বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে সরাসরি শিপিং রুট চালুর মাধ্যমে বাণিজ্যের একটি নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে। নতুন এই শিপিং রুটে চীনের নিংবো-ঝুশান বন্দর থেকে ৫৫২টি কনটেইনার নিয়ে এমভি কোটা আঙ্গুন জাহাজটি মাত্র ৯ দিনের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছেছে। এটি আগে ২০ থেকে ২৫ দিন সময় নিত। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টা ৪২ মিনিটে চট্টগ্রাম বন্দরের ১৩ নম্বর জেটিতে জাহাজটি নোঙর করে। সিঙ্গাপুর-ভিত্তিক প্যাসিফিক ইন্টারন্যাশনাল লাইনস (পিআইএল) পরিচালিত এই জাহাজের আগমন চীন-বাংলাদেশ বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের টার্মিনাল ম্যানেজার কুদরত-ই-খুদা জানান, ‘এমভি কোটা আঙ্গুন রেকর্ড সময়েই যাত্রা সম্পন্ন করেছে। সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া বা কলম্বোর মতো বন্দরে ট্রান্সশিপমেন্টের প্রয়োজন হয়নি, যা সময় এবং খরচ কমিয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘জাহাজটি ১৯ সেপ্টেম্বর পণ্য খালাস শেষে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে রওনা দেবে বলে আশা করা হচ্ছে।’ এ সরাসরি শিপিং রুট চালুর ফলে ট্রানজিট সময় উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে, যা বাংলাদেশের শিল্পখাতে বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতের জন্য ব্যাপক সুবিধা বয়ে আনবে। পোশাক শিল্পের মেশিনারি এবং কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে এটি বিশেষভাবে সহায়ক হবে। পিআইএলের অপারেশন অফিসার মাহতাব উদ্দিন বলেন, ‘এই সরাসরি রুটটি ট্রানজিট সময় এবং খরচ কমাবে, যা আমাদের শিল্প খাতের জন্য একটি বড় ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।’ তিনি আরো জানান, ‘প্রথম যাত্রাতেই রপ্তানির চাহিদা বাড়ছে। আমরা আশা করছি, ৪০০-৫০০টি কনটেইনার চীনে রপ্তানি করা সম্ভব হবে।’ চীন বর্তমানে বাংলাদেশের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার। ২০২২-২৩ অর্থবছরে দুই দেশের মধ্যে মোট ২৪ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য হয়েছে, যার মধ্যে বাংলাদেশ চীন থেকে ২২.৯ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে এবং ৬৭৭ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের প্রায় ৭০ শতাংশ কাঁচামাল চীন থেকে আসে, যা এ পর্যন্ত ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে পরিবহন করা হতো।
নতুন সরাসরি শিপিং পরিষেবা চালু হওয়ার ফলে কাঁচামাল ও মেশিনারি দ্রুত সরবরাহ করা যাবে, যা দেশের শিল্পখাতের জন্য বিশেষ উপকারী হবে। বিশেষ করে যেসব খাত চীনা আমদানির ওপর নির্ভরশীল, তাদের জন্য এই রুটটি সময় ও খরচ কমাবে। বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ এই পরিষেবার গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসায়ীরা সরাসরি শিপিং পরিষেবার দাবি জানিয়ে আসছিলেন। এটি কাঁচামাল ও মেশিনারির দ্রুত আমদানির জন্য প্রয়োজনীয় ছিল।’ তিনি আরো উল্লেখ করেন, ‘শিপিং কোম্পানির মধ্যে প্রতিযোগিতা বাড়লে মালামাল পরিবহন খরচও কমে আসবে, যা বাংলাদেশের ব্যবসায়িক পরিবেশের জন্য উপকারী হবে।’ তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘চীন-চট্টগ্রাম সরাসরি শিপিং রুট চালু হওয়া একটি বড় সুবিধা হলেও, এ পরিষেবার নিয়মিততা বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’ উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্য বাড়াতে এবং দ্রুত ও সাশ্রয়ী শিপিং সমাধান প্রদান করতে নতুন এ রুটটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।