অনিয়ম ও সুশাসনের অভাব

আমানতকারীর সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে এনএফবিআই খাতে

প্রকাশ : ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশের ব্যাংক-বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে (এনএফবিআই) অনিয়ম, দুর্নীতি ও সুশাসনের অভাবের কারণে গ্রাহকদের আস্থা হ্রাস পাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে ক্রমবর্ধমানভাবে আমানতকারীরা তাদের অর্থ তুলে নিচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের এপ্রিল থেকে জুন প্রান্তিকে ৪৭ হাজার আমানতকারী এনএফবিআই থেকে সরে গেছেন।

ক্রমবর্ধমান আস্থাহীনতা ও আমানতকারীর সংখ্যা হ্রাস : বাংলাদেশে বর্তমানে ৩৫টি ব্যাংক-বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যার মধ্যে ৩টি সরকারি। ২০২৩ সালের জুন শেষে এসব প্রতিষ্ঠানে মোট আমানতকারী সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ৮০ হাজার, যা মার্চে ছিল ৪ লাখ ২৭ হাজার।

একই সময়ে আমানতের পরিমাণ কিছুটা বৃদ্ধি পেয়ে ৪৫ হাজার ১১৬ কোটি টাকা দাঁড়ালেও আমানতকারীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। বাংলাদেশ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ কায়সার হামিদ জানান, ‘আমাদের সেক্টরে ছোট ডিপোজিটের অ্যাকাউন্ট সংখ্যা কমে যাওয়ার ফলে আমানতকারীর সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে।’

অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রভাব : বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের সাবেক মহাপরিচালক তৌফিক আহমদ চৌধুরী মনে করেন, এনএফবিআই খাতে অনিয়ম ও অপরাধের কারণে গ্রাহকদের মধ্যে আস্থার সঙ্কট তৈরি হয়েছে। ‘এখানে অনেক অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, যা গ্রাহকদের ভরসা কমিয়ে দিয়েছে,’ বলেন তিনি। একই ভাবে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, এনএফবিআই খাতের বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান নাজুক অবস্থায় রয়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরে গ্রাহকদের আমানত ফেরত দিতে পারছে না, যা গ্রাহকদের মধ্যে অসন্তোষ বাড়াচ্ছে। এ ছাড়া, মূল্যস্ফীতি এবং দৈনন্দিন ব্যয়ের চাপেও অনেক গ্রাহক তাদের সঞ্চিত অর্থ তুলে নিচ্ছেন।

আমানতের ধারা ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকা : বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এনএফবিআই খাতে কোটি টাকার উপরের হিসাবের সংখ্যা তিন মাসে মাত্র ২৪টি বেড়েছে। ২০২১ সালে এনএফবিআই খাতে আমানতকারীর সংখ্যা ৭ লাখ ৬২ হাজার ছিল, যা দ্রুত কমে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে ২ লাখ ১০ হাজারে নেমে আসে। আইপিডিসি ফাইন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোমিনুল ইসলাম বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর নীতিমালার কারণে এনএফবিআই খাত টিকে থাকার জন্য কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছে। ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালায় পরিবর্তন আনা জরুরি, নইলে এ সেক্টরের উন্নতি সম্ভব নয়,’ বলেন তিনি। এনএফবিআই খাতের বর্তমান সংকট মোকাবিলায় কার্যকর সুশাসন ও মনিটরিং ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে, গ্রাহকদের আস্থা পুনরুদ্ধার করা কঠিন হয়ে পড়বে।