বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে চলমান বিভিন্ন প্রকল্পের অব্যবহৃত তহবিলকে সরকারের অগ্রাধিকারভিত্তিক খাতে পুনর্বিন্যাস করার অনুমোদন দিয়েছে। একইসঙ্গে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সংস্থাটি বাংলাদেশকে ২ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দেবে, যার মধ্যে একটি বড় অংশ বাজেট সহায়তা এবং বাকিটা প্রকল্প ঋণ হিসেবে প্রদান করা হবে। মার্টিন রেইজার বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশকে চলতি অর্থবছরে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার বা তার চেয়েও বেশি সহায়তা দেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে। এর মধ্যে কিছু অর্থ বাজেট সহায়তা হিসেবে সরাসরি অর্থনৈতিক কাঠামোকে শক্তিশালী করতে ব্যবহার করা হবে। এছাড়া বাকিটা স্বাস্থ্য, জ্বালানি এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খাতের প্রকল্পে ব্যয় করা হবে। রেইজার জানান, বাংলাদেশ সরকারের চাহিদার ওপর ভিত্তি করে আরো প্রকল্পেও এই অর্থায়ন বাড়ানো হতে পারে। বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট আরো উল্লেখ করেন, বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য বিশ্বব্যাংকের অনুমোদিত ৯ বিলিয়ন ডলারের ঋণ পাইপলাইনে রয়েছে। এই তহবিল থেকে সরকারের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কিছু অংশ পুনর্বিন্যাস করে অন্যান্য খাতে ব্যবহার করা যেতে পারে। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে কাঠামোগত সংস্কার, ব্যাংকিং খাতের উন্নয়ন এবং দুর্নীতিবিরোধী পদক্ষেপে সহায়তা করবে। অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বৈঠক সম্পর্কে বলেন, বাজেট সহায়তা, স্বাস্থ্য, জ্বালানি, খাদ্য নিরাপত্তা এবং সার আমদানি ইত্যাদি বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তিনি আরো জানান, রোহিঙ্গা সংকট এবং বন্যা-পরবর্তী পুনর্বাসনের ক্ষেত্রেও বিশ্বব্যাংক সহায়তা দেবে। বৈঠকে অর্থনৈতিক সংস্কারের প্রতি বিশ্বব্যাংকের আস্থা প্রকাশিত হয়েছে, যা ভবিষ্যতে বাংলাদেশের উন্নয়নে সহায়ক হবে। বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিস থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বিশ্বব্যাংকের প্রস্তাবিত ২ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার সহায়তা অর্থনীতির গতি বাড়ানো, বন্যার ক্ষতি মোকাবিলা, সরকারি ও আর্থিক খাতের কাঠামোগত সংস্কার, পরিচ্ছন্ন জ্বালানি খাতের উন্নয়ন, উন্নত সেবা প্রদান এবং জলবায়ুর প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশকে সহায়তা করবে। এই সহায়তার মাধ্যমে বাংলাদেশ তার দীর্ঘদিনের সংস্কারমূলক উদ্যোগগুলো বাস্তবায়নের সুযোগ পাবে, যা ইতোমধ্যে অনেক দিন ধরে করা হয়নি। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বৈঠকে বিশ্বব্যাংকের সহায়তাকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এবং নতুন করে শুরু করার জন্য জনগণের কাছ থেকে ব্যাপক সমর্থন পেয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন যে, এখনই সংস্কার কার্যক্রম শুরু করার সঠিক সময়। তিনি আরো বলেন, শ্রম খাতের সংস্কারের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জন করা সম্ভব হবে এবং এতে পোশাক শিল্প ছাড়াও অন্যান্য রপ্তানি খাতের উন্নয়নের সুযোগ তৈরি হবে। ড. ইউনূস আরো বলেন, সরকার শ্রম আইন সংস্কার এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) কনভেনশন বাস্তবায়নের ওপর জোর দিচ্ছে, যা বাংলাদেশের ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতাকে বৈশ্বিক মানে উন্নীত করতে সাহায্য করবে। এর ফলে রপ্তানি খাতের বৈচিত্র্য আনা সম্ভব হবে এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জিত হবে। বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের উন্নয়ন সহযোগী এবং এই সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করতে চায় বলে মন্তব্য করেন মার্টিন রেইজার। রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রেইজার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ সরকারের অন্যান্য উপদেষ্টাদের সঙ্গে বৈঠক যেখানে ব্যাংক খাতের সংস্কার এবং অন্যান্য আর্থিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।