বাণিজ্যে আসবে গতি
অক্টোবরেই চালু হচ্ছে বেনাপোলের কার্গো ভেহিকেল টার্মিনাল
প্রকাশ : ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র বেনাপোল স্থলবন্দরে নতুন করে নির্মিত কার্গো ভেহিকেল টার্মিনালটি আগামী অক্টোবর মাসে চালু হচ্ছে। এই টার্মিনালটি চালু হলে বন্দরে প্রায় ১,২০০ থেকে ১,৫০০ ট্রাক একসঙ্গে রাখা যাবে, যা বন্দর কার্যক্রমের গতি বাড়ানোর পাশাপাশি পণ্য লোড ও আনলোড প্রক্রিয়ায়ও দ্রুততা আনবে। এর ফলে যানজট কমার পাশাপাশি সরকারের রাজস্ব আয়ে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সড়ক ও রেল যোগাযোগ সহজ হওয়ার ফলে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে বাণিজ্য ব্যাপকভাবে বেড়েছে। তবে এর পাশাপাশি পণ্য পরিবহনে অসুবিধা এবং যানজটের সমস্যাও বাড়ছে। এ সমস্যার সমাধান এবং বন্দরটির সক্ষমতা বাড়ানোর লক্ষ্যে নেয়া হয়েছে ‘কার্গো ভেহিকেল টার্মিনাল নির্মাণ’ প্রকল্পটি। বেনাপোল স্থলবন্দরের উপ-পরিচালক রাশেদুল সজিব নাজির জানান, প্রায় ২৪ একর জমির ওপর ৩২৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ প্রকল্পের আওতায় ভূমি অধিগ্রহণসহ অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে পার্কিং ইয়ার্ড, কার্গো ভবন, বন্দর সেবা ভবন, ইউটিলিটি ভবন, আধুনিক টয়লেট কমপ্লেক্স, ওয়েব্রিজ স্কেল এবং ফায়ার স্টেশনও নির্মিত হয়েছে। বর্তমানে শুধু বিদ্যুৎ সংযোগের অপেক্ষা চলছে। বিদ্যুৎ সংযোগ পেলে অক্টোবরেই টার্মিনালটি চালু করা সম্ভব হবে। টার্মিনালটি চালু হলে বন্দর এলাকার দীর্ঘদিনের যানজট এবং পণ্যজটের সমস্যা অনেকাংশে কমে আসবে। বন্দরের কার্যক্রম আরো দ্রুত ও কার্যকর হবে। ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং (সিঅ্যান্ডএফ) এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শামছুর রহমান এ বিষয়ে বলেন, টার্মিনাল চালু হলে পণ্য দ্রুত আনলোড হওয়ায় ট্রাকগুলোও দ্রুত বন্দর এলাকা ছেড়ে যাবে। এতে আমদানিকারকদের বাড়তি খরচ যেমন কমবে, তেমনি পণ্য ছাড়ের প্রক্রিয়াও সহজ হবে। ফলে সরকারের রাজস্ব আয়ের ওপরও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। তিনি আরো উল্লেখ করেন যে, টার্মিনালের অবকাঠামো অত্যাধুনিক এবং মানসম্পন্ন হওয়ায় বন্দরের সামগ্রিক কার্যক্রমের গতিশীলতা বৃদ্ধি পাবে। বন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্য মতে, প্রতিদিন বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত থেকে ৭ থেকে ৮ হাজার মেট্রিক টন পণ্য আমদানি হয়। তবে স্থান সংকটের কারণে অনেক পণ্য খোলা আকাশের নিচে সংরক্ষণ করতে হয় এবং ভারতীয় ট্রাকগুলোও দিন-পর-দিন বন্দরে অপেক্ষা করতে বাধ্য হয়। এ কারণে পণ্য আনলোডিং প্রক্রিয়া ধীরগতি হয়। নতুন কার্গো ভেহিকেল টার্মিনাল চালু হলে এসব সমস্যার সমাধান হবে বলে বন্দর ব্যবহারকারীরা আশা করছেন। গত কয়েক বছর ধরে বেনাপোল বন্দরের মাধ্যমে আমদানি পণ্যের পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ২৬ লাখ ৪৪ হাজার মেট্রিক টন পণ্য আমদানি হলেও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে ১৭ লাখ ২১ হাজার মেট্রিক টনে নেমে এসেছে। বেনাপোলের একজন আমদানিকারক এজাজ উদ্দিন টিপু বলেন, ‘বেনাপোল বন্দরে দীর্ঘদিন ধরে পণ্যজটের সমস্যার কারণে আমাদের প্রায়ই জরিমানা দিতে হতো। তবে নতুন টার্মিনালটি চালু হলে এই সমস্যা অনেকাংশে দূর হবে এবং আমাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম আরো সহজ হবে।’ বেনাপোল বন্দরের প্রকল্প পরিচালক এবং তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হাসান আলী বলেন, ‘টার্মিনালের নির্মাণকাজে সর্বোচ্চ গুণগত মান বজায় রাখা হয়েছে। বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ এক সপ্তাহের মধ্যে শেষ হবে এবং অক্টোবর মাসেই টার্মিনালটি উদ্বোধন করা হবে। টার্মিনাল চালু হলে বন্দরের কার্যক্ষমতা বাড়বে এবং দুই দেশের বাণিজ্য আরো সহজ ও গতিশীল হবে।’ যশোর চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান খান বলেন, ‘টার্মিনালটি চালু হলে যানজট এবং পণ্যজট অনেকটা কমে যাবে। তবে ভারতীয় পেট্রাপোল বন্দরের জট নিরসন না হলে এই সুবিধা পুরোপুরি কাজে আসবে না।’ বেনাপোলের নতুন কার্গো ভেহিকেল টার্মিনালটি চালু হওয়ার ফলে বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্যের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে কাজ করবে। পণ্য পরিবহন আরো সহজ হবে, আর এতে উভয় দেশের বাণিজ্যিক কার্যক্রমে গতিশীলতা আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।