার।

এই শর্তাবলীর আলোকে ঋণের টাকা ছাড়ের বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়। বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে এই সহায়তা পাওয়ার জন্য বাংলাদেশের অর্থনৈতিক নীতি ও বিভিন্ন খাতের সংস্কারে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোর শর্তাবলী পূরণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

অন্য উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার সঙ্গে আলোচনা : এদিকে, ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য সরকার এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)-এর কাছ থেকেও ৪০ কোটি ডলারের সহায়তা পেতে আলোচনা করছে। এডিবি থেকে সহায়তা পেলে আরো কিছু উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা, যেমন এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক (এআইআইবি) ও কোরিয়ার কাছ থেকেও সহজ শর্তে অর্থ সহায়তা পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই পরিকল্পনার আওতায় এআইআইবি থেকে ২০ কোটি ডলার এবং কোরিয়া থেকে ১০ কোটি ডলার সহায়তা পাওয়া সম্ভব হতে পারে। গত পাঁচ বছরে, এডিবি ও বিশ্বব্যাংকসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থাগুলোর কাছ থেকে বাংলাদেশ সরকার ৮০০ কোটি ডলারের বেশি বাজেট সহায়তা গ্রহণ করেছে। এই সহায়তার মাধ্যমে সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো এগিয়ে নেয়া হয়েছে এবং অর্থনীতির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খাতের সংস্কার প্রক্রিয়া পরিচালিত হয়েছে।

সম্ভাব্য অর্থনৈতিক প্রভাব : বিশ্বব্যাংক থেকে ১০০ কোটি ডলারের এই বাজেট সহায়তা দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল করতে সহায়ক হবে। বৈদেশিক মুদ্রার সংকট কাটাতে এই বাজেট সহায়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। ডলার সংকট মোকাবিলায় রপ্তানি আয় ও প্রবাসী আয়ের পাশাপাশি বৈদেশিক ঋণ গ্রহণের মাধ্যমে বাজেট সহায়তা দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার এক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ হিসেবে কাজ করবে। সরকার আশা করছে, বৈদেশিক ঋণের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে এবং দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক লক্ষ্য পূরণে এই ধরনের বাজেট সহায়তা অপরিহার্য ভূমিকা পালন করবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত