ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

পুনর্গঠন উদ্যোগেই পুঁজিবাজারে যত গোলমাল

পুনর্গঠন উদ্যোগেই পুঁজিবাজারে যত গোলমাল

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম কিছুদিন পুঁজিবাজারের আচরণ ছিল বেশ স্বস্তিদায়ক। পটপরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে তখন বিশ্লেষকরাও দেখছিলেন স্থিতিশীলতার আভাস। তবে দেড় মাসের এ নতুন যাত্রায় সেই আচরণ ও স্থিতিশীলতা স্থায়ী রূপ পায়নি। ষষ্ঠ সপ্তাহের মধ্যে পাঁচ সপ্তাহে দাম কমেছে লেনদেনে থাকা বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের। সূচক বাড়া-কমার ক্ষেত্রেও আছে অস্থিতিশীলতা।

অন্তর্বর্তীকালীন দায়িত্বপ্রাপ্তদের পুঁজিবাজার উন্নয়নে পুনর্গঠন উদ্যোগ এবং সংস্কারপ্রক্রিয়ায় গোলমালকেই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে ব্যর্থতার বড় কারণ হিসেবে দায়ী করেছেন পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা। এর জন্য তারা দূষছেন দায়িত্বশীল আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের (এফআইডি) সময় অনুপযোগী সিদ্ধান্ত এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির নতুন কমিশনের বিতর্কিত উদ্যোগকে।

এফআইডি থেকে যে কমিশন গঠন করে দেয়া হয়েছে, এখনো তার সদস্য নিয়োগে চলছে চরম বিতর্ক। সাবেক ব্যাংকার খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন কমিশনও এড়াতে পারছে না বিতর্ক। দায়িত্ব পাওয়ার পর এই কমিশন পুঁজিবাজারে বিগত সময়ের অনিয়ম অনুসন্ধানে দুটি কমিটি গঠন করেছে। এছাড়া ডিএসই ও সিএসই বোর্ড পুনর্গঠনও করেছে। কিন্তু এর প্রতিটি উদ্যোগেই নানাভাবে জড়িয়ে গেছে পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্টদের আপত্তি। আইসিবিতে নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ দেয়া হয়েছে, কিন্তু বাজার উন্নয়নে এখনো নতুন বিনিয়োগ পুঁজিবাজারে গড়ায়নি; যা পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা নষ্টের ইঙ্গিত দেয়। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অস্বস্তি তৈরি করে।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আল-আমিন বলেন, ‘পুঁজিবাজার সংবেদনশীল জায়গা। সে হিসেবে যে ধরনের পদক্ষেপ নেয়া দরকার, তা আমরা দেখতে পাচ্ছি না। প্রতিদিন দেখছি তদন্ত কমিটি হচ্ছে। মনে হচ্ছে যেন ওনার কাজই তদন্ত করা। বাজারে মানুষের আস্থা ফিরছে কি না, সেই জায়গাটাও খেয়াল রাখা জরুরি। এখন যেটা হচ্ছে, তা অস্থিরতাকে আরো উসকে দিচ্ছে।’ বিনিয়োগকারী সানী মাহমুদের মতে, বিএসইসিতে কমিশনার দিতে দেরি করল। এরপর ডিএসইতে তিন দফায় পরিচালক নিয়োগ দিল। এখন আবার কমিশনার একজন নেই। তদন্ত কমিটির সদস্যদের অনেকে অতীতে পুঁজিবাজারে অনিয়ম করা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। এই অবস্থায় আস্থা থাকে কীভাবে? বাজারে এর প্রভাব স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। শিবলী রুবাইয়াত এবং অপর দুই কমিশনারের পদত্যাগের পর গত ১৩ আগস্ট অর্থনীতিবিদ ড. মাসরুর রিয়াজকে চেয়ারম্যান নিয়োগ দেয় সরকার।

কিন্তু পরদিনই বিএসইসির একটি অংশ সালমান এফ রহমানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ এনে নিয়োগ বাতিলের দাবি তোলে। পরে মাশরুর রিয়াজ দায়িত্ব গ্রহণে অপারগতা প্রকাশ করেন। ঘোলাটে পরিস্থিতিতে ১৮ আগস্ট চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পান সাবেক ব্যাংকার খন্দকার রাশেদ মাকসুদ। ১ সেপ্টেম্বর পুঁজিবাজারের অনিয়ম-দুর্নীতি অনুসন্ধানে ৫ সদস্যের কমিটির ঘোষণা দেয় বিএসইসি। কিন্তু কমিটির চেয়ারম্যান ড. জিয়াউদ্দিন আহমেদ এবং সদস্য ইয়াওয়ার সাঈদের অতীতে পুঁজিবাজারে সংশ্লিষ্টতা থাকায় স্বার্থের সংঘাত (কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট) দেখা দিতে পারে, এমন সংশয় সামনে আসে। এদিকে ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন নিয়ে নাটকীয়তা শেষ হচ্ছে না।

১ সেপ্টেম্বর ডিএসইর শেয়ারহোল্ডার পরিচালকদের সুপারিশ গ্রাহ্য না করে সাতজনকে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেয় বিএসইসি। এতে নিয়োগপ্রক্রিয়া নিয়ে বিতর্ক তোলে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন। আর তিন পরিচালকের ক্ষেত্রে আইনের ব্যত্যয় হওয়ার দাবি তোলেন বিশ্লেষকেরাও। এমন পরিস্থিতিতে দুজন পর্ষদে যোগদানে অপারগতা প্রকাশ করেন। দুই সপ্তাহের বেশি ঝুলে থাকার পর ১৮ সেপ্টেম্বর ডিএসইতে দুজন এবং সিএসইতে সাতজন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেয় বিএসইসি। কিন্তু পরদিনই দুজন পরিচালক যোগদানে অস্বীকৃতি জানান। এতে একদিন পরেই আরো দুই পরিচালক নিয়োগ দেয় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত