বেঁধে দেয়া দাম অকার্যকর
উল্টো বেড়েছে দাম ডিম-মুরগির
প্রকাশ : ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
সরকারি নির্দেশনা মেনে ডিম ও মুরগির দাম নির্ধারণ করে দেয়ার পাঁচ দিন পেরিয়ে গেলেও বাজারে এর কোনো প্রভাব দেখা যাচ্ছে না। বরং সরকার বেঁধে দেয়া দামের চেয়ে উল্টো ডিম ও মুরগির দাম আরো বেড়েছে বলে অভিযোগ করছেন ক্রেতারা। বাজার মনিটরিংয়ের অভাব এবং ব্যবসায়ীদের মূল্য নির্ধারণের পদ্ধতির সমালোচনা করছেন সাধারণ মানুষ ও বিশেষজ্ঞরা।
বাজারে দাম বেড়েছে, মানা হচ্ছে না সরকারি নির্ধারিত মূল্য : রাজধানীর প্রধান বাজারগুলো যেমন কারওয়ানবাজার, রামপুরা, বাড্ডা ও মোহাম্মদপুর ঘুরে দেখা গেছে, ফার্মের বাদামি ডিম প্রতি ডজন ১৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা সরকার নির্ধারিত ১৪২ টাকার তুলনায় ২৩ টাকা বেশি। ব্রয়লার মুরগিও ১৭৫-১৯০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, যেখানে সরকার খুচরা পর্যায়ে এর দাম ১৭৯ টাকা ৫৯ পয়সা নির্ধারণ করেছিল। সোনালি মুরগির দামও বাজারে ২৯০-৩০০ টাকা কেজি, যেখানে সরকারি নির্দেশনায় এর খুচরা মূল্য নির্ধারিত ছিল ২৬৯ টাকা ৬৪ পয়সা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকার বাজার পরিস্থিতি না বুঝেই দাম নির্ধারণ করেছে। রামপুরার এক ব্যবসায়ী আজমত আলী বলেন, ‘করপোরেট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বসে দাম ঠিক করলেই হবে না। সাধারণ ব্যবসায়ীদের কথা না শুনলে সমস্যা থেকেই যাবে।’
ক্রেতাদের অসন্তোষ ও নিম্ন আয়ের মানুষের ক্ষোভ : দাম বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। মাছ-মাংসের দাম আগেই নাগালের বাইরে চলে গেছে, এখন ডিমও তাদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। রামপুরার এক ক্রেতা তাসনিম হাসান বলেন, ‘গত সপ্তাহে ১৫৫ টাকায় ডিম কিনেছি, সরকার দাম নির্ধারণ করলো, কিন্তু এখন তো আরো বেশি ১৬৫ টাকায় কিনতে হচ্ছে।’ আরেক একজন গৃহকর্মী, জানান, ‘বড়রা ভাত-ডাল খেয়ে দিন চালিয়ে নিতে পারি, কিন্তু বাচ্চাদের ভালো খাবার দিতে না পারলে মন খারাপ হয়। এখন ডিমের দাম এত বেশি যে সেটাও দিতে পারছি না।’
দাম নির্ধারণের পরেও কেন বাড়ছে পণ্যের মূল্য? : বাজার বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বাজার যাচাই না করে দাম নির্ধারণ এবং মনিটরিং না থাকার কারণে পণ্যের দাম বাড়ছে। কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ‘দাম নির্ধারণ করার পরও বাজারে তার কোনো প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। করপোরেট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বসে দাম নির্ধারণ করা হলেও তা কার্যকর করার মতো কোনো ব্যবস্থা নেই, বাজারে কোনো মনিটরিং নেই।’
আমদানির প্রভাবও পড়ছে না বাজারে : ডিমের দাম কমাতে সরকার এরই মধ্যে ভারত থেকে ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছে। ভারত থেকে ডিম প্রতি ৭ টাকা দরে আমদানি হলেও তা এখনো বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানান পাইকারি ব্যবসায়ীরা। এর ফলে আমদানির কোনো প্রভাব এখনো বাজারে দেখা যাচ্ছে না।
পেঁয়াজ ও আলুর দাম চড়া : ডিম ও মুরগির পাশাপাশি পেঁয়াজ ও আলুর দামও বাড়তি রয়েছে। যদিও সরকার পেঁয়াজ ও আলু আমদানিতে শুল্ক কমিয়েছে, তবুও বাজারে এর কোনো প্রভাব পড়েনি। প্রতি কেজি পেঁয়াজ এখনো ১১৫-১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, আর আলু বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি দরে। কারওয়ান বাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী বলেন, ‘বাজারে এখনো ভারতীয় পেঁয়াজ আসেনি। দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে সব জায়গায়। ভারতীয় পেঁয়াজ ঢুকলে দাম কিছুটা কমতে পারে।’
ভবিষ্যতের প্রত্যাশা : ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, শীতের সবজি বাজারে আসার পরেই সবজির দাম কিছুটা কমবে। তবে ডিম, মুরগি এবং অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য কমাতে বাজার মনিটরিং এবং কার্যকর পদক্ষেপের প্রয়োজন। সরকারি নির্ধারিত দাম কার্যকর করতে বাজার পর্যবেক্ষণ এবং সাধারণ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে সঠিক পদক্ষেপ নেয়া জরুরি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।