ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

গ্যাস সংকটে বিপর্যয়ের মুখে টেক্সটাইল শিল্প, বিপর্যস্ত উৎপাদন

গ্যাস সংকটে বিপর্যয়ের মুখে টেক্সটাইল শিল্প, বিপর্যস্ত উৎপাদন

গ্যাস সংকটের কারণে বাংলাদেশের টেক্সটাইল শিল্প বর্তমানে মারাত্মকভাবে বিপর্যস্ত অবস্থায় রয়েছে। বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিল অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) জানিয়েছে, গ্যাসের অপ্রতুল সরবরাহের কারণে টেক্সটাইল শিল্প এখন কেবল ৩০ শতাংশ সক্ষমতা নিয়ে কাজ করছে। এই সংকটের প্রভাবে দেশের অন্যতম প্রধান শিল্প খাতটি অর্থনৈতিকভাবে ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। বিটিএমএর সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল জানান, দীর্ঘমেয়াদি গ্যাস সংকট এবং সরকারের পলিসির অভাবে টেক্সটাইল খাতটি চরম বিপর্যয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, কোভিড মহামারির সময়ও এই খাতে কাজ না থাকলেও শ্রমিকদের বেতন দেয়া হয়েছে, কিন্তু গ্যাস সংকটের কারণে বর্তমানে শিল্পটি কার্যত পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। গ্যাস সংকটের জন্য শওকত আজিজ সরকারের যথাযথ নীতিগত সহায়তার অভাবকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, সরকারের পর্যাপ্ত পলিসি সাপোর্ট না থাকায় এই খাতটি ভেঙে পড়ছে। তিনি অভিযোগ করেন, যদি পাচার হওয়া অর্থের ১০ শতাংশও ইনসেনটিভ হিসেবে দেয়া হতো, তবে এই খাতটি পুনরায় ঘুরে দাঁড়াতে পারতো। গ্যাস সরবরাহের কথা বলে গ্যাসের দাম বাড়ানো হলেও পরে পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত না হওয়ায় এলএনজি আমদানি করা হয়, যা শিল্পের ওপর আরো চাপ সৃষ্টি করেছে। তিনি জানান, অতিরিক্ত দাম আদায় করার পরও শিল্পখাতের জন্য গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানো হয়নি। টেক্সটাইল শিল্পে শ্রমিক অসন্তোষ নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন শওকত আজিজ। তিনি বলেন, শ্রমিক অসন্তোষের পেছনে কিছু বহিরাগতদের ইন্ধন রয়েছে। এ ছাড়াও তিনি পুলিশের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, যেভাবে তারা অতীতে সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছে, এবার শিল্পকে রক্ষায় একইভাবে সহায়তা করতে হবে। বিটিএমএর সহ-সভাপতি আবুল কালাম উল্লেখ করেন, শ্রমিকদের বেতন দেয়ার জন্য সরকার স্বল্পসুদের ঋণের ঘোষণা দিলেও, ৯০ শতাংশ কারখানা এখনো সেই ঋণ পায়নি। তিনি আরো জানান, শ্রমিকদের মাঝে গুজব রয়েছে যে সরকার এই ঋণ বিনামূল্যে দিচ্ছে, যা শ্রমিকদের মাঝে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে। বিটিএমএর পরিচালক মোশারফ হোসেন গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টি তুলে ধরে জানান, গত সরকারের আমলে গ্যাসের দাম চারগুণ বেড়ে গিয়েছে। তিনি বলেন, ব্যাংকগুলোর সহযোগিতা না পেলে আগামীতে এই খাতে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়বে। বিটিএমএর সহ-সভাপতি সালেহুজ্জামান জিতু জানান, দেশের একটি পার্শ্ববর্তী দেশ সুতা ডাম্পিং করছে, যা দেশীয় বাজারের জন্য ক্ষতিকর। ভুলতাণ্ডগাউসিয়া এলাকায় গত এক বছর ধরে তীব্র গ্যাস সংকট চলছে, যা স্থানীয় শিল্পের উৎপাদনে বাধা সৃষ্টি করেছে। বিটিএমএর পরিচালক রাজীব হায়দার মুন্না গ্যাস সংকটের মূল কারণ হিসেবে নতুন গ্যাস কূপ খননের অবহেলাকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, সরকারের অবহেলার কারণে নতুন কূপ খনন না করায় দেশ বর্তমানে আমদানি নির্ভর হয়ে পড়েছে এবং গ্যাস সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। তিনি আরো অভিযোগ করেন, পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে ১০০০ কোটি টাকার কাপড় চোরাই পথে দেশে আসছে, যা দেশের টেক্সটাইল খাতের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি সড়কপথে পণ্য আমদানি বন্ধের দাবি জানান, যাতে অবৈধভাবে কাপড় প্রবেশ বন্ধ করা যায়। বিটিএমএর নেতারা আশা প্রকাশ করেছেন যে, যদি সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নেয় এবং টেক্সটাইল খাতে পলিসি সাপোর্ট প্রদান করে, তবে এই খাতটি পুনরায় শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে। তারা গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করার পাশাপাশি ব্যাংক ঋণ পুনঃতফসিলের আহ্বান জানান, যাতে শিল্পটি অর্থনৈতিক সংকট থেকে মুক্তি পেতে পারে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত