ঢাকা ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি নিয়ে উদ্বেগ

ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি নিয়ে উদ্বেগ

ইথিওপিয়ার রাজধানী আদ্দিস আবাবার মেরকাটো মার্কেটে মেদানিত ওলডেজেব্রিয়েলের ছোট ফ্যাশন হাউসটি ক্রমশ সংকটের মুখে পড়ছে। গত দুই মাসে পোশাকের দাম দ্বিগুণ হওয়ায় ক্রেতারা তাঁর দোকানে আসা বন্ধ করে দিয়েছেন। তিনি তুরস্ক ও সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে পোশাক আমদানি করলেও ব্যবসা এখন মন্দার দিকে। গত জুলাই মাসে ইথিওপিয়ার অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসে, যখন দেশটি তার মুদ্রা ‘বির’-কে ভাসমান করে। এর ফলে, ডলারের বিপরীতে বিরের মান রাতারাতি এক-তৃতীয়াংশ কমে যায়। মুদ্রা ভাসমান হওয়ার আগে ১ ডলারের বিনিময়ে পাওয়া যেত ৫৫ বির, যা এখন ১১২ বিরে দাঁড়িয়েছে।

এই ধাক্কায় দেশজুড়ে মূল্যস্ফীতি তীব্রতর হয়েছে এবং সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা আরো কঠিন হয়ে পড়েছে। মুদ্রার মান কমার কারণ হিসেবে দেখা যাচ্ছে যে, ইথিওপিয়া ২০২২ সালে রপ্তানি থেকে আয় করেছে ১১ বিলিয়ন ডলার, কিন্তু আমদানির জন্য খরচ করতে হয়েছে ২৩ বিলিয়ন ডলার।

খাদ্য, যন্ত্রপাতি এবং জ্বালানি প্রধান আমদানিপণ্য। তবে, বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি এতটাই তীব্র যে, মুদ্রা ভাসমান করার আগে দেশের হাতে মাত্র দুই সপ্তাহের আমদানি দায় মেটানোর মতো মুদ্রা ছিল। বিশ্বব্যাংক এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ইথিওপিয়াকে অর্থায়নের প্রস্তাব দিলেও, তারা মুদ্রাকে ভাসমান করার শর্তে এ অর্থায়ন স্থগিত রেখেছিল। বর্তমানে ইথিওপিয়ার এক-তৃতীয়াংশ মানুষ প্রতিদিন ২.১৫ ডলারের কম আয় করেন এবং এ সিদ্ধান্ত তাদের জন্য বড় ধরনের আঘাত হয়ে দাঁড়িয়েছে।

মূল্যস্ফীতি এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির ধাক্কা : ইথিওপিয়ায় এরই মধ্যে মূল্যস্ফীতি ২০২২ সালে ছিল ৩০ শতাংশ। কোভিড-১৯ মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, এবং দেশের অভ্যন্তরীণ সংঘাতসহ বিভিন্ন সমস্যার কারণে এই হার আরো বেড়েছে। মেরকাটো বাজারের এক ক্রেতা জানান, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম এক-তৃতীয়াংশ বেড়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘আমার পরিবারে প্রবাসী সদস্যদের পাঠানো বৈদেশিক মুদ্রা ছাড়া আমাদের পক্ষে টিকে থাকা অসম্ভব।’

মুদ্রা ভাসমান করার ইতিবাচক দিক : স্বল্পমেয়াদে এই পদক্ষেপটি কঠিন মনে হলেও, ইন্টারন্যাশনাল গ্রোথ সেন্টারের অর্থনীতিবিদ টিওড্রস মেকোনেন জেব্রেওয়ল্ডের মতে, এটি ইথিওপিয়ার সামনে থাকা একমাত্র বিকল্প ছিল।

মুদ্রার বিনিময় হারের এই পরিবর্তন রপ্তানি প্রতিযোগিতা বাড়াবে এবং ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে সহজে ডলার কিনতে সাহায্য করবে। এর আগে, কিছু নির্দিষ্ট খাত ছাড়া অন্যান্য ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের বৈদেশিক মুদ্রা কেনা কঠিন ছিল। এ ছাড়া, মুদ্রা ভাসমান করার ফলে কালো বাজারে ডলার কেনাবেচা কমবে বলে আশা করা হচ্ছে। আগে আনুষ্ঠানিক বাজারের তুলনায় কালোবাজারে ডলারের মূল্য অনেক বেশি ছিল, যা এখন সঠিক বিনিময় হারের মাধ্যমে বৈধ পথে হবে।

সংকটের শেষ কোথায়? : ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদ মুদ্রার এই সংস্কারকে সমর্থন করেছেন। তিনি মনে করেন, এর ফলে বিদেশি মুদ্রার ঘাটতি কমবে এবং বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের প্রবাহ বাড়বে। তবে সাধারণ মানুষের মধ্যে এখনো অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। মেরকাটো বাজারে টমেটো এবং বই কিনতে আসা এক ক্রেতা হতাশ কণ্ঠে বলেন, ‘পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে, এমন কোনো আশা আমি দেখছি না।’

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত