বাংলাদেশের জন্য ভারতের রপ্তানি কমেছে ২৮ শতাংশ

প্রকাশ : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

২০২৩ সালের আগস্ট মাসের তুলনায় ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে বাংলাদেশে ভারতের রপ্তানি ২৮ শতাংশ কমেছে। ভারতীয় বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের আগস্টে ভারত বাংলাদেশে ৯৪৩ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছিল, যা চলতি বছরের আগস্টে নেমে এসেছে ৬৮১ মিলিয়ন ডলারে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশ থেকে অর্ডার কমে যাওয়ার প্রভাব : ভারতের রেটিং এজেন্সি ক্রিসিল জানিয়েছে, বাংলাদেশ থেকে অর্ডার কমে যাওয়ার কারণে ভারতীয় টেক্সটাইল শিল্পে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। ভারত মূলত বাংলাদেশে গার্মেন্টস শিল্পের জন্য কাঁচামাল ও অন্যান্য ইনপুট আইটেম সরবরাহ করে থাকে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে এই রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে, ভারতের তুলা রপ্তানি বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে।

ভারতের গার্মেন্টস খাতের সম্ভাবনা : বাংলাদেশের রপ্তানি কমায় ভারতের গার্মেন্টস খাত এই সুযোগকে কাজে লাগাতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেছেন শিল্পগোষ্ঠী রেমন্ডের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (সিএমডি) গৌতম সিংহানিয়া। তিনি মনে করেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে গার্মেন্টস উৎপাদনের একটি বড় অংশ ভারতে চলে আসতে পারে। সিংহানিয়া বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশে কাপড় বিক্রি করি, কিন্তু সংকটের কারণে এখন এসব ব্যবসা আমাদের কাছে ফিরে আসছে। একবার যখন ব্যবসা আমাদের দেশে এসেছে, আমরা এটাকে আর ফিরে যেতে দিতে পারি না।’ তিনি আরো বলেন, ‘ভারতের তৈরি পোশাক ও কাপড় তৈরির শিল্প অনেক সমৃদ্ধ। তাই আমরা এই খাতে সাফল্য অর্জনের জন্য প্রস্তুত।’

তুলা রপ্তানিতে চ্যালেঞ্জ ও গার্মেন্টস খাতের অবস্থা : চেন্নাইভিত্তিক ফরিদা গ্রুপের চেয়ারম্যান রফিক আহমেদ জানিয়েছেন, বাংলাদেশের গার্মেন্টস খাতে অর্ডার কমে যাওয়ায় ভারত থেকে তুলা ও অন্যান্য কাঁচামাল রপ্তানি কমে গেছে। তিনি বলেন, ‘পশ্চিমা ক্রেতারা নতুন অর্ডার দিচ্ছে না। যদিও বাংলাদেশের শ্রমিকরা ওভারটাইম কাজ করছেন অর্ডার পূরণের জন্য, তবে নতুন অর্ডার খুবই কম আসছে। এর ফলে ভারতের তুলা রপ্তানি ব্যাহত হচ্ছে।’

বাংলাদেশের পরিস্থিতি ও ভবিষ্যতের সম্ভাবনা : বাংলাদেশের গার্মেন্টস ও ফুটওয়্যার শিল্প, যা রপ্তানি নির্ভর, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে পুরোনো ক্রয়াদেশগুলোর পণ্য সরবরাহ করতে শ্রমিকরা অতিরিক্ত কাজ করছেন এবং শিল্পগুলো আবারো কাজে ফিরেছে। কিন্তু বিদেশি ক্রেতারা সাময়িকভাবে ক্রয়াদেশ স্থগিত রেখেছেন, যা ভারতীয় রপ্তানিতে প্রভাব ফেলছে। বিশেষ করে, বাংলাদেশের তুলা আমদানি হ্রাস পাওয়ায় ভারতীয় টেক্সটাইল খাত সরাসরি ক্ষতির মুখে পড়েছে। ক্রিসিলের মতে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা যদি দীর্ঘায়িত হয়, তবে ভারতের কিছু রপ্তানি খাত ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তবে এই প্রভাব খুব গুরুতর হবে না, কারণ ভারতের মোট রপ্তানির মাত্র আড়াই শতাংশ বাংলাদেশে যায় এবং দেশটির মোট আমদানির মাত্র দশমিক ৩ শতাংশ আসে বাংলাদেশ থেকে।

পেঁয়াজ রপ্তানি ও বাংলাদেশের বাজারের প্রতিক্রিয়া : বাংলাদেশে পেঁয়াজের মূল্য কমানোর উদ্দেশ্যে ভারত সম্প্রতি পেঁয়াজের ন্যূনতম রপ্তানি মূল্য (এমইপি) প্রত্যাহার করেছে। এর ফলে বাংলাদেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম কমার সম্ভাবনা রয়েছে। টনপ্রতি ৫৫০ ডলারের এমইপি বাতিল করার পর থেকে বাংলাদেশে এই পণ্যটির সরবরাহ বৃদ্ধি পাবে এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যের আমদানিতে ব্যয় কমবে। সামগ্রিকভাবে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতা ভারতীয় রপ্তানিতে প্রভাব ফেললেও, এই পরিস্থিতি ভারতকে নিজস্ব গার্মেন্টস ও টেক্সটাইল শিল্পকে শক্তিশালী করার সুযোগ এনে দিয়েছে। বিশেষ করে, যেসব ক্রয়াদেশ বাংলাদেশ থেকে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের কাছে চলে আসছে, সেগুলো কাজে লাগিয়ে ভারত এই খাতকে এগিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করছে।