চীন বাংলাদেশকে শতভাগ শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যে বড় ধরনের ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে পররাষ্ট্রসচিব মো. জসিম উদ্দিন এই তথ্য জানান।
পররাষ্ট্রসচিব মো. জসিম উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, চীনের রাষ্ট্রদূত জানিয়েছেন যে, সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত সিনো-আফ্রিকান শীর্ষ সম্মেলনে চীন স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য শতভাগ শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাংলাদেশও এই সুবিধা পাবে। এর আগে ২০২২ সালে চীন ৯৮ শতাংশ বাংলাদেশি পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেয়, যেখানে নতুন করে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যসহ ৩৮৩টি পণ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে ঘনিষ্ঠ বাণিজ্যিক সম্পর্ক বিদ্যমান। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ চীন থেকে ১৮ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে, যা বাংলাদেশে আমদানি করা মোট পণ্যের একটি বড় অংশ। অপরদিকে, বাংলাদেশ থেকে চীনে রপ্তানি হয়েছে ৬৭৬ মিলিয়ন ডলারের পণ্য, যা তুলনামূলকভাবে কম। তবে এই নতুন শুল্কমুক্ত সুবিধা বাংলাদেশি পণ্যের জন্য চীনা বাজারে প্রবেশ আরও সহজ করবে, ফলে রপ্তানির পরিমাণও উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়তে পারে।পররাষ্ট্রসচিব আরো জানান, চীনে বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। আম রপ্তানির প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হওয়ার পথে, যা দেশের কৃষি খাতে একটি নতুন দিগন্ত খুলে দেবে। এছাড়া, কাঁঠাল ও পেয়ারাসহ অন্যান্য দেশীয় ফলও শিগগিরই চীনে রপ্তানির জন্য অনুমোদন পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের জন্য চীনা বাজার একটি বিশাল সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র। ২০২০ অর্থবছরে চীন ২ দশমিক ৪ ট্রিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে, তবে এর মধ্যে বাংলাদেশের অংশ মাত্র শূন্য দশমিক শূন্য পাঁচ শতাংশ। এই তথ্যই প্রমাণ করে যে, চীনের সঙ্গে বাণিজ্য সম্প্রসারণের বিপুল সুযোগ রয়েছে এবং নতুন শুল্কমুক্ত সুবিধার মাধ্যমে বাংলাদেশ এই সুযোগের যথাযথ সদ্ব্যবহার করতে পারবে। পররাষ্ট্রসচিব জানান, অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর চীন থেকেই সবচেয়ে বেশি সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে। এ বিনিয়োগের পরিমাণ ৮ মিলিয়ন ডলার, যা দুই দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতার একটি মাইলফলক হিসেবে ধরা যেতে পারে। ভবিষ্যতে এই বিনিয়োগ আরো বৃদ্ধি পাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। এছাড়া, বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং রপ্তানির সম্ভাবনা নিয়ে উভয় দেশের মধ্যে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষত, বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের বৈচিত্র্য বাড়াতে এবং নতুন নতুন পণ্য চীনের বাজারে প্রবেশ করাতে উভয় দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও জোরদার হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
চীনের শতভাগ শুল্কমুক্ত সুবিধা বাংলাদেশের জন্য একটি বড় সুযোগ। এটি শুধুমাত্র রপ্তানি বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে না, বরং দেশের উৎপাদকদের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। বিশেষ করে, কৃষি ও শিল্প খাতে চীনা বাজারে প্রবেশের এই সুযোগ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করবে।
চীনের বিশাল আমদানি বাজারের খুব কম অংশেই বাংলাদেশের পণ্য প্রবেশ করতে পেরেছে। এই নতুন সুবিধা বাংলাদেশের পণ্যকে চীনে প্রতিযোগিতামূলকভাবে প্রবেশ করতে সাহায্য করবে এবং দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরো দৃঢ় হবে।